ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ৫১টি দল
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ৫১টি দলের ২০৯০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সারা দেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৭৮ জন। মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়। আজ রাত আটটার দিকে ইসি জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ২ হাজার ৫৬৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে একটি সংগঠনের ব্যানারে একজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তাঁর মনোনয়নপত্রটি বাতিল হতে পারে।
এর আগে গতকাল রাতে ইসি ২ হাজার ৫৮২টি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তথ্য দিয়েছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় তথ্যের গরমিল সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে ইসি।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আগামী ২০ জানুয়ারি। এরপর নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা এবং কতটি দল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকছে, তা জানা যাবে। ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি।
কোনো রাজনৈতিক দলকে দলীয় প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হয়। বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৬০টি। এর মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। দলটি এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এর বাইরে নিবন্ধিত আটটি দল নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেয়নি।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে মোট ৩৩১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কোনো কোনো আসনে দলটির বিকল্প হিসেবে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ৩০০ আসনের মধ্যে মোট কতটি আসনে দলটি প্রার্থী দিয়েছে, তা জানানো হয়নি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জামায়াতে ইসলামীর ২৭৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টির (জাপা) ২২৪ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৬৮ জন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ৪৪ জন, সিপিবির ৬৫ জন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ৪১ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ৯৪ জন, খেলাফত মজলিসের ৬৮ জন, গণ অধিকার পরিষদের ১০৪ জন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির ৫৩ জন, গণফোরামের ২৩ জন, গণসংহতি আন্দোলনের ১৮ জন, নাগরিক ঐক্যের ১১ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
১৪–দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, তারা এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাসদের সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাংলাদেশ জাসদের ৯ জন ও জেএসডির ৩১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু কারাগারে আর সাধারণ সম্পাদক ৫ আগস্টের পর থেকে দলীয় কার্যক্রমে অনুপস্থিত। জাসদ নির্বাচনে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি। জাসদ আগামী নির্বাচন বর্জন করছে।
নিবন্ধিত অন্য দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশ সম–অধিকার পার্টি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন একজন করে।
ইসিতে নিবন্ধিত যেসব দলের কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি, সেগুলো হলো বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরিকত ফেডারেশন, তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আন্দোলন (বিএনএম)।
বিরোধী শিবিরের বর্জনে সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ছিল বিতর্কিত। ‘আমি–ডামির’ নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই নির্বাচনে ২৮টি দল অংশ নিয়েছিল। তখন ইসিতে নিবন্ধিত দল ছিল ৪৪টি।
এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের সব কটি অংশ নিয়েছিল। তবে সে নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ভোটের আগের রাতে সারা দেশে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখার অভিযোগ ছিল। ওই নির্বাচন রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘রাতের ভোট’ হিসেবে পরিচিতি পায়।