আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বাদ জুমা বড় জমায়েতের ঘোষণা

যমুনার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে বাদ জুমা বড় জমায়েতের ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহছবি: তানভীর আহাম্মেদ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার বাদ জুমা বড় জমায়েত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিক্ষোভ কর্মসূচিও চলবে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে থেকে সরে গিয়ে জমায়েত মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার পাশে ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পাশের ফোয়ারার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, মঞ্চের সামনেই তাঁরা জুমার নামাজ আদায় করবেন। মঞ্চ থেকে এর মধ্যে আজান দেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পশ্চিম পাশে ফোয়ারার সামনে এ জমায়েত হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এতে দল–মতনির্বিশেষে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

হাসনাত বলেছেন, ‘ফোয়ারার সামনে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে বাদ জুমা জনসমুদ্র হবে। আজকে তাঁরা বুঝতে পারবেন কারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে যমুনার সামনে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। সকাল আটটার পরে যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিবন্ধন বাতিল করে নিষিদ্ধ করা হয় এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় সুস্পষ্ট রোডম্যাপ আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই রাজপথ ছাড়ব না।’

যমুনার পশ্চিম পাশে ফোয়ারার সামনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব রাজনৈতিক দল, ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি, গত দেড় দশক ধরে নির্যাতিতরা , বিডিআর পরিবার, হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবার, গুম খুনের শিকার পরিবার- সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমবেত হতে আহ্বান জানান হাসনাত। তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের জনগণকে বলব আপনারা নেমে আসুন। আপনারা জনতার কাতারে যেভাবে ৫ আগস্ট নেমে এসেছিলেন, যেভাবে জুলাইয়ে নেমে এসেছিলেন ঠিক সেভাবে নেমে আসুন।’

এ সময় হাসনাত বলেন, ‘ফোয়ারার সামনে থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের যে রাস্তা রয়েছে, যেই রাস্তা বাংলামোটর পর্যন্ত গিয়েছে, পুরো রাস্তা আজকে জনসমুদ্রে পরিণত করব।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, অতীতের মতো সন্ত্রাসী কায়দায় আওয়ামী লীগ বিভিন্ন জায়গায় চোরাগোপ্তা হামলা করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে চাই, আর কোনো টালবাহানা চলবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘জুমার পর ছাত্রজনতা ফোয়ারার সামনে অবস্থান নেবে। ফয়সালা করেই আমরা ঘরে ফিরব। কারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় আর কারা চায় না তা আজ ফয়সালা হবে।’ বাদ জুমা সব নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জুমা পর্যন্ত যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলেও জানান নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে গতকাল রাত থেকে বিক্ষোভ চলছে। সকাল আটটার পরে তোলা ছবি
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কয়েক শ নেতা-কর্মী সেখানে বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা কিছুক্ষণ পরপর স্লোগান দিচ্ছেন।

সকাল আটটার দিকে যমুনার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে কয়েক শ নেতা-কর্মী এ বিক্ষোভে অংশ নেন।

কখনো টানা, আবার কখনো কিছুটা বিরতি দিয়ে যমুনার সামনে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। সেখানে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। আমরা সরকারের বাইরে ও ভেতরে সেই দাবি বলেছি। কিন্তু আজকে ৯ মাস পরেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের জন্য আমাদের আবার রাজপথে নামতে হয়েছে।’

এনসিপির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। রাত একটার পর হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু নেতা-কর্মী যমুনার সামনে যান। রাত দেড়টার দিকে এবি পার্টির কিছু নেতা-কর্মী যমুনার সামনে উপস্থিত হন। রাত দুইটার দিকে সেখানে যান ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন