বুয়েটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ছাত্রদল-শিবিরের বিরুদ্ধে স্লোগান ছাত্রলীগের

বুয়েট শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেন ছাত্রলীগের একদল কেন্দ্রীয় নেতা। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় শোক দিবসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছেন ছাত্রলীগের একদল কেন্দ্রীয় নেতা। এরপর সেখানে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। গত শনিবার সেখানে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ব্যানারে ‘আলোচনা ও দোয়া’ অনুষ্ঠান করায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। গতকাল রোববার এক মানববন্ধনে ওই বিক্ষোভকারীদের ‘জামায়াত-শিবির কর্মী’ আখ্যায়িত করেছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান।

বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রলীগের ফুল দেওয়া ও স্লোগানকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন। একে ‘বহিরাগতদের সরব উপস্থিতি’ উল্লেখ করে তাঁরা বলছেন, এ ঘটনায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। গত শনিবার বুয়েট ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েট-এর সাবেক নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে জাতীয় শোক দিবসের এক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাঁদের তোপের মুখে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা চলে যেতে বাধ্য হন।

এ ঘটনার পরদিন গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রলীগের একটি মানববন্ধন হয়। সেখানে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খানের বক্তব্যজুড়ে ছিল বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়টি। বুয়েটের ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে না। আমি মনে করি, জামায়াত-শিবিরের কুচক্রী মহল যারা বাংলাদেশকে কখনো মেনে নেয়নি, তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জাতির পিতাকে নিয়ে যারা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাবে, তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’

ছাত্রলীগের মানববন্ধনের কিছুক্ষণ পর বুয়েটের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে বলা হয়, বুয়েটের সব সাধারণ শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত। তাঁদের বিক্ষোভ জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচির বিরুদ্ধে ছিল না। বিক্ষোভটি করা হয়েছিল বুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাবদিহি আদায়ের জন্য। সোমবার (আজ) বিকেল পাঁচটায় বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে একটি স্মরণসভা হবে। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, আজ ক্যাম্পাসে শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ বেলা একটার দিকে বুয়েটের শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামি উস সানি (কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক), কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাজহার শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ, কর্মসংস্থান সম্পাদক রনি মোহাম্মদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক মো. নাহিদ হাসান, নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ, ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক সৈয়দ শরিফুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখার নেতা আবদুর রহিমসহ সংগঠনের একদল নেতা।

ফুল দেওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতারা ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, নেতা মোদের শেখ মুজিব’, ‘অ্যাকশন-অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন, ‘জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ছাত্রদলের গুন্ডারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘শিবিরের চামড়া, তুলে নেব আমরা’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা চলে যাওয়ার পর বুয়েটের শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল সাবেক নেতা। এই নেতাদের অধিকাংশই শনিবার বুয়েট মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ফুল দেওয়া ও স্লোগানের বিষয়ে বুয়েটের শনিবারের বিক্ষোভে থাকা এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুয়েট ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা ও গবেষণার জায়গা, কোনো রাজনৈতিক দলের খোঁয়াড় নয়। জাতীয় শোক দিবসের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমরা এখনই কোনো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি না। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। আশা করি, বুয়েট কর্তৃপক্ষ এ ধরনের নীতিমালাবহির্ভূত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

আরও পড়ুন