প্রবীণদের মর্যাদা, সুযোগ ও অধিকার

রিয়াজুল জান্নাত, মসজিদে নববি

সালাম যে কাউকে দেওয়া যায়। তবে প্রবীণদের সালাম দেওয়া উত্তম। রাসুল (সা.) নিজে বলেছেন, ‘ছোটরা বড়দের, চলমান ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং কমসংখ্যক বেশিসংখ্যককে সালাম দেবে।’ (বুখারি)

প্রবীণদের ক্ষেত্রে নামাজ পড়ায় শিথিলতা রয়েছে। দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে সক্ষম না হলে প্রবীণদের জন্য সুবিধাজনকভাবে ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ রয়েছে। হাদিসে আছে, হজরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) বলেন, ‘আমি অর্শ রোগে ভুগছিলাম। এ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে নামাজ আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করো। যদি অক্ষম হও তবে বসে পড়। যদি তাতেও অক্ষম হও তাহলে শুয়ে শুয়ে পড়।’ (বুখারি)

রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবীণদের সম্মানে নামাজ সংক্ষিপ্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবু মাসউদ (রা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আল্লাহর কসম! আমি অমুকের কারণে ফজরের নামাজে অনুপস্থিত থাকি। তিনি নামাজকে খুব দীর্ঘ করেন। আবু মাসউদ (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)–কে উপদেশ দিতে গিয়ে সেদিনের মতো কখনো এত বেশি রাগ হতে দেখিনি। এরপর তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে বিতাড়নকারী মানুষ আছে। তোমাদের মধ্যে যে নামাজে ইমামতি করবে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা তাদের মধ্যে দুর্বল, প্রবীণ-বয়োবৃদ্ধ ও বিপদগ্রস্ত লোকও থাকে।’ (বুখারি)

আরও পড়ুন

রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবীণদের নামাজের ইমামতিতেও অগ্রাধিকার দিয়েছেন। হজরত আবু মাসউদ (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করে বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বললেন, আল্লাহর কিতাব কোরআনে জ্ঞান যার সবচেয়ে বেশি এবং যে কোরআন তিলাওয়াত সুন্দরভাবে করতে পারে, সে-ই নামাজের জামাতে ইমামতি করবে। সুন্দর কিরাতের ব্যাপারে সবাই যদি সমান হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে হিজরতে অগ্রগামী সে ইমামতি করবে। হিজরতের ব্যাপারেও সবাই যদি সমান হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে বয়সে প্রবীণ, সে-ই ইমামতি করবে।’ (মুসলিম)

রোজা রাখার ক্ষেত্রে ইসলাম প্রবীণদের বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়েছে। প্রবীণ ব্যক্তি রোজা পালনে অক্ষম হলে প্রতিদিনের রোজার বিনিময়ে একজন করে মিসকিনকে খাওয়াতে পারেন। হাদিসে আছে, হজরত আতা (রা.) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা.)–কে বলতে শুনেছি যে আর যাদের জন্য এটি (রোজা পালনে) খুব কষ্টকর হবে, তারা যেন এর পরিবর্তে একজন করে অভাবীকে খাদ্য দেয়। হাদিসটি ব্যাখ্যা করে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রোজা পালনে অক্ষম বৃদ্ধ-বৃদ্ধার প্রতিদিনের (প্রতিটি রোজার) পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানোর বিধান–সংবলিত এ আয়াতটি রহিত হয়নি। (বুখারি)

আরও পড়ুন

ফরজ হজ পালনে অক্ষম প্রবীণ ব্যক্তির হজের হুকুম আদায় করতেও বিশেষ সুযোগ দিয়েছে ইসলাম। তাই অক্ষম প্রবীণ ব্যক্তির পক্ষ থেকে সক্ষম ব্যক্তির মাধ্যমে (বদলি) হজ করানো ইসলামে বৈধ। প্রবীণদের প্রতি দয়া দেখানোর বিষয়টি উঠে এসেছে নামাজ, রোজা ও হজের মতো ইবাদতেও।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘বিদায় হজের বছর খাসআম গোত্রের এক নারী এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর যে হজ ফরজ হয়েছে তা আমার বৃদ্ধ বাবার ওপর এমন সময় ফরজ হয়েছে; যখন তিনি সওয়ারির ওপর ঠিকভাবে বসে থাকতে পারেন না। আমি তার পক্ষ থেকে হজ করলে তার হজ আদায় হবে কি? তিনি বলেন, হবে।’ (বুখারি)

কথা বলতে দেওয়ার ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) বড়দের অগ্রাধিকার দিতেন। একবার হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সাহল ও মুহাইয়াসা খাদ্যের অভাবে খায়বারে আসেন। ঘটনাক্রমে আবদুল্লাহ নিহত হলে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে ঘটনাটি বলার জন্য মুহাইয়াসা এগিয়ে আসেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন মুহাইয়াসাকে বলেন, ‘বড়কে কথা বলতে দাও।’ (বুখারি)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর নৈকট্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রবীণদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলতেন, ‘তোমাদের মধ্যে যাঁরা প্রবীণ ও জ্ঞানী, তাঁরা যেন আমার কাছাকাছি দাঁড়ায়। তারপর পর্যায়ক্রমে দাঁড়াবে যারা তাদের কাছাকাছি, তারপর দাঁড়াবে যারা তাদের কাছাকাছি তারা।’ (মুসলিম)

আরও পড়ুন

প্রবীণদের করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো, খাঁটি তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন; যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, নবী ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে, তাদের সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয়ই আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান। (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৮)

প্রবীণদের জন্য এই দোয়াটি বেশি বেশি করা যায়, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ঝুবনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজুবিকা মিন আরজালিল উমুরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া ওয়া আজাবিল কবরি।’

এর অর্থ. ‘হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই, তোমার কাছে কৃপণতা থেকে আশ্রয় চাই, তোমার কাছে অতিবার্ধক্যে পৌঁছার বয়স থেকে আশ্রয় চাই এবং তোমার কাছে দুনিয়ার ঝগড়াবিবাদ ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি)

হজরত ইব্রাহিম (আ.) বৃদ্ধ বয়সেও যেভাবে তাঁর ছেলে ইসমাইল (আ.) খোঁজখবর নিয়েছিলেন, মুসলিম উম্মাহর সবার কর্তব্য হলো সেভাবেই যথাসম্ভব তাদের খবর নেওয়া ও তাঁদের জন্য দোয়া করা।

আরও পড়ুন