‘আল্লাহু আকবার’: মুমিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ

Nikita Buida

‘আল্লাহু আকবার’, এই শব্দের উচ্চারণ মুসলমানের হৃদয়ে আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে। এটি শুধু একটি শব্দ নয়, বলা যায় ইসলামি জীবনধারার একটি মূলমন্ত্র, যা ইমান, ইবাদত ও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রকাশ করে।

‘আল্লাহু আকবার’–এর অর্থ ও তাৎপর্য

‘আল্লাহু আকবার’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো ‘আল্লাহ মহান’ বা ‘আল্লাহ সবচেয়ে বড়’। এই বাক্য তাকবির নামে পরিচিত এবং ইসলামে এটি আল্লাহর সর্বোচ্চ ক্ষমতা, মহিমা ও সার্বভৌমত্বের ঘোষণা। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহর জন্যই হলো সর্বোচ্চ মহিমা।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ১১১)।

আরও পড়ুন

নামাজে ‘আল্লাহু আকবার’–এর ভূমিকা

‘আল্লাহু আকবার’ নামাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নামাজের শুরুতে তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু) থেকে শুরু করে রুকু, সিজদাহ ও বিভিন্ন অবস্থানে তাকবির উচ্চারণ করা হয়। এটি মুমিনকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আল্লাহ সবকিছুর ঊর্ধ্বে এবং নামাজে তাঁর পূর্ণ মনোযোগ আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ হওয়া উচিত।

একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজের চাবি হলো পবিত্রতা, এর প্রবেশদ্বার হলো তাকবির এবং এর সমাপ্তি হলো সালাম।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৬১)।

বোঝা যায়, তাকবির নামাজের প্রবেশসূত্র ও এটি ইবাদতের মূল ভিত্তি। তাকবিরে তাহরিমা উচ্চারণের মাধ্যমে মুমিন দুনিয়ার সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়ান।

ইবাদত ও দৈনন্দিন জীবনে ‘আল্লাহু আকবার’

‘আল্লাহু আকবার’ শুধু নামাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি ইসলামি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

  • আজান ও ইকামত: আজান ও ইকামতে ‘আল্লাহু আকবার’ বারবার উচ্চারিত হয়, যা মুসলমানদের নামাজের জন্য আহ্বান করে এবং আল্লাহর মহত্ত্ব প্রকাশ করে।

  • কোরবানি ও হজ: হজের সময় তালবিয়ার সঙ্গে ও কোরবানির সময় পশু জবাই করার আগে ‘আল্লাহু আকবার’ উচ্চারণ করা হয়। এটি আল্লাহর জন্য ত্যাগ ও আনুগত্যের প্রতীক।

আরও পড়ুন
  • যুদ্ধক্ষেত্রে: ইসলামের প্রথম যুগে সাহাবিরা যুদ্ধক্ষেত্রে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে সাহস ও ইমান প্রকাশ করতেন। এটি তাঁদের মনে আল্লাহর ওপর ভরসা জাগিয়ে তুলত।

  • ঈদের আনন্দে: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় তাকবির পাঠ ইবাদত ও আনন্দের সমন্বয় ঘটায়। হাদিসে আছে, ‘ঈদের দিনগুলোতে তাকবির পাঠ করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৭১)।

‘আল্লাহু আকবার’ দৈনন্দিন জীবনেও ব্যবহৃত হয়। যেমন কোনো সাফল্য অর্জনের পর বা কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরার জন্য এ জিকির মুমিনের মনে শান্তি আনে। শাইখ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেছেন, ‘তাকবির মুমিনের হৃদয়কে আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ করে এবং তাঁকে দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত রাখে।’ (ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব, পৃষ্ঠা: ২৩৪, দারুল ইফতা প্রকাশনী, ১৯৯৮)।

দুর্ভাগ্যবশত, আধুনিক বিশ্বে কিছু ক্ষেত্রে ‘আল্লাহু আকবার’ শব্দটি ভুলভাবে সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যা এর পবিত্রতা ও তাৎপর্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। মুহাম্মদ ইবনে সালিহ বলেন, ‘তাকবির হলো আল্লাহর মহত্ত্বের ঘোষণা, যা মুমিনের জীবনে শান্তি ও পবিত্রতা নিয়ে আসে।’ (আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)।

আরও পড়ুন