কোরআনের কাব্যিক ইংরেজি অনুবাদ

জেরুজালেমে জন্মগ্রহণকারী তারিফ খালিদি একজন আরবি ভাষা, ইসলাম ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ। ৮৬ বছর বয়সী এই পণ্ডিত এখন লেবাননে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতের শেখ জায়েদ চেয়ার ইন অ্যারাবিক ও ইসলামিক স্টাডিজের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর হাত দিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফের একটি নতুন ইংরেজি তরজমা প্রস্তুত হয়েছে। প্রকাশ করেছে বিখ্যাত পেঙ্গুইন প্রকাশনা সংস্থা।

কোরআনের ইংরেজি অনুবাদের ইতিহাস প্রায় ৩০০ বছরের। এর মধ্যে জর্জ সেলের অনূদিত দ্য কোরআন, কমনলি কলড দ্য আলকোরান অব মুহাম্মদ প্রকাশিত হয় আজ থেকে ২৯০ বছর আগে। এটিই প্রথম সরাসরি আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ, যা লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে যত ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে, তার বড় অংশই সেলের অনুবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে বলে খালিদি তাঁর অনূদিত কোরআনের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন।

আরও পড়ুন

আবার ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত এ জে আরবারির দ্য কোরআন ট্রান্সলেটেড মূল আরবি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে কাব্যিক বা ছন্দময়তা বজায় রাখার চেষ্টা করে। খালিদি বলেছেন যে এর মধ্যে দিয়ে কোরআনের ইংরেজি অনুবাদ একমাত্রিক গদ্য অনুবাদের ধারা থেকে বেড়িয়ে এসেছে। তাঁর নিজের অনুবাদেও একইভাবে গদ্যের প্রাধান্য না দিয়ে তিনি অনেকটাই কাব্যিক ঢঙের আশ্রয় নিয়েছেন।

খালিদি ভূমিকাতে আরও বলেছেন যে কোরআন এমন একটি ধর্মগ্রন্থ যা একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, অন্যদিকে তেমনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘এটি এমন একটি বিশ্বাসকে পাঠ করার আহ্বান জানায় যা দুনিয়া প্রথমবার সৃষ্টির পরই আবির্ভূত হয়েছে। এটি আল্লাহর সঙ্গে তাঁর বান্দার অশেষ কথোপকথনকে সুচিন্তিতভাবে পাঠ করায়, যেখানে তাঁকে মান্য করার, স্মরণ করার, চিন্তা করার, পর্যবেক্ষণ করার ও যুক্তিসংগতভাবে কল্পনা করার জন্য বান্দার সক্ষমতার ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ধাপে ধাপে ওহি আকারে বিভিন্ন আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার পরিপূর্ণ রূপ হলো কোরআন। এই ওহি নাজিলের বিষয়ে খালিদি ইবনে খালদুনের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। খালদুনের মতে, ‘নবী-রাসুলদের আত্মা মানবের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করে, আর তাই তা ফেরেশতাদের সঙ্গে কখনো কখনো মিশে যায়। আল্লাহ নবী-রাসুলদের আত্মাকে এমন একটা পর্যায়ে উত্তরণের অনুমোদন দিয়েছেন যেখানে গিয়ে তাঁরা ঐশ্বরিক বাণী গ্রহণ করতে পারেন এবং তা বিভিন্ন রূপে। সে কারণেই মুহাম্মদ (সা.) যখন ওহি নাজিলের সময় যন্ত্রণাক্লিষ্ট হতেন, তখন আসলে তাঁর আত্মা মানব রূপ ছেড়ে ফেরেশতা রূপ ধারণ করত। আর তাই কোরআন ওপর থেকে নিচে অবতীর্ণ হওয়ার এবং রাসুলের তা গ্রহণের জন্য উপরে ওঠার মাধ্যমে সৃষ্ট।’

এ অনুবাদের ভূমিকায় কোরআন সংকলনের ইতিহাস খুব সংক্ষেপে বর্ণনা করার পাশাপাশি কোরআনের ভাষা শৈলী ও গঠন কাঠামোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।

দ্য কোরআন; তারিফ খালিদি; পেঙ্গুইন ক্লাসিকস, লন্ডন, ইংল্যান্ড, ২০০৯

আরও পড়ুন