পৃথিবীতে এসে হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়ার (আ.) দেখা হয়েছিল মক্কার আরাফাতে জাবালে রহমতে। আমার স্ত্রীর একটা ইচ্ছা ছিল জাবালে রহমতে স্বামীসহ যাবে, ২০০৪ সালে আমরা হজ করতে যাই; তখন মক্কার জাবালে রহমতে পৌঁছে আমার স্ত্রী সেই কথাগুলো জানালে আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। বাবার মৃত্যুর পর ওইবার মাকে নিয়ে হজ করতে যাই। এরপর ২০১৬ সালেও হজ করেছি। দুই মেয়েসহ ওমরাহ করেছি। কিন্তু মক্কায় কাবা ঘর দেখতে বারবার মন চায়। মদিনার একটা জাদুঘরে দেখেছিলাম, রাসুল (সা.) ছোট একটি পাত্রে গোসল করতেন, সেই পাত্রটি দেখে আমার মনে হয়েছিল আমরা কত পানি অপচয় করি।
হজের সময় বিশেষ করে আরাফাতের দিন দোয়া করি আর মনে হয়, আল্লাহ কত মহান। সেই তুলনায় আমরা কিছুই নই। আরাফাতের দিনে একটা অন্য রকম অনুভূতি হয়। অকুফে আরাফা শেষ করে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে মাদুর পেতে ঘুমিয়েছি, এশার নামাজ পড়ে, এত শান্তির ঘুম জীবনে কম হয়েছে। মক্কার মসজিদুল হারামে তাওয়াফের সময় মনে হয় কাবা ঘরকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। বায়তুল্লাহর চারপাশে তাওয়াফ করছি, মাকামে ইব্রাহিমের কাছে নামাজ আদায়ে অন্য রকম অনুভূতি। তাওয়াফ করা আমার কাছে মনে হয় আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। ২০০৪ সালে জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে গিয়ে হঠাৎ দেখি স্ত্রী আমার থেকে দলছুট হয়ে যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমার এক আত্মীয় ফোন করে জানায় মিনার দুর্ঘটনার কথা। ওই বছর মিনার দুর্ঘটনায় অনেক লোক মারা গিয়েছিল। খুব চিন্তা হচ্ছিল। তার কিছুক্ষণ পরে স্ত্রী তাঁবুতে ফিরে এসেছে, সেকি আনন্দ। মিনা থেকে মক্কায় যাওয়ার পথে গাড়িতে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েন ভাষাগত কারণে, গাড়িচালকেরা ইংরেজি বোঝেন না। তারা দায়সারাভাবে কোনো কোনো জায়গায় যাত্রী নামিয়ে দেন। এ রকম একটি বিড়ম্বনা আমার হয়েছিল। হজের সফরে সবচেয়ে বেশি দরকার ধৈর্য।
নানা কারণে ছোটখাটো সমস্যা এসেই যায়, কিন্তু ধৈর্য ধারণ করলে আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। আরেকবার মক্কার তাওয়াফ শেষ করে মিনায় ফিরব তো গাড়িওয়ালা এমন জায়গায় নেমে নামিয়ে দিল, কোনো যানবাহন পাইনি। তাঁবুতে পৌঁছাতে মাকে নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছিল। পরে অনেক গভীর রাতে তাঁবুতে ফিরি। একটা কথা না বললেই নয় বাংলাদেশের মানুষ অতিথিপরায়ণ। সব সময় সাহায্য করেছে। যেমন মিনার তাঁবুতে আমাদের কোরবানির মাংস ও রুটি খাইয়েছিল।
বেশ কয়েকবার হজ ও ওমরাহ করার সুবাদে সৌদি আরব গিয়ে আমার মনে হয়েছে, সৌদি আরবে ইংরেজি বলার লোক কম। ভাষাগত কারণে, পথনির্দেশনা না জানার কারণে অনেকে হারিয়ে যান। নামাজ পড়তে গিয়ে অনেকেরই মসজিদ থেকে বাড়িতে ফিরতে সমস্যা হয়। মক্কার মসজিদুল হারামে কোন গেট খোলা আর কোন গেট যে বন্ধ, সেটা আগে থেকে জানা যায় না। ফলে এটা হজযাত্রীদের বিড়ম্বনা। তাই নতুন যাঁরা যাচ্ছেন তাঁরা এই সব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। মদিনার রিয়াজুল জান্নাতে যাওয়ার জন্য আজকাল অ্যাপে নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধন করে সময়মতো রিয়াজুল জান্নাতে যাওয়া যায়। সে বিষয়টিও জানা থাকলে ভালো।