মস্কোয় রমজান: ইফতারে ভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মিলন

মস্কোতে মুসলিমদের আয়োজিত গ্রুপ ইফতার টেবিল (আনাদোলু এজেন্সি)

তুষার বৃষ্টি আর শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে এ বছর মস্কোয় রমজান শুরু হয়েছে। নামাজির সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। রাজধানীতে মুসলিম সম্প্রদায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করছেন। রাশিয়ায় রমজানের বৈশিষ্ট্য হলো, ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং স্থানীয় মুসলিম সংস্কৃতি মেলবন্ধন দেখা যায়। মধ্য এশিয়া, আরব দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আসা মুসলিমদের উপস্থিতি এই অভিজ্ঞতাকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলে।

 ইসলাম রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মুসলমান। প্রায় দুই কোটি ষাট লাখ মুসলমান বাস করেন রাশিয়ায়। রাশিয়ার মুফতি কাউন্সিলের প্রধান রাভিল আইনুদ্দিন জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশে পৌঁছতে পারে। বেশির ভাগ মুসলিম বসবাস করেন উত্তর ককেশাস, তাতারস্তান এবং বাশকোর্তোস্তান অঞ্চলে, তবে মস্কো এবং অন্যান্য বড় শহরে মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশটিতে একটি নতুন ইসলামি বৈচিত্র্যের সন্ধান দিয়েছে এবং রমজান উদ্‌যাপনেও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মস্কো (আনাতোলিয়া) তারাবিহ নামাজ পড়তে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন

 মস্কোর ‘আল-মদিনা’ ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নাজার হাজরত মামিদোভ বলেন, রাশিয়ায় মুসলিমরা অভিবাসী নয়, বরং তারা মূল অধিবাসী, তাই তাদের ঐতিহ্যও এ-দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ। গত কয়েক বছরে মস্কোতে মুসলিমদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপস্থিতিও বেড়েছে এবং বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের আয়োজিত বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণও বেশ চোখে পড়ছে। তবে রাজধানীতে মাত্র চারটি মসজিদ হওয়ায় ক্রমবর্ধমান মুসলিমদের ধর্মীয় সুবিধা আরও প্রসারিত করা প্রয়োজন।

 বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে মুসলিমরা শুধু ইফতার বা নামাজ নয়, বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হচ্ছে, যা সমাজের মধ্যে একতা ও সহনশীলতার অনুভূতি বাড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন

ভিন্ন রীতিনীতি, মিলিত ইফতার

 এ-বছর বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন মস্কোয় ইসলামি সংস্কৃতি ও ধর্মীয় জ্ঞান সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন সেমিনার ও সভার আয়োজন করছে। স্থানীয় উজবেক জনগণের প্রতিনিধি ইলহাম মিনিমাতভ জানিয়েছেন, এবারের রমজানের পরিবেশের বিশেষত্ব হলো, সামাজিক কার্যক্রমের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া, বিশেষ করে রমজান ক্যাম্পিংয়ের আয়োজন নজর কেড়েছে। অনেকে পুরো পরিবারসহ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। পূর্বসূরি সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে থাকা বিভিন্ন মুসলিম জনগণের মধ্যে রমজান উদ্‌যাপনের রীতি ভিন্ন। তাই মিলিত ইফতার আয়োজন বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগের একটি সুযোগ হয়ে এসেছেন এবং ধর্ম ও শরিয়া বিষয়ক আলোচনাও ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।

আরও পড়ুন

‘বরকতময় থলি’

 এবার রমজানে মস্কোয় আরেকটা উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসা পেয়েছে, তা হলো, ‘বরকতময় থলি’। দরিদ্রদের সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং অভাবনীয় সাড়া পাওয়া যায়। মিনিমাতভ বলেন, এটা রমজানের একটি আধ্যাত্মিক ও মানবিক দিক। রমজান হলো, সেই সময় যখন দান, সদকা এবং দরিদ্রদের সহায়তা প্রদান সবচেয়ে বেশি কার্যকর সময়। ‘বরকতময় থলি’ নামে পরিচিত এই উদ্যোগ জনমানুষের মধ্যে শান্তি, সান্ত্বনা এবং মানসিক প্রশান্তি অর্জনের একটি উপায় হয়ে উঠেছে।

 শেষ কয়েক বছরে রমজান উপলক্ষে মস্কোর মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে গভীর আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষত সিয়াম বা রোজা সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রশ্নগুলো তারা জানতে চান এবং অনলাইন পোর্টাল ও যোগাযোগ মাধ্যমে এ-বিষয়ে নানা উদ্যোগ দেখা যায়।

 সূত্র: আল-জাজিরা

আরও পড়ুন