রাদ শব্দের অর্থ বজ্রধ্বনি। সুরা রাদ পবিত্র কোরআনের ১৩তম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরার আয়াতসংখ্যা ৪৩। রাদ বা বজ্রধ্বনি আল্লাহর প্রশংসা ঘোষণা করার কথা সুরায় উল্লেখ থাকায় সুরার নামকরণ করা হয়েছে রাদ নামে। এই সুরায় আল্লাহর একত্ববাদ, প্রেরিত পুরুষ, প্রেরণা ও কর্মফল, বৃষ্টি, বিদ্যুৎ ও বজ্র এবং সাবধানীদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে।
সুরার শুরু থেকে ১৮ নম্বর আয়াত পর্যন্ত আল্লাহ কর্তৃক আসমান-জমিন, চাঁদ-সূর্য, রাত-দিন, পাহাড়-পর্বত ও নদী-নালা, লতাগুল্ম, বৈচিত্র্যময় স্বাদ ও রঙের ফলমূলের সৃষ্টি, প্রকাশ্য-গোপন ও স্ত্রীর গর্ভে যা আছে, তার খবর আল্লাহ জানেন, বৃষ্টিবর্ষণ, মেঘমালা এবং আল্লাহর ডাকে বান্দার সাড়া দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ের বিবরণ রয়েছে।
সাবধানী ও দুর্ভাগাদের বৈশিষ্ট্য
বিবেকসম্পন্ন বা সাবধানীদের ৯টি গুণ এবং দুর্ভাগাদের তিনটি লক্ষণের উল্লেখ রয়েছে এই সুরায়।
সাবধানীরা: ১. আল্লাহর সঙ্গে করা অঙ্গীকার পূর্ণ করেন ২. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না ৩. আল্লাহর নির্দেশিত সম্পর্ক বজায় রাখেন ৪. আল্লাহকে ভয় করেন ৫. জবাবদিহি খারাপ হওয়াকে ভয় করেন ৬. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ধৈর্য ধারণ করেন ৭. নামাজ প্রতিষ্ঠা করেন ৮. আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করেন ৯. ভালো দিয়ে মন্দ দূর করেন। (সুরা রাদ, আয়াত: ২০ থেকে ২৪)
আর দুর্ভাগারা: ১. আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তারা ভঙ্গ করে। ২. আল্লাহ যে আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধন বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, তারা সেটা ছিন্ন করে। ৩. ভূপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
বলা হয়েছে, নবীরা অন্য মানুষদের মতো মানুষ। তাঁদেরও স্ত্রী-সন্তান হন। যে মুজিজা (অলৌকিক ক্ষমতা) তাঁদের থেকে প্রকাশ পায়, তা তাঁদের নিজস্ব কোনো কৃতিত্ব নয়; বরং আল্লাহর হুকুমেই তা প্রকাশ পায়।
অবিশ্বাসীদের পরিণতি
সুরার শেষ দিকে বলা হয়েছে, যদি কোরআন এমন হতো, যা দ্বারা পর্বতকে গতিশীল করা যেত অথবা জমিনকে বিদীর্ণ করা যেত অথবা মৃতের সঙ্গে কথা বলা যেত, তবু তারা তাতে বিশ্বাস করত না, তারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করত। (আয়াত: ৩১)
এরপর তাদের পরকালীন পরিণতি এবং জান্নাত ও জাহান্নামের নেয়ামত ও শাস্তির বর্ণনা রয়েছে। শেষে বলা হয়েছে, ‘আপনার বিরোধীরা কি দেখছে না ইসলামের প্রভাব আরব ভূখণ্ডের সর্বত্র দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে? চারদিক থেকে তার বেষ্টনী সংকীর্ণতর হয়ে আসছে?’ (আয়াত: ৪১) এখানে জমিন সংকুচিত করার আরেক অর্থ এটাও করা হয় যে জমিনের ফল-ফলারি কমিয়ে দেওয়া। আবার কোনো কোনো মুফাসসির এর অর্থ করেছেন, ভালো লোক ও আলেমদের প্রস্থান করা।