জুলুম নিয়ে ৪টি হাদিস

জুলুম বা অত্যাচার ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং মারাত্মক গুনাহ। রাসুল (সা.) জুলুমের বিরুদ্ধে বহু হাদিসে উৎসাহ দিয়েছেন এবং এর কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ জালিমদের হিদায়াত দেন না।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৮)

জুলুম নিয়ে হাদিস

জুলুম সংক্রান্ত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হলো:

১. জুলুম অন্ধকারে পরিণত হবে

আবু জার আল-গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন: জুলুম থেকে বেঁচে থাকো, কেননা জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকারে পরিণত হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৭৮)

তাৎপর্য: এই হাদিসে জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। কিয়ামতের দিন জালিম ব্যক্তি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে, যা তার দুনিয়ার জুলুমের শাস্তি হিসেবে প্রকাশ পাবে। এটি মুমিনদের জুলুম থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত করে।

২. জুলুমের শাস্তি দুনিয়াতেই

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন: জুলুম থেকে সাবধান! কেননা এর শাস্তি আখিরাতের আগে দুনিয়াতেই দেওয়া হয়। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪২২৪)

তাৎপর্য: এই হাদিস জুলুমের দ্রুত শাস্তির কথা উল্লেখ করে। জালিম ব্যক্তি দুনিয়াতেই অপমান, ক্ষতি বা দুঃখের মুখোমুখি হতে পারে, যা আখিরাতের শাস্তির পূর্বাভাস।

আরও পড়ুন

৩. আল্লাহ মজলুমের দোয়া কবুল করেন

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন: তিন ব্যক্তির দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না: রোজাদার যতক্ষণ না ইফতার করে, ন্যায়পরায়ণ শাসক এবং মজলুমের (জুলুমের শিকার ব্যক্তির) দোয়া। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৯৮)

তাৎপর্য: এই হাদিসে জুলুমের শিকার ব্যক্তির দোয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ মজলুমের দোয়া কবুল করেন, যা জালিমের জন্য শাস্তির কারণ হতে পারে।

৪. জুলুমের বিরুদ্ধে সাহায্য করা

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন: তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে জালিম হোক বা মজলুম। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! মজলুমকে সাহায্য করা বোধগম্য, কিন্তু জালিমকে কীভাবে সাহায্য করব?” তিনি বললেন, “তাকে জুলুম থেকে বিরত রাখো, এটিই তার প্রতি সাহায্য।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৪৪)

তাৎপর্য: এই হাদিস জুলুম প্রতিরোধের গুরুত্ব তুলে ধরে। জালিমকে জুলুম থেকে বিরত রাখা তার প্রতি সত্যিকারের সাহায্য।

আমাদের করণীয়

আধুনিক সময়ে জুলুম বিভিন্ন রূপে দেখা যায়, যেমন অর্থনৈতিক শোষণ, সামাজিক বৈষম্য, পারিবারিক অত্যাচার বা কর্মক্ষেত্রে অন্যায়। হাদিসের শিক্ষা প্রয়োগ করে জুলুম প্রতিরোধ করা যায়:

  • ব্যক্তিগত জীবনে: অন্যের হক নষ্ট না করা, যেমন ঋণ পরিশোধে বিলম্ব না করা বা গীবত থেকে বিরত থাকা।

  • সামাজিক সচেতনতা: জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা, যেমন নারী নির্যাতন বা শ্রমিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।

  • শিশুদের শিক্ষা: শিশুদের জুলুমের ক্ষতি ও ন্যায়ের গুরুত্ব শেখানো।

আরও পড়ুন
  • মজলুমের পাশে দাঁড়ানো: জুলুমের শিকার ব্যক্তিকে আইনি, অর্থনৈতিক বা মানসিক সহায়তা প্রদান।

  • ন্যায় প্রতিষ্ঠা: জুলুম প্রতিরোধে হাত, জিহ্বা বা মন দিয়ে বিরোধিতা করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যায় দেখে তা হাত দিয়ে, না পারলে জিহ্বা দিয়ে, না পারলে মনে প্রতিবাদ করে, সে মুমিন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯)

জুলুম ইসলামে হারাম এবং এটি আল্লাহর সঙ্গে শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।” (সুরা হজ, আয়াত : ৭১)

হাদিসে জুলুমের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে এবং মজলুমের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জুলুম প্রতিরোধ করা মুমিনের দায়িত্ব এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার অংশ।

আরও পড়ুন