একজন মুসলিমের জন্মদিন কীভাবে যাপন করা উচিত

জন্মদিনের মতো উপলক্ষ আত্মসমালোচনার সময়ও বটেছবি: এএফপি

জন্মদিন মানবজীবনের একটি আবেগপূর্ণ মুহূর্ত। কিন্তু একজন মুসলিমের জীবন কেবল আবেগনির্ভর নয়—তা পরিচালিত হয় কোরআন ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী। বর্তমান সমাজে জন্মদিন পালনের সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হলেও, এর ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গভীরভাবে ভাবা জরুরি।

ইসলামে জন্মদিন পালনের ধারণা

ইসলামে জন্মদিন পালনের কোনো নির্দিষ্ট বিধান বা দোয়া নেই। কোরআন ও হাদিসে রাসুল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম বা তাবেয়িনদের জীবনে জন্মদিন উদযাপনের কোনো নজির পাওয়া যায় না। ইসলাম এমন কাজকেই প্রাধান্য দেয় যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম এবং অহংকার বা অপচয়ের কারণ নয়।

ইসলাম এমন কাজকেই প্রাধান্য দেয় যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম এবং অহংকার বা অপচয়ের কারণ নয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুরূপ কাজ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)

অতএব, অমুসলিম সমাজ থেকে আগত এমন সংস্কৃতি গ্রহণ করা ইসলামি দৃষ্টিতে সমালোচিত, যদি তা ইসলামি চেতনার পরিপন্থী হয়।

আরও পড়ুন

জন্মদিনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক পন্থা

কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আর যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামত গণনা কর, কখনোই তা গণনা করতে পারবে না।” (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৪)

অতএব জন্মদিনে সময় বা অর্থের অপচয় না করে বরং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।” (সুরা ইসরা, আয়াত: ২৭)

যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুরূপ কাজ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১

একজন মুসলিম জন্মদিনে করতে পারেন:

  • দোয়া করা: আল্লাহ যেন আগামী বছরগুলো হালাল ও কল্যাণে ভরপুর রাখেন।

  • সাদকা বা দান করা: কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে গরিবদের সহায়তা করা।

  • রোজা রাখা: আল্লাহর রাসুল (সা.) রোজা রাখতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

  • ইবাদত: নামাজ ও কোরআন তিলাওয়াত বৃদ্ধি করা।

  • আত্মসমালোচনা করা: এক বছর অতিবাহিত হলো, কতটা ইবাদতে উন্নতি হলো?

রাসুল (সা.) বলেছেন, “দুই নিয়ামতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত: স্বাস্থ্য ও অবসর।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪১২)

অতএব জন্মদিনের মতো উপলক্ষ আত্মসমালোচনার সময়ও বটে—আমি আমার সময় ও দেহের নিয়ামতের কতটা কদর করেছি?

আরও পড়ুন

নবীজি তাঁর জন্মদিনে কী করতেন?

রাসুল (সা.) নিজ জন্মদিনে কোনো উৎসব পালন করেননি। তবে তিনি সোমবারে রোজা রাখতেন। যখন সাহাবিরা জানতে চাইলেন কেন তিনি সোমবারে রোজা রাখেন, তিনি বললেন, “এটি সেই দিন, যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন আমার প্রতি ওহি অবতীর্ণ হয়েছে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২)

জন্মদিনের মতো উপলক্ষ আত্মসমালোচনার সময়ও বটে—আমি আমার সময় ও দেহের নিয়ামতের কতটা কদর করেছি?

এ থেকে বোঝা যায়, রাসুল (সা.) তাঁর জন্মদিনকে উদযাপন করেননি, বরং কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিসেবে রোজা রেখেছেন।

ইসলামে জন্মদিন মানেই নিষিদ্ধ কিছু নয়, বরং তা উদযাপনের ধরনই মূল বিবেচ্য। যদি কেউ জন্মদিনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, সদকা ও আত্মসমালোচনার সুযোগ তৈরি করেন, তবে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু যদি তা অপচয়, অহংকার বা অমুসলিম সংস্কৃতির অনুকরণে পরিণত হয়, তবে তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

আরও পড়ুন