সম্পদের অহংকার ধ্বংস করে কারুনকে

কারুন ছিল হজরত মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায়ের লোক। আল্লাহ তাকে বিপুল ধনভান্ডার ও প্রাচুর্য দান করেছিলেন। সম্পদের মোহে কারুন ওই এলাকার মানুষের ওপর নিপীড়ন চালাত। কাউকে সে দান করত না। নবী মুসা (আ.) তাকে বোঝালেন। আল্লাহর ভয় দেখালেন। আখিরাতের কথা বললেন। মানুষের প্রতি দয়া দেখাতে বললেন। তাতে কাজ হয়নি। অবশেষে আল্লাহ তাআলা কারুনকে তার বাড়িঘরসহ সবকিছু ধ্বংস করে দেন।

সুরা কাসাসে সম্পদশালী কারুনের দম্ভ, অবাধ্যতা ও ধ্বংসের কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। তাফসিরে তাবারিতে আছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসের (রা.)–এর মতে, কারুন ছিল মুসা (আ.)-এর চাচাতো ভাই। মুসা (আ.) বনি ইসরাইলের এক অঞ্চলের নেতৃত্ব দিতেন। কারুন নেতৃত্ব দিত অন্য অঞ্চলের। মিসরের ফায়ুম শহরে কারুন হ্রদ নামে একটি স্থান রয়েছে। রাজধানী কায়রো থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখন লোকে সেটিকে চেনে বিরকেত কারুন নামে।

কোরআনে আছে, ‘কারুন ছিল মুসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের ওপর জুলুম করেছিল। আমি তাকে এত ধনভান্ডার দিয়েছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা একজন শক্তিশালী লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করো, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দেমাক কোরো না, আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তা দিয়ে পরলোকের কল্যাণ অনুসন্ধান করো এবং ইহলোকে তোমার বৈধ সম্ভোগকে তুমি উপেক্ষা কোরো না। তুমি সদয় হও, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি সদয়। আর পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না।

আরও পড়ুন

‘কারুন বলল, এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানের জোরে পেয়েছি। সেকি জানত না আল্লাহ তার আগে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছেন, যারা তার চেয়েও শক্তিতে প্রবল ছিল, সম্পদে ছিল সমৃদ্ধ? অপরাধীদেরকে ওদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না।

‘কারুন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে জাঁকজমকের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছিল। যারা পার্থিব জীবন চাইত তারা বলল, আহা! কারুনকে যা দেওয়া হয়েছে, আমরা যদি তা পেতাম! সত্যিই তিনি বড় ভাগ্যবান! আর যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক তোমাদেরকে, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ আর ধৈর্যশীল ছাড়া কেউ এ পাবে না।

‘তারপর আমি কারুনকে ও তার প্রাসাদকে মাটির নিচে মিলিয়ে দিলাম। তার পক্ষে এমন কোনো দল ছিল না, যারা আল্লাহর শাস্তির বিরুদ্ধে তাঁকে সাহায্য করতে পারত। আর সে নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারেনি। আগের দিন যারা তার মতো হতে চেয়েছিল, তারা তখন বলতে লাগল, দেখো, আল্লাহ তাঁর দাসদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা জীবনের উপকরণ বাড়ান ও যার জন্য ইচ্ছা তা কমান। যদি আল্লাহ আমাদের ওপর সদয় না হতেন, তবে আমাদেরকেও তিনি মাটির নিচে মিলিয়ে দিতেন। দেখো, অবিশ্বাসীরা সফল হয় না।

আরও পড়ুন

‘এ–পরকাল, যা আমি নির্ধারণ করি তাদেরই জন্য যারা এ-পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। সাবধানীদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। যে সৎকাজ করে, সে তার কাজের চেয়ে বেশি ফল পাবে, আর যে মন্দ কাজ করে, সে তো কেবল তার কাজের অনুপাতে শাস্তি পাবে। যিনি তোমার জন্য কোরআনকে বিধান করেছেন, তিনি অবশ্যই তোমাকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন। বলো, আমার প্রতিপালক ভালোই জানেন কে সৎ পথের নির্দেশ এনেছে আর কে পরিষ্কার বিভ্রান্তিতে আছে।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭৬-৮২)

আরও পড়ুন