ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শহীদ হলেন সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রা.)। তিনি শুধু একজন শহীদ নন, বরং ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গকারী প্রথম নারী এবং সাহস, দৃঢ়তা ও ইমানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
পরিচয় ও পারিবারিক পটভূমি
সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রা.) ছিলেন মক্কার একজন নির্যাতিত মুসলিম নারী। তিনি আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.)-এর মা এবং তাঁর স্বামী ছিলেন ইয়াসার ইবনে আমির (রা.)। তাঁরা তিনজনই ইসলাম গ্রহণ করেন মক্কার প্রাথমিক যুগে, যখন মুসলমানরা ছিল অত্যন্ত দুর্বল ও নির্যাতিত।
ইতিহাসবিদ ইবনে হিশাম উল্লেখ করেন, ইয়াসার পরিবার ছিল মক্কার দরিদ্র ও আশ্রয়হীন মুসলমান; ফলে কুরাইশদের নির্যাতনের প্রধান শিকার তারাই হন। (সিরাতুন্নবি, ১/৩১৮, দারুল জিল, বৈরুত, ১৯৯০)
কুরাইশদের নির্যাতন
সুমাইয়া (রা.), তাঁর স্বামী ইয়াসার ও পুত্র আম্মার (রা.)—এই তিনজনকে কুরাইশরা প্রচণ্ড নির্যাতন করত। উত্তপ্ত বালুর ওপর শুইয়ে রাখা, পাথর চাপা দেওয়া এবং ঈমান ত্যাগের জন্য হুমকি দেওয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
এ সময় রাসুল (স.) তাঁদের পাশ দিয়ে গেলে সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন, “হে ইয়াসার পরিবার, ধৈর্য ধারণ করো; তোমাদের প্রতিশ্রুত স্থান জান্নাত।” (আল মুস্তাদরাক আলা সহিহাইন, হাদিস: ৫০০)
এই বাণী প্রমাণ করে যে, সুমাইয়া (রা.) ও তাঁর পরিবার ইসলামের পথে অসীম ধৈর্য ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
শহীদ হওয়ার ঘটনা
একসময় কুরাইশ নেতা আবু জাহেল নিজ হাতে সুমাইয়া (রা.)-কে ইসলাম ত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি স্পষ্টভাবে ইমানের ওপর অটল থাকেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে আবু জাহেল বর্শা দিয়ে তাঁর লজ্জাস্থানে আঘাত করে তাঁকে হত্যা করে। এভাবেই সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রা.) ইসলামের প্রথম নারী শহীদ হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন। (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/৮৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যা, বৈরুত, ১৯৯৮)
ইসলামের দৃষ্টিতে তাঁর মর্যাদা
সুমাইয়া (রা.)-এর শাহাদাত প্রমাণ করে, ইসলামে মর্যাদা নির্ধারিত হয় লিঙ্গ, সম্পদ বা সামাজিক অবস্থান দিয়ে নয়; বরং ইমান, সত্যের ওপর অবিচলতা এবং ত্যাগের মাধ্যমে। একজন নারী হয়েও তিনি ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেছেন—এটি মুসলিম নারীর শক্তি ও আত্মমর্যাদার এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত (রা.) ইসলামের ইতিহাসে শুধু প্রথম নারী শহীদ নন; তিনি প্রতিটি যুগের মুসলিম নারীর জন্য এক চিরন্তন অনুপ্রেরণা।
সত্যের পথে অবিচল থাকা, অত্যাচারের সামনে মাথা নত না করা এবং ইমানের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার যে দৃষ্টান্ত তিনি রেখে গেছেন, তা ইসলামের ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।