যাঁর নামে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে
মক্কায় রাসুলের (সা.) অন্যতম শত্রু ছিল উকবা ইবনে আবি মুঈত। সে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহকে অপমান করতে নির্লজ্জ কাজ করত। নামাজে সেজদায় গেলে সে মৃত উটের নাড়িভুঁড়ি রাসুলের ওপর ছুঁড়ে মারত।
বদর যুদ্ধে উকবা নিহত হয়।
উকবার স্ত্রীর নাম ছিল আরওয়া বিনতে কুরাইয। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। উকবার ৬ জন সন্তানের প্রত্যেকেই পরবর্তীকালে মুসলমান হন। তাদের একজন ছিলেন উম্মে কুসলুম (রা.)।
উকবার মেয়ে উম্মে কুলসুম ইসলাম গ্রহণ করেন মক্কায়, কিন্তু সাহাবিদের সঙ্গে মদিনায় হিজরত করতে পারেননি। ষষ্ঠ হিজরিতে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় তিনি একাকী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। পেছন থেকে তাঁকে অনুসরণ করেন তাঁর দুই ভাই ওয়ালিদ ও আম্মার। দুই ভাই তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। বোনের পিছু নেন তারা, যাতে করে তাঁকে মক্কায় ফিরিয়ে নিতে পারেন।
হুদাইবিয়ার সন্ধির একটি ধারা ছিল, মক্কা থেকে কেউ যদি মদিনায় চলে যায়, তাকে ফেরত পাঠাতে হবে। সেই ধারা অনুযায়ী উম্মে কুলসুমকে তাঁর ভাইদের হাতে তুলে দিতে হতো। দুই ভাই চুক্তি অনুযায়ী রাসুলের কাছে আবেদন জানান।
উম্মে কুলসুম (রা.) আপন ভাইদের সঙ্গে মক্কায় ফিরে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। চুক্তির প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এতে নারীদের কথা উল্লেখ ছিল না বা নারীদের বোঝানো হয়নি। মক্কা থেকে মদিনায় চলে যাওয়া বলতে মূলত কোনো পুরুষকে বোঝাচ্ছিল, যাতে সে মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হতে না পারে। সেই জায়গা থেকে উম্মে কুলসুম (রা.) আবেদন করেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি আমাকে কাফিরদের কাছে ফিরিয়ে দেবেন? অথচ, আমার ধৈর্যধারণের ক্ষমতা নেই। আর নারীরা যে কী দুর্বল অবস্থায় আছে, তা তো জানেনই!’
মদিনায় তখন পিনপতন নীরবতা। একজন নারী একাকী এত দূর চলে এসেছেন, এবার তাঁকে যদি তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফেরত পাঠানো হয় তাঁর কেমন লাগবে? তার ওপর চুক্তি। এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই মুহূর্তে আল্লাহ পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত নাজিল করলেন।
আল্লাহ জানিয়ে দেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, বিশ্বাসী নারীরা দেশত্যাগী হয়ে তোমাদের কাছে এলে তোমরা তাদের পরীক্ষা করো। আল্লাহ তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে ভালো করে জানো। যদি তোমরা জানতে পারো যে তারা বিশ্বাসী, তবে তাদের আর অবিশ্বাসীদের কাছে ফেরত পাঠিয়ো না।’ (সুরা মুমতাহানাহ, আয়াত: ১০)
যাঁর বাবা নবীজিকে (সা.) অপদস্থ করতে চাইত, তার মুসলিম মেয়ের নিরাপত্তা, সুরক্ষার জন্য আল্লাহ পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত নাজিল করেন। আয়াত অনুসারে নবীজি সিদ্ধান্ত নিলেন, উম্মে কুলসুম (রা.)-কে তাঁর পরিবারের সঙ্গে ফেরত পাঠানো হলো না, তাঁকে মদিনায় থাকার অনুমতি দেওয়া হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,১৮০)
উম্মে কুলসুমের (রা.) দেখাদেখি আরো কয়েকজন নারী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মক্কায় থাকা মুসলিম নারীদের জন্য উম্মে কুলসুম পরিচিতি লাভ করেন একজন সাহসী নারী হিসেবে। উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করেন যায়িদ ইবনে হারিসা (রা.); একমাত্র সাহাবি, যার নাম পবিত্র কোরআনে আছে।