জীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত

প্রতিটি সৎ কাজ, প্রতিটি পরিশ্রম আল্লাহর দৃষ্টিতে মূল্যবানছবি: রয়টার্স

শ্রমের মর্যাদা ইসলামে এমন, যা কেবল জীবিকার পথ দেখায় না, বরং হৃদয়কে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়। ইসলামে সৎ শ্রম কেবল একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি ইবাদত।

মহানবী মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়েছেন, হালাল উপার্জন একটি মহৎ কাজ, যা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কল্যাণে অবদান রাখে। তাঁর জীবনের দুটি গল্প আমাদের এই পাঠ মনে করিয়ে দেয়।

নবীজির শিক্ষা

একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) একজন ব্যক্তিকে দেখলেন যে সে সব সময় মসজিদে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই ব্যক্তি কে? জানা গেল, তাঁর ভাই কাজ করে তাঁকে সহায়তা করেন। নবীজি বললেন, ‘তাঁর ভাই তাঁর চেয়ে উত্তম।’ (আল-বায়হাকি, শুআব আল-ইমান, হাদিস: ৫,৩০০)

কারও জন্য তার নিজের হাতে উপার্জিত খাবারের চেয়ে উত্তম খাবার আর নেই।
সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,০৭২

বোঝা যায়, শ্রমের মর্যাদা কতখানি। নিজের ও অন্যের জন্য কাজ করা, জীবিকা অর্জন করা—এটি মসজিদে ইবাদতের চেয়েও মহৎ হতে পারে, যদি তা সমাজের কল্যাণে কাজে আসে।

নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা সেবামূলক কাজ—প্রতিটি সৎ শ্রম আল্লাহর দৃষ্টিতে মূল্যবান। এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শ্রম কেবল জীবিকা নয়, এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব।

আরও পড়ুন

আরেকটি হাদিসে আছে, একজন ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর কাছে বললেন, ‘আমার ভাই বাড়িতে বসে থাকে, কাজ করে না, আর আমি কাজ করে তাঁকে সহায়তা করি।’ নবীজি উত্তর দিলেন, ‘হয়তো তোমার রিজিক তাঁর কারণেই দেওয়া হচ্ছে।’ (তাবারানি, আল-মুজাম আল-কাবির, হাদিস: ১০,৯৪৯; আল-হাকিম, আল-মুস্তাদরাক, ২/১২০)

এখানে লোকটির ভাই ছিলেন দুর্বল। অপারগ বা অসুস্থ থাকায় কাজ করতে পারেন না তিনি। কিন্তু তাঁর দোয়া নিশ্চয় তাঁর শ্রমজীবী ভাইয়ের সঙ্গে আছে। আমাদের শ্রমের পেছনে অন্যের দোয়া বা নিষ্ঠার অদৃশ্য আশীর্বাদ থাকতে পারে।

ইসলামে শ্রম কেবল পেশা নয়, এটি আল্লাহর কাছে যাওয়ার পথ। নবীজি (সা.) নিজে কাজ করেছেন, ব্যবসা করেছেন, আর শ্রমের মর্যাদাকে উঁচুতে তুলে ধরেছেন।

ইসলাম শ্রমের সম্মানের পাশাপাশি আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসার পাঠ দেয়। আমাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি প্রচেষ্টা আল্লাহর হাতে, আর তিনিই সবকিছুর উৎস। (সুরা আনফাল, আয়াত: ১৭)

শ্রমের মধ্যে ইবাদত

ইসলামে শ্রম কেবল পেশা নয়, এটি আল্লাহর কাছে যাওয়ার পথ। নবীজি (সা.) নিজে কাজ করেছেন, ব্যবসা করেছেন, আর শ্রমের মর্যাদাকে উঁচুতে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কারও জন্য তার নিজের হাতে উপার্জিত খাবারের চেয়ে উত্তম খাবার আর নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,০৭২)

আরও পড়ুন

প্রতিটি সৎ কাজ, প্রতিটি পরিশ্রম আল্লাহর দৃষ্টিতে মূল্যবান। যখন একজন শ্রমিক তাঁর পরিবারের জন্য কাজ করেন, সমাজের জন্য অবদান রাখেন, তখন তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ যেন একটি ইবাদত, যা তাঁর হৃদয়কে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়।

ইসলাম আমাদের শেখায়, শ্রমের মধ্যে সম্মান আছে। একজন কৃষক যিনি মাটিতে ঘাম ঝরান, একজন শিক্ষক যিনি ছাত্রদের জ্ঞানের আলো দেন, একজন নির্মাণশ্রমিক যিনি শহর গড়েন—প্রত্যেকের শ্রম আল্লাহর কাছে প্রিয়।

এই শ্রম কেবল জীবনধারণের জন্য নয়, এটি সমাজকে একত্র করে, হৃদয়ে হৃদয়ে সেতুবন্ধ গড়ে।
ইমাম আল-গাজ্জালি, ইহইয়া উলুমুদ্দিন

এই শ্রম কেবল জীবনধারণের জন্য নয়, এটি সমাজকে একত্র করে, হৃদয়ে হৃদয়ে সেতুবন্ধ গড়ে। (ইমাম আল-গাজ্জালি, ইহইয়া উলুমুদ্দিন, ২/২৪৫, দার আল-মিনহাজ, জেদ্দা, ১৯৮০)

আমরা যখন যুদ্ধ ও হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন আমাদের শ্রমের মর্যাদাও মনে রাখতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে আমাদের একতা, করুণা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ইসলাম আমাদের শেখায়, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করো এবং ন্যায়বিচারের পথে অটল থাকো।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৩৮)

আল্লাহ আমাদের শ্রমকে বরকত দিন, আমাদের প্রচেষ্টাকে সম্মান দিন, আর আমাদের হৃদয়ে শান্তি আনুন।

আরও পড়ুন