শয়তানের আয়াতুল কুরসি শেখানোর কাহিনী

ছবি: ফ্রপিক

মানুষের জন্য আল্লাহর পরিকল্পনা বোঝা সম্ভব নয়। তিনি চাইলে ফেরেশতা দিয়ে মানুষের কাছে কল্যাণ পৌঁছে দিতে পারেন, আবার চাইলে মন্দ লোক দিয়েও তা করাতে পারেন। একটি হাদিসে আছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ এই দীনকে এমন লোকের মাধ্যমে শক্তিশালী করেন—যে নিজে পাপাচারী।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩০৬২)

এর মানে, মানুষ চাইলে এমন লোক থেকেও ভালো কিছু গ্রহণ করতে পারে, আদতে যে মন্দ। সবটাই নির্ভর করে ব্যক্তির নিজের ‘গ্রহণ’ করার পদ্ধতির ওপর। ইতিবাচক কিছু চাইলে ইতিবাচক পাবে, নেতিবাচক চাইলে নেতিবাচক। এমনকি, কোনো ব্যক্তি যদি কল্যাণ চায়, সে সবচেয়ে খারাপ মানুষের কাছ থেকেও তা পেতে পারে।

এর সবচেয়ে চমৎকার উদাহরণ হল শয়তানের আয়াতুল কুরসি শেখানোর কাহিনী। শুনলে অবাক হতে হয়—স্বয়ং শয়তান মানুষকে এমন এক দোয়া শিখিয়েছিল, যে দোয়া পড়লে খোদ শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

আরও পড়ুন

কাহিনীটি এমন :

একবার রমজান মাসে আবু হুরায়রা (রা.)-কে জাকাত–ফেতরার খাদ্য-ভাণ্ডার দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হল। তখন গভীর রাত। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, এমন সময় দেখলেন এক ব্যক্তি এসে মুঠো ভরে ভরে খাদ্যদ্রব্য চুরি করছে। আবু হুরায়রা তাকে ধরে ফেললেন। এরপর বললেন, ‘তোমাকে অবশ্যই নবীজির কাছে নিয়ে যাব।’

সে বলল, ‘আমি আসলে অনেক গরিব মানুষ। আমাকে পরিবারের সবাইকে দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমার অনেক প্রয়োজন।’

তার কথা শুনে আবু হুরায়রার মায়া হল। তিনি তাকে তাকে ছেড়ে দিলেন।

সকালে নবীজি (সা.)–এর কাছে গেলে নবীজি বললেন, ‘আবু হুরায়রা, গত রাতে তোমার বন্দি কেমন আচরণ করেছে?’ অথচ আবু হুরায়রা তাঁকে কিছু বলেননি, তিনি নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করলেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, সে তার অভাব ও পরিবার-পরিজনের অসহায়ত্বের কথা জানাল। এ কারণে তার প্রতি দয়া হওয়ায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’

নবীজি বললেন, ‘সতর্ক থেকো। সে আবার আসবে।’

আবু হুরায়রা (রা.) নিশ্চিত হলেন যে সে অবশ্যই আবার আসবে। কাজেই তিনি তার অপেক্ষা করতে থাকলেন। সে আবারও এসে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আবু হুরায়রা তাকে হাতেনাতে ধরলেন। সে গতরাতের মতো আবার নিজের গরিবি ও অসহায়ত্বের কথা বলল। তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। সকালবেলা আবার নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন। আবু হুরায়রা সব খুলে বললেন।

নবীজি (সা.) বললেন, ‘সতর্ক থেকো। সে আবার আসবে।’

আরও পড়ুন

আবু হুরায়রা (রা.) মনে মনে ঠিক করলেন এবার তাকে ধরবেনই। তৃতীয়বারের মতো তার অপেক্ষায় রইলেন। যথারীতি সে এসে আবারও খাদ্যদ্রব্য চুরি করতে লাগল। আবু হুরায়রা তাকে ধরে বললেন, ‘এই নিয়ে তিনবার হল। এবার তোমাকে নবীজির কাছে হাজির করবই। ফিরে আসব না বলেও তুমি আবার ফিরে এসেছ।’

সে বলল, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কিছু শব্দ শিখিয়ে দেব, যার কারণে আল্লাহ তোমার কল্যাণ করবেন।’

আবু হুরায়রা বললেন, ‘সেগুলো কী?’

সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমানোর জন্য) বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি, অর্থাৎ আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম (সুরা বাকারা, ২৫৫), এই আয়াতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বে। তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে। সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’

সাহাবিগণ যেকোনো জিনিসের চেয়ে কল্যাণের প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন। এ কারণে আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। সকালে যখন নবীজির কাছে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার বন্দি কেমন আচরণ করেছে?’

আবু হুরায়রা তখন আগের রাতে যা ঘটেছে সব বললেন।

এ কথা শুনে নবীজি (সা.) বললেন, ‘শোনো, সে নিজে ভয়ানক মিথ্যাবাদী, তবে তোমাকে সত্য কথা বলেছে। আবু হুরায়রা, তুমি কি জানো, তিন রাত ধরে তুমি কার সঙ্গে কথা বলছিলে?’

আবু হুরায়রা বললেন, ‘না তো।’

নবীজি বললেন, ‘সে ছিল শয়তান।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস: ৬১০; তিরমিজি, হাদিস: ২৮৮০ ও সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৩১১)

[email protected]

মওলবি আশরাফ : আলেম, লেখক ও অনুবাদক

আরও পড়ুন