নামাজে দরুদ পড়ার নিয়ম

নামাজে দরুদ পড়ার নিয়ম

হজরত কাব ইবনে ওজারার (রা.) বরাতে হাদিসটি পাওয়া যায়। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার ওপর আমরা কীভাবে দরুদ পড়ব?’ তিনি বললেন, বলো: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ; আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর এই রূপ রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইবরাহিম ও তাঁর বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইবরাহিম ও তাঁর বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

আরও পড়ুন

নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরুদ শরিফ পড়তে হয়। শেষ বৈঠকে দরুদ শরিফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়া সুন্নত। কেউ যদি কোনো কারণে সুন্নত ছেড়ে দেয়—তাহলেও তার নামাজ হয়ে যাবে। সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না। তবে সওয়াব কিছুটা কমে যায়।

তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত জেনে-বুঝে সুন্নত ছেড়ে দেয় বা সুন্নত দেওয়াকে নিজের অভ্যাস বানিয়ে ফেলে, তাহলে সে গুনাহগার হবে। (রাদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৮৩)

আরও পড়ুন

দরুদে ইবরাহিমের উচ্চারণ ও অর্থ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১২৯১)

অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর শান্তি বর্ষণ করো, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর শান্তি বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করো, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত।

আরও পড়ুন

দরুদ শরিফ না পড়ার পরিণতি

একবার জুমার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারের প্রথম ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! তারপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! এরপর খুতবা দিলেন ও নামাজ আদায় করলেন।

নামাজ শেষে সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আজ যা দেখলাম, তা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি (আপনি একেক ধাপে পা রেখে আমিন, আমিন, আমিন বললেন); এটা কি কোনো নতুন নিয়ম?’ নবী করিম (সা.) বললেন, ‘না, এটা নতুন কোনো নিয়ম নয়; বরং আমি মিম্বারে ওঠার সময় হজরত জিবরাইল (আ.) এলেন। আমি যখন মিম্বারের প্রথম ধাপে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা পিতামাতা উভয়কে বা একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও তাদের খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন! (তা-ই হোক)। আমি যখন মিম্বারের দ্বিতীয় ধাপে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা রমজান পেল কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তাদের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন! আমি যখন মিম্বারের তৃতীয় ধাপে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা আপনার পবিত্র নাম মোবারক (“মুহাম্মদ”) শুনল কিন্তু দরুদ শরিফ পাঠ করল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন!’ (মুসলিম শরিফ)।

আরও পড়ুন