দোয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা

কঠিন বিপদের সময় দৃঢ় ইমান ও অসীম ধৈর্য ছাড়া অনেকের মন দুর্বল হয়ে পড়ে। কখনো কখনো ইমানের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যায়। এটি স্বাভাবিক যে কঠিন পরিস্থিতিতে ইমান দুর্বল হতে পারে এবং এটি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে করেন না। তবে কীভাবে বুঝবেন যে আপনার ইমান দুর্বল হচ্ছে?

যখন বিপদে অতিরিক্ত ভয়ে দিশেহারা হয়ে মহান আল্লাহর কাছে সঠিকভাবে সাহায্য চাইতে ব্যর্থ হন, তখন ইমান দুর্বল হয়। মুমিনের শক্তিশালী হাতিয়ার হলো দোয়া; কিন্তু দোয়ার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস না থাকলে বা আস্থার সঙ্গে দোয়া না করলে ইমান দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রকৃতপক্ষে তকদির পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হলো দোয়া। বিপদ আকাশ থেকে নাজিল হলে দোয়া ওপরের দিকে ওঠে এবং মাঝপথে বিপদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

এই লেখায় দোয়ার বিস্ময়কর শক্তি সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য শেয়ার করা হবে, যা বিপদে দোয়া করতে ভুলে যাওয়া বা দোয়ার ফল না পেয়ে হতাশ হওয়ার সময় আপনার বিশ্বাসকে মজবুত করবে।

দোয়ার প্রতি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি

বিপদে মন যখন নরম হয়ে যায়, তখন অনেকে হতাশার সঙ্গে বলেন:

  • ‘দোয়া ছাড়া আর কী করার আছে!’

  • ‘এখন শুধু দোয়া করে যেতে হবে।’

কথাগুলো ঠিক হলেও প্রকাশভঙ্গি প্রায়ই হতাশার। এটি দোয়া কবুল না হওয়ার একটি প্রধান কারণ। অথচ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দোয়া করলে অনেক কিছুর পরিবর্তন সম্ভব। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দোয়া যে বিপদ নাজিল হয়েছে, তা থেকে উপকার করে এবং যে বিপদ নাজিল হওয়ার কথা ছিল, তা থেকেও। হে মহান আল্লাহর বান্দারা! তোমরা বেশি বেশি দোয়া করো।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৮)

আরও পড়ুন

দোয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা

প্রকৃতপক্ষে তকদির পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হলো দোয়া। যখন কোনো বিপদ আকাশ থেকে নাজিল হতে থাকে, তখন দোয়া ওপরের দিকে ওঠে এবং মাঝপথে বিপদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বিজয় নির্ভর করে দোয়ার শক্তির ওপর। ইখলাস ও কবুলের আশা নিয়ে দোয়া করলে তা বিপদকে পরাজিত করে।

কিন্তু হতাশা বা অমনোযোগের সঙ্গে দোয়া করলে বিপদ শক্তিশালী হয়ে তা পরাজিত করে নাজিল হয়। কখনো কখনো দোয়া ও বিপদ সমান শক্তিশালী হলে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই চলে। তাই বিপদের আগেই দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দোয়া করা উচিত, এই আশা নিয়ে যে মহান আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন।

দোয়ার মূল্য মহান আল্লাহর কাছে

বান্দার দোয়া মহান আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। তিনি বান্দাকে দোয়া করতে বলেছেন এবং তাঁর ডাকে সাড়া দেন। আর-রহমান বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম পাপ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়া অন্য কিছু মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তিনি তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন: হয় তার প্রার্থিত বস্তু দেন, নয় দোয়ার নেকি আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করেন, অথবা দোয়ার সমপরিমাণ বিপদ দূর করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৭৩; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১১,১৪৯)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, সঠিকভাবে দোয়া করলে দুনিয়া বা আখিরাতে তার সুফল পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন

দোয়ার সঠিক পদ্ধতি

দোয়াকে দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। একবার বা দুবার দোয়া করে কবুলের আশা করা ঠিক নয়। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘একাগ্রচিত্তে দোয়া করা মানে মহান আল্লাহর দরজায় কড়া নাড়া। আর যে তাঁর দরজায় কড়া নাড়ে, তিনি তার জন্য দরজা খুলে দেন।’ (ইবনুল কাইয়্যিম, আদ-দা ওয়াদ-দাওয়া)

মনে রাখবেন, ফুল ফুটবেই; কিন্তু এক রাতে নয়। দিনের পর দিন পানি দিতে হবে।

মনে রাখবেন, ফুল ফুটবেই; কিন্তু এক রাতে নয়। দিনের পর দিন পানি দিতে হবে। দোয়ার উত্তর মহান আল্লাহর প্রাকৃতিক নিয়মের কাঠামোর মধ্য থেকেই আসবে। অলৌকিক ঘটনা ঘটে, তবে তা নিয়মের ব্যতিক্রম। দোয়া কোনো প্যানিক বাটন নয় যে মুহূর্তে সমাধান দেবে। এর জন্য ধৈর্য, অধ্যবসায়, পুনরাবৃত্তি ও অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োজন।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) আরও বলেন, ‘দোয়া অস্ত্রের মতো। অস্ত্র শুধু ধারের ওপর নির্ভর করে না, চালনাকারীর দক্ষতার ওপরও নির্ভর করে। যদি অস্ত্র ত্রুটিমুক্ত, হাত দৃঢ় ও প্রতিবন্ধকতা না থাকে, তবে শত্রু পরাজিত হবে। যেকোনো একটির কমতি থাকলে প্রভাব কমে যায়।’ (ইবনুল কাইয়্যিম, আদ-দা ওয়াদ-দাওয়া)

দোয়ার প্রতি আশা ও বিশ্বাস

ইমাম শাফিঈ (রহ.) বলেছেন: ‘তোমরা দোয়া নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করো, ফলে দোয়া বিফলে যায়। তোমরা জানো না দোয়ায় কী আছে! শেষ রাতের দোয়া এমন তির, যা কখনো লক্ষ্যচ্যুত হয় না।’

তাই বিপদে বা কঠিন পরিস্থিতিতে আন্তরিক বিশ্বাস ও বিনয়ের সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। তিনিই সব বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারেন এবং আমাদের আশা পূরণ করতে সক্ষম। মহান আল্লাহ অমনোযোগী বা তাওয়াক্কুলবিহীন দোয়া কবুল করেন না। তাঁর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল রেখে দোয়া করলে তিনি তা কবুল করতে আগ্রহী হন। তিনি তো আল-মুজিব, সাড়া দানকারী।

ইসমত আরা: লেখক ও শিক্ষক

আরও পড়ুন