মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, উন্নত পুষ্টির নিশ্চয়তা

ইউএসএআইডির ‘ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি’ গত ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ‘মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, উন্নত পুষ্টির নিশ্চয়তা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। প্রচার সহযোগী ছিল প্রথম আলো। এ আলোচনার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

অংশগ্রহণকারী

মো. তবিবুর রহমান তালুকদার

প্রকল্প পরিচালক, মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্প, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

মো. শফিকুল হাসান

প্রকল্প পরিচালক, পল্লি এলাকার নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, গোপালগঞ্জ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

মুহাম্মদ খান

পরিচালক, ইকোনমিক গ্রোথ অফিস, ইউএসএআইডি, বাংলাদেশ

তানভীর আহমেদ

পরিচালক, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

মো. আব্দুল মতিন

মহাব্যবস্থাপক (কার্যক্রম), পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও প্রকল্প সমন্বয়ক

মো. নূরুল ওসমান

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হাইসাওয়া

আবদুল্লাহ আল জুনাইদ

হেড অব বিজনেস অপারেশন, আরএফএল প্লাস্টিকস লিমিটেড

রাশেদুল আলম সরকার

লিডার-বাংলাদেশ, সাতো, লিক্সিল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড

শহীদুল ইসলাম

সেক্টর লিডার-ওয়াটার, এসএনভি বাংলাদেশ

সরোজা থাপা

ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ও পরিচালক, এশিয়া অপারেশনস, আইডিই বাংলাদেশ

রামকৃষ্ণ গণেশান

চিফ অব পার্টি, ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি

আলোচনা

মো. তবিবুর রহমান তালুকদার

মো. তবিবুর রহমান তালুকদার

আশি ও নব্বইয়ের দশকে আমাদের স্যানিটেশন ব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। ২০০৩ সালে একটা জাতীয় ভিত্তি জরিপ হয়। এ জরিপে ৩৩ শতাংশ পরিবারে স্বাস্থ্যসম্মত ও ২৫ শতাংশ পরিবারে অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন পাওয়া যায়। ৪২ শতাংশের কোনো ল্যাট্রিন ছিল না। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অক্টোবর মাসকে জাতীয় স্যানিটেশন মাস হিসেবে উদ্‌যাপন করা হবে। আরও সিদ্ধান্ত হয় যে ২০১০ সালের মধ্যে শতভাগ স্যানিটেশন অর্জন করতে হবে। ২০০৯ সালে দেখা গেল এটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তখন আবার ২০১৩ সালের মধ্যে শতভাগ স্যানিটেশন অর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০১১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান নেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে স্যানিটেশনের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কৌশল ও কার্যক্রম নেওয়া হবে। সর্বশেষ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন  লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অধীনে সবার জন্য নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত স্যানিটেশন স্থির করা হয়েছে। ২০১৪ সালে সরকার ‘জাতীয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কৌশলপত্র’ প্রণয়ন করে।

২০১৮ সালে সরকারের নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল, শহরের পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন-সুবিধা গ্রামের মানুষকে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রকল্প পল্লি অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলমান রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জনগণের সম্পৃক্ততা, অংশগ্রহণ, মালিকানা ও চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে।

পল্লি অঞ্চলভিত্তিক এই প্রকল্প পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছে। বিনা মূল্যে পল্লি অঞ্চলে হতদরিদ্রদের মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার ৮৭৪টি টুইন–পিট অফসেট ল্যাট্রিন দেওয়া হবে। প্রতি ইউনিয়নে প্রায় ২২৯টি টুইন–পিট ল্যাট্রিন বিনা মূল্যে দেওয়া হবে, যা নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

 গ্রামাঞ্চলে ৩৫২টি পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে। শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষেরা যেন ব্যবহার  করতে  পারে, সে জন্য র‍্যাম্প থাকবে। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা এবং ব্যাগ, সাইকেল ইত্যাদি রাখার জায়গাসহ নারী-পুরুষের জন্য আলাদা করে দুটি ল্যাট্রিন থাকবে।

পল্লি এলাকায় ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে নতুন পাবলিক টয়লেট দেওয়া হবে। ৭৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার সঙ্গে ওয়াশবিষয়ক কিছু মেরামতের কাজ করা হবে। এই  প্রকল্প দ্বারা প্রায় ৯০ লাখ মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশন  ব্যবস্থার আওতায় আসবে, যা এসডিজির স্যানিটেশন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে।

মো. শফিকুল হাসান

মো. শফিকুল হাসান

নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন বাংলাদেশ সরকারের একটি অগ্রাধিকার খাত। স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে। সবার জন্য নিরাপদ পানি ও শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমানে বাংলাদেশে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের হার প্রায় শূন্যের কোঠায়।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। তবে গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহর অঞ্চল নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত স্যানিটেশনের লক্ষ্য অর্জনে বেশ পিছিয়ে আছে। শহর এলাকায় ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ণ বিদ্যমান স্যানিটেশন অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। দুর্বল পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা জলাশয় ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে দূষিত করছে। এ জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

স্যানিটেশন অবকাঠামোর জাতীয় নীতিমালা অনুসরণ না করায় সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মী মারা যান। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অনভিপ্রেত। এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে শহর এলাকায় বিশেষ করে ৩৩০টি পৌরসভায় উন্নত, লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তির সমন্বয় সাধন অপরিহার্য। 

সবার মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন অর্জন করতে হলে অবশ্যই পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার সব সার্ভিস চেইন সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ইতিমধ্যে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি কাঠামো ২০১৭ অনুমোদন করেছে। এটা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২০ প্রণয়ন করেছে। বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শহরভিত্তিক নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ইতিমধ্যে ১০০টির বেশি পৌরসভায় পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের ১০টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বিত স্যানিটেশন ও হাইজিন প্রকল্প এবং আরও ২৫টি শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন প্রকল্পের মাধ্যমে পয়োবর্জ্য ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত  স্যানিটেশনের কভারেজ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের সার্বিক স্যানিটেশন পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করছে।

মাহজাবিন আহমেদ

মাহজাবিন আহমেদ, ওয়াশ টেকনিক্যাল লিড, ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি

পুষ্টির জন্য ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) সেবা প্রদানে গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে। খোলা জায়গায় মলত্যাগ করা মানুষের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশে ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবার উন্নত ল্যাট্রিনের আওতায় এসেছে। যদিও একটি ল্যাট্রিন এককভাবে ব্যবহার করে ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার। আবার   নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত স্যানিটেশনের আওতায় আছে মাত্র ৩৯ শতাংশ পরিবার। ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারের খাবার পানির উৎসে এবং ৮১ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারের পানিতে (ব্যবহারের সময়)  ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল হলে পানি দূষিত হয়, ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে এবং খাদ্য থেকে পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। এ কারণে অপুষ্টি দেখা দেয়, বিশেষ করে শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধির সমস্যা হয়, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বেড়ে যায় এবং কর্মদিবস নষ্ট হয়।

উন্নত স্যানিটেশন, দারিদ্র্য বিমোচন, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, জেন্ডার সমতা, নিরাপদ পানি এবং পয়োনিষ্কাশন, জলবায়ু কার্যক্রম ইত্যাদি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইউএসএআইডির ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটির কর্ম এলাকার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ২৩টি জেলা এবং এর লক্ষ্য হলো এই জেলাগুলোর পরিবারগুলোর পুষ্টির উন্নয়নের লক্ষ্যে, বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী এবং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারী এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য কাজ করা।

কার্যক্রমটি প্রধানত পুষ্টিকর, বৈচিত্র্যময়, সুষম এবং নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ, নারী ও কিশোর-কিশোরীদের  সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি চর্চা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে থাকে। এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৭২ জন এ কার্যক্রমের আওতায় এসেছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে, প্রাইভেট সেক্টর, এনজিও এবং অন্য সহযোগীদের সঙ্গে মিলে অংশীদারত্বের  ভিত্তিতে একযোগে কাজ করছে।

ল্যাট্রিন প্রস্তুতকারকদের উন্নত ল্যাট্রিন প্রযুক্তি, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, প্রচারকৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে এবং স্থানীয় সরকার, প্রাইভেট সেক্টর, এনজিও এবং অন্য সহযোগীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছে।

একই সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অনুন্নত ল্যাট্রিনের কুফল ও উন্নত ল্যাট্রিনের সুবিধা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উন্নত ল্যাট্রিন প্রযুক্তির প্রচারে  সহযোগিতা করছে। এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত  ১ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৯ জনের কাছে উন্নত স্যানিটেশন সেবা পৌঁছাতে পেরেছে ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন আ্যাক্টিভিটি।

সেই সঙ্গে গত পাঁচ বছরে ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে। যেমন উপযুক্ত পয়োনিষ্কাশন সমস্যার সমাধানের অপ্রতুলতা ও সচেতনতার অভাব, ভোক্তাদের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার চেয়ে ল্যাট্রিনের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে খরচের প্রতি আগ্রহ এবং ক্রেতা-বিক্রেতা, প্রস্তুতকারক উভয়ের জন্য অর্থায়নের অভাব।

স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি আগামী পাঁচ বছরের জন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন স্যানিটেশন কার্যক্রম বৃদ্ধি, গ্রাহকের  চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী স্যানিটেশন পণ্য বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা, সঠিক ও সুলভ মূল্যে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থা অনুসন্ধান ও নিশ্চিত করা, সরকারের নেতৃত্বে প্রাইভেট সেক্টর, এনজিও এবং অন্য সহযোগীদের সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতা, প্রস্তুতকারকদের সংযোগ বৃদ্ধি করা এবং কার্যকর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো।

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচ লাখ জনগোষ্ঠীকে উন্নত স্যানিটেশন সেবার আওতায় নিয়ে আসাই এই কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য।

মুহাম্মদ খান

মুহাম্মদ খান

গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউএসএআইডি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সব বাংলাদেশির জীবনমান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি লাভের উদ্দেশ্যে একযোগে কাজ করে যাবে। বাংলাদেশ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির উন্নয়নের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের হার কমানো ও জনগণকে পানি সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক উদাহরণ।

তবে দীর্ঘস্থায়ী বেশ কিছু সমস্যা যেমন পানিতে আর্সেনিক ও মল পদার্থের উপস্থিতি এবং পানিতে লবণাক্ততা ও পানির নিরাপদ ব্যবস্থাপনার মতো নতুন সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নত পুষ্টি, জীবনমানের উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৬-এর অধীনে সব বাংলাদেশির জন্য পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, ইউএসএআইডি পুষ্টিসংক্রান্ত  সব কার্যক্রমে পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করে। আর এ খাতের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে কার্যকর কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করা যায়, সেই লক্ষ্যে ইউএসএআইডি, ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি ও অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, এনজিও ও অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করে।

পানি ও স্যানিটেশন পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কথা ভেবে বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে উপযোগী সমাধানও নিয়ে আসে ইউএসএআইডি। একদিকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কারিগরি ও ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধি, বৃহৎ বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে  তাঁদের ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি, অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ স্যানিটেশনের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে ইউএসএআইডি।

তানভীর আহমেদ

তানভীর আহমেদ

পল্লি অঞ্চলের স্যানিটেশনের বিষয়টি একটু ভিন্ন। শহরে এক জায়গায় অনেক মানুষ বাস করে। গ্রামে একটু দূরে মানুষের বাস। ফলে এখানে কেন্দ্রীভূত সেবা দেওয়ার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। পল্লি অঞ্চলের স্যানিটেশন  ব্যবস্থা কেমন হবে, তা ‘পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার (এফএসএম) প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি কাঠামো বাস্তবায়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা: পল্লি অঞ্চল ২০১৭’-এ বিশদ  বর্ণনা আছে। গ্রামীণ স্যানিটেশন ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদের নিয়মনীতির মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে।

গ্রামে পিট ল্যাট্রিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এর উন্নত  নকশা  অর্থাৎ পিট, টুইন–পিট পোর ফ্ল্যাশ ল্যাট্রিন, বা অন্যান্য বিকল্প ব্যবস্থা (যা গর্তের ভেতর বর্জ্যের পরিমাণ প্রযুক্তির মাধ্যমে কমাতে সক্ষম) ব্যবহার করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। সেপটিক ট্যাংক খালি করার ব্যবস্থা না থাকলে এবং সেটা দ্রুত ভরে গেলে তখন পরিষ্কার করার ঝামেলা থাকে। এ জন্য গ্রাম এলাকায় উন্নত নকশার পিট ল্যাট্রিন বিশেষত টুইন–পিট ল্যাট্রিন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য।

আবার এটাও নিশ্চিত করতে হবে যেন, পিটের (গর্তের) বর্জ্য মাটির নিচের পানির স্তরকে দূষিত না করে এবং ৩০ ফুটের মধ্যে যেন খাওয়ার পানির উৎস না থাকে। পল্লি এলাকাগুলোকে ভবিষ্যৎ নগরায়ণ হওয়ার সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে দুটি ক্লাস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে, ক্লাস্টার এ (শহরসদৃশ এলাকা, গ্রোথ সেন্টার) এবং ক্লাস্টার বি (অন্যান্য পল্লি অঞ্চল)।  যেসব গ্রাম ক্লাস্টার এ-এর অন্তর্ভুক্ত হবে, সেখানে যাতায়াত, যোগাযোগ ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা বাড়বে, এখানে সেপটিক ট্যাংকের কথা ভাবা যায়। অন্য পল্লি এলাকায়  অন–সাইট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং পিট, টুইন–পিট পোর ফ্ল্যাশ ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে।

যারা পিট ল্যাট্রিন ব্যবহার করবে, তাদের নিরাপদে বর্জ্য সরানোর বিষয় শেখাতে হবে। টুইন–পিটে একটি পিট ভরে গেলে বিকল্প পিট ব্যবহারের সুবিধা আছে। এ জন্য সরকার টুইন–পিট ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে। ক্লাস্টার এ-এর ক্ষেত্রে বর্জ্য সংগ্রহ (কালেকশন) সিস্টেমে যেতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দুর্যোগসহনীয় ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে।

মো. আব্দুল মতিন

মো. আব্দুল মতিন

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে কাজ করে। আমাদের দুই শতাধিক সক্রিয় সহযোগী সংগঠন আছে, যারা সারা দেশে ১৩ হাজার ৫০০ শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের প্রতি ইউনিয়নে আমাদের কার্যক্রম আছে। আমাদের এই প্রকল্পে  ৯৮টি উপজেলায় ডিপিএইচইর সঙ্গে আমরা যৌথভাবে মানসম্মত স্যানিটেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি এবং আরও ৮৪টি উপজেলা যুক্ত করেছি।

আমরা মোট ১৮২টি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, সম্পূর্ণ গ্রামীণ এলাকার জন্য। ৭৬টি সহযোগী সংস্থা এ প্রকল্পে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। এটা বাস্তবায়নে ২ হাজার ৭১৩টি শাখা কাজ করছে। এখানে ১৩ হাজার ৫০০ মাঠ কর্মকর্তা আছেন। ১ লাখ ২০ হাজার পরিবারে আমরা নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করব। আর ১০ লাখ পরিবারের জন্য টুইন–পিট ল্যাট্রিন সরবরাহ করব, যা নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

এখানে পানির জন্য ঋণ দেওয়া হবে ৩০০ কোটি টাকা। ল্যাট্রিনের জন্য দেওয়া হবে ২ হাজার কোটি টাকা। একটা ল্যাট্রিনের জন্য ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। যেকোনো পরিবারকে ঋণের মাধ্যমে ল্যাট্রিন সুবিধা দেওয়া হবে। আমাদের এ ঋণে সুদের হার কম, আবার বেশি ইনস্টলমেন্টের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এ কাজের জন্য আমরা প্রায় ৪ হাজার ল্যাট্রিন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেব। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ল্যাট্রিন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোক্তাকে আমরা ৩০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিই।

যারা ল্যাট্রিন ক্রয় করে, তাদের প্রত্যেককে ৩ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার আমাদের ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছে। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আমাদের চার ধরনের ল্যাট্রিনের নকশা আছে। ল্যাট্রিনের ধরন অনুযায়ী ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

একটি পরিবার পানি ও ল্যাট্রিন সুবিধা উভয়ের জন্য একসঙ্গে ঋণ নিতে পারে। ২০২২ সাল থেকে শুরু করে পানি সরবরাহ এবং ল্যাট্রিনের জন্য ইতিমধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার পরিবারে ৪১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

মো. নূরুল ওসমান

মো. নূরুল ওসমান

বাংলাদেশে খোলা জায়গায় মলত্যাগ প্রায় শূন্য। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় এখনো খোলা জায়গায় মলত্যাগের হার ৫ থেকে ২৫ শতাংশ হার। আবার ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত স্যানিটেশনে আমাদের যে লক্ষ্য, সে জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি। আমরা এখন পর্যন্ত নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত স্যানিটেশনে ৫০ শতাংশের নিচে আছি। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে এটা ৫০ শতাংশের বেশি।

২০০৩ সাল থেকে এ ক্ষেত্রে  স্থানীয় সরকার বিভাগের নেতৃত্বে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিওসহ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপক উদ্যোগ ছিল। ১৯৯০ সালে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করত ৩৪ শতাংশ মানুষ।

২০১৭ সালে সেটা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি হয়ে গেছে। আমরা ১০০ শতাংশে এখনো উন্নীত হতে পারিনি, যেহেতু দেশের জনসংখ্যার একটা অংশ পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় বাস করে। এসব এলাকায় খোলা জায়গায় মলত্যাগ শূন্য করা যাচ্ছে না। আমরা যদি ২০৩০ সালে নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত স্যানিটেশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই, আরও পাঁচ গুণ বেশি গতিতে এগোতে হবে। আমরা কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি, কতটুকু বাকি, কারা কারা এ ক্ষেত্রে কাজ করে, কে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে, সবকিছু মিলে একটা জাতীয় ড্যাশবোর্ড তৈরি করতে হবে। তারপর এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

স্যানিটেশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য আকর্ষণীয় ও কার্যকর যোগাযোগ ও প্রচারকৌশলের ওপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের উপযোগী স্লোগান, বার্তা, ইত্যাদি তৈরি এবং প্রচার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

আবদুল্লাহ আল জুনাইদ

আবদুল্লাহ আল জুনাইদ

আমাদের বাসায় কোনো অতিথি এলে ড্রয়িংরুম সাজিয়ে রাখি। কিন্তু আমরা আমাদের ল্যাট্রিন নিয়ে সচেতন নই। আবার আমাদের ল্যাট্রিনের বর্জ্য কোথায় যায়, সে ব্যাপারে আমরা মোটেই অবগত নই। আরএফএলের প্লাস্টিক সেপটিক ট্যাংক আছে। অনেক দিন থেকে বাংলাদেশে এটা বাজারজাত করছি। এ ক্ষেত্রে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। সুপারস্ট্রাকচার অর্থাৎ ল্যাট্রিনের উপরিভাগের যতগুলো উপকরণ লাগে, এর প্রায় সবই আমরা উৎপাদন করি।

সাবস্ট্রাকচারের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সেপটিক ট্যাংক ও পিট। এটাও আমরা তৈরি করেছি। এখন আরও উন্নত করছি। সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) কীভাবে আনা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু এসটিপিসহ সেপটিক ট্যাংকের মূল্য কিছুটা বেশি হয়, সেটা ক্রেতাদের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এখানে ভোক্তাদের সচেতনতা, বাজেট, নিয়মনীতিসহ সবকিছুর মধ্যে একটা সমন্বয় আনতে হবে। কীভাবে এসটিপির খরচ কমানো যায়, সেটা নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। এসটিপির পর বর্জ্য কোথাও সরাতে হবে।

এ ক্ষেত্রেও আমরা সহযোগিতা করতে পারব। তারপর সে বর্জ্য, জৈব সার হিসেবে বাজারজাত করা যাবে। এসটিপি বিক্রির পরবর্তী সেবা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা একত্রে কাজ করতে পারি।  স্যানিটেশন সেবা বাড়ানোর জন্য আমরা সবার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে সব সময় আগ্রহী।

রাশেদুল আলম সরকার

রাশেদুল আলম সরকার

লিক্সিল একটি জাপানি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। ২০১৩ সালে লিক্সিল বাংলাদেশে সাতোপ্যান বাজারজাত করে। সাতোপ্যানের বৈশিষ্ট্য হলো ফ্লাপডোর টেকনোলজি। আমরা তিনটি বিশ্বাসের ওপর কাজ করি: একটা হলো পানিসাশ্রয়ী প্রযুক্তি, ক্রয়ক্ষমতা ও ব্যবহার উপযোগিতা। নিরাপদ স্যানিটেশনের জন্য আমরা তিনটি নতুন পণ্য ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাজারে এনেছি। এগুলো হলো ইউনিভার্সাল আই ট্রাপ, ভি ট্রাপ ও সাতো ট্রাপ। এর মধ্যে আই ট্রাপ, ভি ট্রাপ হলো টয়লেটের নিচের ব্যবস্থা।

আমাদের গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা হলো, এখন যে প্রযুক্তি চলছে, তাতে প্রতি ফ্লাশে ৪ থেকে ৫ লিটার পানি লাগে। কিন্তু  সাতোপ্যানে ১ লিটারের কম পানি লাগে। পানি কম ব্যবহার করলে বর্জ্য কমে যাবে। দেশে সিরামিক প্যানের ব্যবহার বাড়ছে। এ জন্য আমরা আই ট্রাপ, ভি ট্রাপ এনেছি। এটা যেকোনো সিরামিক প্যানে ব্যবহার করা সম্ভব। গ্রাম ও শহর—দুই জায়গায় এটা ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে ইউএসএআইডিসহ অন্যান্য সংস্থা কাজ করছে।

বর্তমান রিং সিস্টেমকে আমরা প্লাস্টিক কনটেইনার সিস্টেমে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এটা ব্যয়সাশ্রয়ী হবে। এ জন্য লাইনার স্ল্যাব টুল ব্যবহারের চেষ্টা করছি।

শহীদুল ইসলাম

শহীদুল ইসলাম

আমরা ৪টি সিটি করপোরেশন ও ১৩টি পৌরসভায় কাজ করি। আলোচনায় এসেছে, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ১২৫টি শহরে ফিকাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এফএসটিপি) হবে। কিছু জায়গায় এফএসটিপির অবকাঠামো থাকলেও পয়োবর্জ্য সরাসরি ড্রেনসহ অন্যান্য খোলা জায়গায় যাচ্ছে। এর ফলে এফএসটিপি সেবা নেওয়ার চাহিদা সেভাবে বাড়ছে না। এ ছাড়া শহরে অবকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা ও প্রযুক্তির অভাব আছে। সচেতনতা বৃদ্ধি করে সবাইকে এখন নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে এফএসটিপি করা হলেও সেটা সম্পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হবে না। প্রয়োজনীয় ও দক্ষ প্রযুক্তি ও জনবলের অভাব থাকলেও পৌরসভা পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে।  এখানে কার্যকর বিজনেস মডেল তৈরি হচ্ছে না।

এ ক্ষেত্রে প্রাইভেট খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। এফএসটিপির ব্যবস্থাপনা ও চাহিদা বৃদ্ধি করতে পৌরসভা ও প্রাইভেট খাত একসঙ্গে কাজ করতে পারে। শুধু পৌরসভার একার পক্ষে সম্ভব হবে না।

সাধারণত অবকাঠামো শেষ করা পর্যন্ত আর্থিক জোগান থাকে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আপগ্রেডেশনসহ বিভিন্ন সেবার জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে না। পৌরসভা বিভিন্ন ট্যাক্স সংগ্রহ করে, যার বেশির ভাগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যবহার হলেও স্যানিটেশন সেবা খাতে সেভাবে খরচ করা হয় না। আমার পরামর্শ হলো, এ ক্ষেত্রে প্রাইভেট খাত নিয়ে আসতে হবে। এরা যেহেতু লাভ করবে, তাই পেশাগত সেবা দেবে। আবার পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিতেও  এটা করা যেতে পারে।

সরোজা থাপা

সরোজা থাপা

স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্যের সঙ্গে এমডিজি অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে এসডিজি অর্জনে বদ্ধপরিকর এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের এই বৃহত্তর লক্ষ্যকে সহযোগিতা করতে আমরা আইডিইর পক্ষ থেকে স্যানিটারি পণ্য উৎপাদনকারী, স্যানিটেশন ব্যবসায়ীদের উন্নত প্রযুক্তি এবং টেকসই পণ্য বানানোর ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।

প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমরা তাদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকি এবং তাদের উৎসাহ দিই যেন তারা আরও ভালো মানের পণ্য উৎপাদন করে গ্রামীণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরবরাহ করে স্যানিটেশন খাতের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। লিক্সিল ও আরএফএলের মতো প্রতিষ্ঠান কীভাবে বাংলাদেশের বাজারে উন্নত স্যানিটেশন উপকরণ গ্রামীণ পর্যায়ে বাজারজাত করতে পারে, সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করি। আমরা সরকার, ব্যক্তি খাত সবার সঙ্গে সমানভাবে কাজ করি।

সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধিতে কাজ করি। বাংলাদেশে উন্নত স্যানিটেশন প্রযুক্তির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমরা আশা করি সরকারি–বেসরকারি এবং উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গ্রামীণ পর্যায়ে উন্নত স্যানিটেশনের হার বৃদ্ধি পাবে।

রামকৃষ্ণ গণেশান

রামকৃষ্ণ গণেশান

বাংলাদেশকে উচ্চাভিলাষী এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপদান করতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। অপর্যাপ্ত স্যানিটেশনের কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন টাকা হারায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিনিয়োগ করা প্রতি ১ টাকার বিপরীতে ৬ টাকার ক্ষতি এড়ানো যায়। তাই স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধিতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি সব স্টেকহোল্ডারকে আহ্বান জানায়।

স্যানিটেশন কভারেজ সব জেলায় এক রকম নয়। মাদারীপুরের ৯৮ শতাংশ পরিবার উন্নত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে, যেখানে ভোলার ক্ষেত্রে তা মাত্র ৫৫ শতাংশ। উন্নত পুষ্টি এবং শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে যেসব জেলায় স্যানিটেশন কভারেজ এখনো কম, সেখানে ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি তার কার্যক্রম জোরদার করার পরিকল্পনা করেছে।

সুপারিশ

  • নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত ও সহজলভ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

  • সঠিক ও সুলভ মূল্যে শহর ও গ্রামে উপযুক্ত পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি।

  • স্যানিটেশন কার্যক্রম বৃদ্ধি ও গ্রাহকের চাহিদা ও পছন্দের পণ্য বাজারজাতকরণে উদ্যোগ গ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন।

  • ক্রেতা-বিক্রেতা ও প্রস্তুতকারক সবার জন্য অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে  হবে।