আইপিএলের পারিশ্রমিক দিয়ে সবার আগে বাবার ঋণ শোধ করবেন কার্তিক
আইপিএলের নিলাম ভাগ্য পরিবর্তনের মঞ্চ! এবার সেই মঞ্চে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে কার্তিক শর্মার। চেন্নাই সুপার কিংস ১৪ কোটি ২০ লাখ রুপিতে এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যানকে দলে নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল জাগে, হঠাৎ কোটিপতি হয়ে যাওয়া এই ক্রিকেটার এত অর্থ দিয়ে কী করবেন?
কার্তিক নিজেই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সবার আগে এই ক্রিকেটার তাঁর বাবার ঋণ পরিশোধ করবেন।
ছেলেকে ক্রিকেট বানাতেই ঋণী হয়েছেন বাবা মনোজ শর্মা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, মনোজ শর্মা নিজেও ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চোটের কারণে পারেননি। অধরা সেই স্বপ্নই ছেলেকে দিয়ে পূরণ করানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন মনোজ। আর সেই চেষ্টাই কার্তিককে তুলে এনেছে আইপিএলের মঞ্চে।
কিন্তু ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে যা যা করার দরকার ছিল, সেসব করতে যে খরচের প্রয়োজন, সেটা ছিল মনোজের পরিবারের সাধ্যের বাইরে। তাঁর বাবার স্থায়ী কোনো পেশা ছিল না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজ করেছেন।
টানাটানির সংসারে তাই ভাঙতে হয় সঞ্চয়, বিক্রি করতে হয় গয়না, নিতে হয় ঋণ। প্রয়োজনে বাড়তি কাজও করেছেন কার্তিকের পরিবারের সদস্যরা। কার্তিকের অনুশীলনের জন্য একসময় বোলিং মেশিন আর নেট বসাতে পরিবারকে জমিও বেচতে হয়েছে। এর মধ্যে হয় চুরিও। খেলার সরঞ্জাম চুরি হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নেট।
স্বপ্নপূরণে বাবার লড়াইটা খুব কাছ থেকে দেখেছেন কার্তিক। সে কারণেই সম্প্রচারক যতীন সাপ্রুর সঙ্গে আলাপচারিতায় বাবার ঋণ পরিশোধের কথা বলেছেন ১৯ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার। আইপিএলের পারিশ্রমিক দিয়ে কী করবেন—সেই প্রশ্নের উত্তরে কার্তিক বলেছেন, ‘আমি প্রথমেই বাবার ২৬ লাখ রুপি ঋণ শোধ করব।’
ডানহাতি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ছক্কা মারায় বিশেষ পারদর্শী। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ৮টি, লিস্ট এ ম্যাচ ৯টি, আর সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ১২টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর সেঞ্চুরি ৩টি, লিস্ট এ–তে ২টি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ফিফটি দুটি। সব মিলিয়ে টি–টোয়েন্টিতে ১১ ইনিংস ব্যাট করে ছক্কা মেরেছেন ২৮টি। স্ট্রাইক রেটে ১৬২.৯২।
রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন কার্তিক। রাজস্থানের হয়ে গত মৌসুমে বিজয় হাজারে ট্রফিতে ৮ ইনিংসে ৪৪৫ রান করেছিলেন। এটি ছিল এই দলটির ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এ ছাড়া ২০২৪ সালে শেরে পাঞ্জাব টি-টোয়েন্টি লিগে ১০ ম্যাচে ১৬৮ স্ট্রাইক রেটে ৪৫৭ রান করেছিলেন। বোঝাই যাচ্ছে, ছক্কা যেমন মারতে পারেন, বড় ইনিংসও খেলতে পারেন কার্তিক।
সে কারণেই তাঁকে পেতে মোটা অঙ্ক খরচ করেছে চেন্নাইয়ের মতো দল। নিলামের পুরো ঘটনা অবিশ্বাস্য লেগেছে কার্তিকের কাছে। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে কার্তিক বলেছেন, ‘আমি এতটাই খুশি ছিলাম যে শেষ পর্যন্ত কেঁদে ফেলি। আমার বিডিং শুরু হওয়ার সময় খুব ভয় লাগছিল, মনে হচ্ছিল, হয়তো আজ আমাকে নেবে না। কিন্তু বিডিং শুরু হতেই সেটা থামছিল না, একের পর এক চলতেই থাকল। সেই মুহূর্তে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। বিডিং শেষ হওয়ার পরও আমি কাঁদছিলাম। সবাই নাচছিল, আর আমি কাঁদছিলাম। আমি এতটাই খুশি ছিলাম।’