মোটর মেকানিক নয়, হকির রাজা হতে চায় রহমান

হকিস্টিক হাতে মোটর মেকানিক রহমান হোসেন। কাল মওলানা ভাসানি স্টেডিয়ামে। ছবি: প্রথম আলো।
হকিস্টিক হাতে মোটর মেকানিক রহমান হোসেন। কাল মওলানা ভাসানি স্টেডিয়ামে। ছবি: প্রথম আলো।

ফরিদপুরের টেপাখোলা ফিলিং স্টেশনের পাশে একটি মোটর গ্যারাজ। সেখানেই কাজ করে রহমান হোসেন। বয়স জিজ্ঞেস করলে চুপ করে থাকে। এলাকায় ‘রোহান’ নামে পরিচিত রহমান বিগড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল সারাইয়ে ইদানীং হাত পাকাচ্ছে। কাজটা সে ভালোই করে। আরও একটা কাজ সে খুব ভালো পারে—সেটি হকি খেলা।

এতটাই ভালো পারে যে রহমান হোসেন ফরিদপুর পুলিশ লাইন স্কুলের হয়ে জাতীয় স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ পেয়ে গেছে। মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের নীল টার্ফে রহমানের স্টিক ওয়ার্ক এরই মধ্যে সবার নজর কেড়েছে।

বাবা নাঈম হোসেন তিন বছর আগে মারা গেছে। তাঁর ক্যানসার হয়েছিল। অভাবের সংসারে মা শিল্পী খাতুন রীতিমতো চোখে আঁধার দেখছিলেন। পুলিশ লাইন স্কুলে পড়া ছেলেকে পাঠিয়ে দেন মোটর গ্যারাজে। স্কুলের পাশাপাশি গ্যারাজে কাজ করে সে মাকে সংসার টানতে সহায়তা করে চলেছে। মাও ফরিদপুরে একটি দর্জির দোকানে সেলাইয়ের কাজ করছেন। মা-ছেলে মিলে কোনো রকমে টেনেটুনে চলছে জীবনের চাকা।

রহমানের মনটা সারাক্ষণ পড়ে থাকে পাশের হালিমা উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানেই যে ওর বয়সী সব কিশোর হকির অনুশীলন করে। রহমান কাজের ফাঁকে সময় পেলেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হকি খেলা দেখত। রহমানকে একদিন দেখতে পান ফরিদপুর পুলিশ লাইনস স্কুলের কোচ আবদুস সালাম দেওয়ান। রহমানের খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে নিয়ে আসেন হকি মাঠে। ধীরে ধীরে অনুশীলনে ভালো করতে শুরু করে এই কিশোর। এভাবেই এবার জায়গা করে নিয়েছে জাতীয় স্কুল হকি টুর্নামেন্টে।

পুলিশ লাইনস স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়লেও মোটর গ্যারাজে কাজের জন্য রহমানের নিয়মিত স্কুলে যাওয়া হয় না। শুধু পরীক্ষার সময় গ্যারাজ থেকে ছুটি নেয়। আর মাঝে মধ্যে গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসে স্কুলে। হকি খেলেই সংসারের হাল ধরতে চায় রহমান, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে টানাটানি বেড়ে গিয়েছিল। আম্মু আমাকে এরপর মোটর গ্যারাজে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এই কাজ আমার ভালো লাগে না। আমি হকি খেলতে চাই। শুনেছি হকি খেলে চয়ন ভাই (সাবেক অধিনায়ক মাহমুদুর রহমান) সরকারি চাকরি পেয়েছেন। আমিও স্বপ্ন দেখি জাতীয় দলে খেলার।’

সারা দিন গ্যারাজে কাজ করে হকির অনুশীলন করাটা কষ্টের। তবে কোচ সকালে অনুশীলনের সূচি রেখেছেন বলে সুবিধা হয়েছে রহমানের, ‘ আমার কাজ শুরু হয় সকাল নয়টা থেকে। তবে আমি অনুশীলনের জন্য ভোর সাড়ে ছয়টায় মাঠে চলে যাই। নয়টা পর্যন্ত টানা অনুশীলন করে সোজা চলে আসি কাজে।’

রহমানের খেলায় মুগ্ধ কোচ আবদুস সালাম, ‘ওর হাতের কাজ বেশ ভালো। তবে আরও কিছু বেসিক বিষয় শিখতে হবে। ভালোভাবে পরিচর্যা করলে ও বেশি বেশি খেলার সুযোগ দিলে ছেলেটা ভালো খেলোয়াড় হবে।’

মোটর গ্যারাজে নয়, এই বয়সে হকির নীল টার্ফেই ব্যস্ত থাকতে চায় রহমান।