ক্রীড়াঙ্গনে যৌন হয়রানি: হাইকোর্টের নীতিমালা মানছে না ফেডারেশনগুলো
জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম সম্প্রতি নারী দলের সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিসিবি। তবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে মানা হচ্ছে না নারীদের যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা করতে হাইকোর্টের নীতিমালাই।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নীতিমালা অনুযায়ী, নিয়োগকর্তা ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের যৌন হয়রানি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে পাঁচ সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি গঠনের নির্দেশনা আছে তাতে, যার অধিকাংশ সদস্য হবেন নারী। হয়রানির শিকার হওয়া খেলোয়াড়েরা কমিটির কাছে অভিযোগ করবেন, কমিটি অভিযোগ তদন্ত করবে।
কিন্তু ক্রিকেট ও ফুটবলের মতো বড় ফেডারেশনসহ বাংলাদেশের ৫৩টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের কোনোটিতেই নেই অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি। ফেডারেশনগুলোর গঠনতন্ত্রেও এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা নেই।
কোনো অভিযোগ উঠলে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন তা তদন্ত করে, কখনো কখনো শাস্তিও হয়। তবে সেটি নিয়মিত প্রক্রিয়া নয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘বিসিবিতে নতুন মানবসম্পদ কাঠামো হচ্ছে। তাতে সরকারি নিয়মে সবকিছুই থাকবে।’
সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে সাঁতারে। সম্প্রতি সাঁতারের এক সংগঠককে এ ধরনের অপরাধে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে এক নারী সাঁতারুর আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্তে ফেডারেশনের কোনো কমিটি নেই। অভিযোগ এলে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করি। সম্প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছি।’
অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম জানিয়েছেন, অভিযোগ কমিটি নেই তাদেরও। কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ সোহাগ বলেছেন, ‘নারী খেলোয়াড়দের সুরক্ষায় কমিটি করা নিয়ে কাবাডি ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রে কিছু বলা নেই। আমার জানা মতে কোনো ফেডারেশনেই কমিটি নেই।’
অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি গঠনের বিষয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ফেডারেশনগুলোকে কখনো নির্দেশনা দিয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান বলেন, ‘এমন কিছু আমার জানা নেই।’
তবে জানা গেছে, এনএসসি থেকে ফেডারেশনগুলোতে কখনোই এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাঠানো হয়নি। ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের সুরক্ষা না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় কামরুন নাহার ডানা, ‘মেয়েদের সুরক্ষায় কমিটি গঠন দূরের কথা, ফেডারেশনের কমিটিতেও মেয়েদের বলতে গেলে নেওয়া হয় না।’
ওদিকে গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘কমিটির কার্যক্রমে পরিপূর্ণ পেশাদারত্ব, নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিতের স্বার্থে যৌন হয়রানির মতো বিশেষ ক্ষেত্রে অভিযোগ তদন্তের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন অন্তত দুজন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞকে তদন্ত কমিটিতে যুক্ত করতে হবে।’