রেকর্ডময় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নতুন ইতিহাস
৭ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও শেষ ৫ ওভারের ঝড়ে ২১২ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফোবি লিচফিল্ডের রেকর্ড ছোঁয়া ফিফটি নর্থ সিডনি ওভালে স্বাগতিকদের বানিয়ে দিয়েছিল পরিষ্কার ফেবারিট। এমনিতেও আগের ১৪ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছিল মাত্র একবার। কিন্তু হেইলি ম্যাথুস, স্টাফানি টেলররা ভেবেছিলেন অন্য কিছু। অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ডের জবাব রেকর্ড দিয়েই দিলেন তাঁরা। ১ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটের জয়ে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নতুন ইতিহাস লিখেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এর আগে কখনোই ২০০ রান করেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেখানে ২১৩ রানের লক্ষ্যে ১১ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। ম্যাথুস ও টেলরের জুটি এরপর অস্ট্রেলিয়াকে শুধু হতাশই করে গেছে। দুজন দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ১৭৪ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি এটি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে প্রথম ১৫০ পেরোনো জুটি।
তাতে বড় অবদানটা ম্যাথুসের। ১৯তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৬৪ বলে তিনি করেন ১৩২ রান। ঠিক আগের ম্যাচেই ৯৯ রানে অপরাজিত থাকা ম্যাথুস আজ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৫৭ বলে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ১৩২ রানের ইনিংসে ২০টি চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা মেরেছেন ম্যাথুস। এক ইনিংসে তাঁর চেয়ে বেশি চার মেরেছেন ৫ জন। ম্যাথুসের ইনিংসটি শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে নয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। রান তাড়ায় যেকোনো দলের হয়েই ম্যাথুসের ইনিংসটিই এখন সর্বোচ্চ।
টেলর ফিরেছিলেন আগেই, তবে ম্যাথুস আউট হওয়ার আগে টানা ৪ বলে চার মেরে নিশ্চিত করেন জয় নাগালে নিয়ে আসা। শেষ ৭ বলে ক্যারিবীয়দের দরকার ছিল ৯ রান, সে জয় তারা পায় ১৯.৫ ওভারের মধ্যেই। ফলে এ ম্যাচে হয়েছে মোট ৪২৫ রান। মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে যেটি নতুন রেকর্ড। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড ও ভারতের ৩৯৭ রান। ব্র্যাবোর্নে সে দিন ভারতের দেওয়া ১৯৯ রানের লক্ষ্য পেরিয়েছিল ইংল্যান্ড, যেটি হয়ে ছিল সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভেঙেছে সেটিই।
অথচ এর আগে আলোচনায় ছিল লিচফিল্ডের ইনিংস। ছয়ে নেমে তিনি করেন ১৯ বলে ৫২ রান, ফিফটি পান ১৮ বলেই। মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে সোফি ডিভাইনের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন তিনি।
ইনিংসের প্রথম বলে অ্যালিসা হিলি, দ্বিতীয় ওভারে তালিয়া ম্যাকগ্রা ফেরার পর মিডল অর্ডারে এলিস পেরির ৪৬ বলে ৭০ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ভালো একটা ভিতই পায় অস্ট্রেলিয়া। তবে ১৭তম ওভারে অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড যখন ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে আউট হন, তখনো অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ১৪৬ রান। এরপরই ওঠে ঝড়। লিচফিল্ডের সঙ্গে জর্জিয়া ওয়ারেহামের (১৩ বলে ৩২) জুটিতে ২২ বলেই ওঠে ৬৬ রান। শেষ ৫ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৮৮ রান, বল বাই বল ডেটা থাকা ম্যাচে যেটি সর্বোচ্চ। কিন্তু আজ যে ম্যাথুস ম্লান করে দেবেন সব কিছু!
১৩২ রানের ইনিংসের আগে বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন ম্যাথুস। মেয়েদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এ কীর্তি গড়লেন তিনি। ম্যাচসেরা বেছে নিতেও তাই নির্বাচকদের ভাবতে হয়নি একেবারেই। ম্যাথুস এ নিয়ে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হলেন টানা সপ্তম ম্যাচে!