বাবার পথে ছেলেও ‘একাই এক শ’
‘ক্যারিং দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংস।’
কথাটা খটমটে লাগছে? কথ্য বাংলায় অর্থটা হতে পারে, একাই এক শ। মার্জিত বাংলায়, ইনিংসের আদ্যন্ত ব্যাটিং। অর্থাৎ ইনিংস ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা, যা একজন ওপেনারের কাছে স্বপ্ন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪৮ বছরের ইতিহাসে সেই স্বপ্নপূরণ হতে দেখা গেছে ৭৩ বার। মোট ৬৫ জন ব্যাটসম্যান এই স্বপ্নপূরণের দেখা পেয়েছেন। এর মধ্যে ৬ ব্যাটসম্যান ইনিংসে আদ্যন্ত ব্যাট করেছেন একাধিকবার—সব কটিই টেস্টে। দুবার করে আদ্যন্ত ব্যাট করেছেন চারজন—বিল উডফুল, লেন হাটন, গ্লেন টার্নার ও বিল লরি। তিনবার করে দুজন—ডেসমন্ড হেইন্স ও ডিন এলগার।
তবে ৬৫ জন ব্যাটসম্যানের এই তালিকায় এমন দুজন আছেন, যাঁরা একটি দিক বিচারে আলাদা। সম্পর্কে তাঁরা বাবা–ছেলে। পাকিস্তানের নজর মোহাম্মদ ও মুদাসসর নজর। আচ্ছা বলুন তো, টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে প্রথম বলটি মোকাবিলা করেছিলেন কে? পাকিস্তানের হয়ে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিই–বা কার? ঠিক ধরেছেন, মুদাসসর নজরের বাবা নজর মোহাম্মদের।
পাকিস্তানের হয়ে ৫ টেস্ট খেলা প্রয়াত নজরের টেস্ট সেঞ্চুরি একটি। সেটাই আবার ইনিংসের আদ্যন্ত ব্যাটিং করে পাকিস্তানের হয়ে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট সিরিজে দিল্লিতে দেশের হয়ে এই সংস্করণে প্রথম বলটি খেলার পর লক্ষ্মৌতে পরের টেস্টে সেঞ্চুরি করেন ওপেনার নজর। ম্যাটিং উইকেটে ৮ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট ব্যাট করে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন ১২৪ রানে। ম্যাচটি ইনিংস ও ৪৩ রানে জিতেছিল পাকিস্তান। ১৯৯৬ সালে মারা যাওয়া নজরের প্রসঙ্গ যেহেতু উঠলই, তাঁর বিষয়ে আরও দু–একটি তথ্য জানানো যায়। নজরের ভাই ফিরোজ নিজামি পাকিস্তানের কিংবদন্তি সুরকার।
ভারতের বিপক্ষে সেই পাঁচ ম্যাচের সিরিজের পর হাতে চোট পাওয়ায় নজরের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। তবে সেটা নিয়ে মুখরোচক এবং বিখ্যাত একটি গল্পও আছে। পাকিস্তানের কিংবদন্তি গায়িকা প্রয়াত নুরজাহানের বাসার জানালা দিয়ে লাফিয়ে বের হওয়ার সময় নাকি হাতে চোট পেয়েছিলেন নজর। নুরজাহানের স্বামী সিনেমার প্রযোজক শওকত হোসেন রিজভি বাসায় গিয়ে তাঁদের একসঙ্গে দেখে ফেলেছিলেন। স্থানীয় সংবাদপত্রে তখন গুঞ্জন ছিল, নুরজাহানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে নজরের।
সে যা–ই হোক, নজরের ছেলে মুদাসসর নজর পাকিস্তান ক্রিকেটে কিংবদন্তিদের একজন। তাঁর ভাই মুবাশির নজরও ক্রিকেটার ছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। পেস অলরাউন্ডার মুদাসসরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ৭৬ টেস্ট ও ১২২ ওয়ানডের। ওয়ানডেতে না থাকলেও টেস্টে সেঞ্চুরি আছে ১০টি। এর মধ্যে চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরিটি বাবা ও ছেলেকে মিলিয়ে দেয় একই মোহনায় এবং সেই মোহনার নাম আগেই বলা হয়েছে—ইনিংসের আদ্যন্ত ব্যাটিং।
নজরের সেই আদ্যন্ত ব্যাটিংয়ের ৩১ বছর পর ১৯৮৩ সালে লাহোর টেস্টে পাকিস্তানের হয়ে প্রথম ইনিংসে ওপেন করতে নেমে অপরাজিত ১৫২ রান করেন মুদাসসর। ৮ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ব্যাট করে মুদাসসর ইনিংসটি খেলার পর এমন একটি রেকর্ড হয়ে যায়, যা আজও অটুট। বাবা–ছেলে দুজনেরই ইনিংসের আদ্যন্ত ব্যাট করার ঘটনা এই একটিই।
প্রশ্ন হলো, হুট করে কেন বাবা–ছেলের এই আদ্যন্ত ব্যাটিংয়ের গল্প বলা? কারণ, মুদাসসর। তাঁর আদ্যন্ত ব্যাট করার ম্যাচটি শুরু হয়েছিল সে বছরের ২৩ জানুয়ারি। সেদিন প্রথম দিনে ৯৯ রানে অপরাজিত থাকার পর দ্বিতীয় দিনে মানে আজকের এই দিনে (২৪ জানুয়ারি) সেঞ্চুরি করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন মুদাসসর।