ওয়ার্নের এই গল্পগুলো হয়তো আপনি জানতেন না

স্পিন জাদুকর শেন ওয়ার্নের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। অকালেই পৃথিবী ছাড়া সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার কম স্মৃতি রেখেছে যাননি। তাঁর ক্রিকেটীয় কীর্তি-গাথা তো সবারই জানা। মাঠ ও মাঠের বাইরেও বর্ণিল শেন ওয়ার্নের জীবনের এমন কিছু তথ্য, যার বেশির ভাগই হয়তো আপনি জানতেন না।

প্রয়াত স্পিন–জাদুকর শেন ওয়ার্নরয়টার্স

বয়স ৪০ পেরিয়ে যাওয়ার পরই ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন শেন ওয়ার্নের বাবা জেসন। কেন জানেন, ইস্ট স্যান্ড্রিংহাম বয়েজ ক্রিকেট ক্লাবে ছেলের সঙ্গে খেলতে।

ইস্ট স্যান্ড্রিংহাম বয়েজ ক্রিকেট ক্লাবে থাকার সময় ওয়ার্ন বলটাকে পিচে জায়গামতো ফেলতেই হিমশিম খেতেন। সে সময় বল করার চেয়ে ব্যাটিং করাটাই বেশি পছন্দের ছিল ওয়ার্নের।

গত শতকের আশির দশকে বেশ বাজে সময় যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া দলের। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টসে ক্রিকেট বিভাগ চালু করে। ১৯৯০ সালে সেই ইনস্টিটিউটের ছাত্র হিসেবে যোগ দেন ওয়ার্ন।

ওই ইনস্টিটিউটে থাকার সময় ড্যামিয়েন মার্টিন ও জাস্টিন ল্যাঙ্গারের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ওয়ার্নের। সতীর্থদের বর্ণনায় সে সময়ের ওয়ার্ন ছিলেন এমন—‘ফ্যামিলি সাইজ পিৎজা ও ভিক্টোরিয়া বিটার বিয়ারের ক্যান নিয়ে বসে থাকা স্থূলকায় এক ছেলে।’

সেই ইনস্টিটিউট বা একাডেমিতে থাকার সময় বাজে আচরণের জন্য কুখ্যাতি পেয়ে গিয়েছিলেন ওয়ার্ন। বেশ কয়েকবারই বহিষ্কার হওয়ার খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন।

ফ্লিপার নামের কঠিন কৌশলটি ওই একাডেমিতেই ওয়ার্নকে শিখিয়েছেন ক্রিকেট প্রোগ্রামের অন্যতম ম্যানেজার জ্যাক পটার।

গুরু–শিষ্য টেরি জেনার ও শেন ওয়ার্ন
ইনস্টাগ্রাম

সেই একাডেমিতে গুরু টেরি জেনারের সঙ্গে শেন ওয়ার্নের যখন প্রথম পরিচয়, তার কিছুদিন আগেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বেশ কয়েক বছর জেল খেটে বের হয়েছেন জেনার। এক ইন্সট্রাক্টরকে গালি দেওয়ায় সেই সময়ে ওয়ার্নের ওপর বহিষ্কারের খাঁড়া ঝুলছিল। জেনার এসেই বদলে দিলেন ওয়ার্নকে। কিছুদিনের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া ‘বি’ দলের সঙ্গে জিম্বাবুয়ে সফরে গেলেন ওয়ার্ন। এরপর মাত্র সাতটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞতা নিয়েই ১৯৯২ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়ে যায় ওয়ার্নের।

ভারতের বিপক্ষে সিডনিতে অভিষেক টেস্ট খেলার সময় ওয়ার্নের ওজন ছিল ৯৭ কেজি।

আরও পড়ুন

ওই বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যখন বল হাতে পেলেন, টেস্ট ক্যারিয়ারে ৯৩ ওভারে ৩৪৬ রান দিয়ে মাত্র ১ উইকেট ওয়ার্নের। শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে ১৫০ রান তোলার পর বল হাতে পাওয়া ওয়ার্ন তুলে নেন শেষ ৩ উইকেট। পরের গল্পটা তো জানাই।

১০

১৯৯৩ সালে মাইক গ্যাটিংকে করা বল অব দ্য সেঞ্চুরিতে আউট করার আগে সেই সফরে একটি বলও করেননি ওয়ার্ন।

১১

একবার ট্রেন্ট ব্রিজে রবার্ট ক্রফট ওয়ার্নকে ছক্কা মেরে বড়া পর্দায় সেটির রিপ্লে দেখছিলেন। বিরক্ত ওয়ার্ন ক্রফটকে বলে ‘চিন্তা কোরো না, কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার রিপ্লে দেখতে হবে তোমাকে।’ সত্যি হয়েছিল তা, ক্রফটকে আউট করেন ওয়ার্ন। বড় পর্দায় রিপ্লে দেখানো হয় এরপর।

১২

একবার বলেকয়েই নিউজিল্যান্ডের অ্যান্ড্রু জোন্সকে এলবিডব্লু করেছিলেন ওয়ার্ন। বল করার আগে আম্পায়ার স্টিভ ডানকে ওয়ার্ন বলেন, ‘এবারই হবে।’

আরও পড়ুন
১৩

স্লেজিং করাকেও শিল্প বানিয়ে ফেলেছিলেন ওয়ার্ন। ক্রিস কেয়ার্নসকে ব্যাটিংয়ে নামলেই খোঁড়াতে শুরু করতেন, কেয়ার্নস যে বারবার চোটে পড়েন সেটিই মনে করিয়ে দিতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ড্যারিল কালিনানকে ‘কাউচের (সোফা) কী রং ছিল’ সেটি জিজ্ঞেস করতেন। ওয়ার্নের বল খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়া কালিনান ক্রীড়া মনোবিদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন, এমনটা শোনার পর থেকেই কালিনানকে জ্বালিয়ে মারেন। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ব্রায়ান ম্যাকমিলানকে দেপারদিয়ু (অভিনেতা), নাসের হুসেইনকে সাদ্দাম ও গ্রাহাম গুচকে মিস্টার গুচ ডাকতেন ওয়ার্ন।

১৪

একবার সৌরভ গাঙ্গুলী হাফ ভলি বলও রক্ষণাত্মকভাবে খেলার পর ওয়ার্ন অন্য পাশে শচীন টেন্ডুলকারকে দেখিয়ে সৌরভকে বলেন, ‘মানুষ এই লোকটার স্ট্রোক দেখতে এসেছে, তোমার ব্লক দেখতে নয়।’ এরপরই সৌরভ সামনে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে যান।

বল করছেন শেন ওয়ার্ন, তাঁর সবচেয়ে পরিচিত ছবি তো এটাই
রয়টার্স
১৫

লেগ স্পিন করতে গিয়ে আঙুল ও কাঁধের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছিলেন ওয়ার্ন। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ডান হাতের মধ্যমার গিট ফুলে এমন হয়েছিল যে ইনজেকশন নিয়ে ব্যথা ও ফোলা কমিয়ে খেলতে হয়েছিল তাঁকে।

১৬

১৯৯৪ সালে শ্রীলঙ্কায় সিঙ্গার ওয়ার্ল্ড সিরিজ চলাকালে ওবেরয় হোটেলে মুকেশ গুপ্ত নামের এক বাজিকরের সঙ্গে দেখা হয় মার্ক ওয়াহ ও ওয়ার্নের। মার্ক ওয়াহ চার হাজার ডলারের বিনিময়ে পরের ম্যাচের উইকেট ও আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য দেন সেই বাজিকরকে। ওয়ার্নকেও ‘খুশি’ হয়ে পাঁচ হাজার ডলার দিয়েছিলেন সেই বাজিকর। অবশ্য এ ঘটনা জানাজানির পর পুরো টাকাটাই জরিমানা দিতে হয় ওয়ার্নকে।

আরও পড়ুন
১৭

২০০০ সালে মাতাল অবস্থায় ডোনা রাইট নামের এক নার্সকে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে বিপদে পড়েন ওয়ার্ন। সেই খবর ফাঁস হওয়ার পর ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মিরর শিরোনাম দিয়েছিল ‘শেম ওয়ার্ন’।

১৯৯৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফি হাতে অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ (বাঁয়ে) ও মার্ক ওয়াহর সঙ্গে শেন ওয়ার্ন
রয়টার্স
১৮

সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো ছিল না ওয়ার্নের। ‘শেন ওয়ার্নস সেঞ্চুরি’তে যাঁদের সঙ্গে খেলেছেন, তাঁদের ক্রম করতে গিয়ে স্টিভ ওয়াহকে ২৬ নম্বরে রাখেন। কারণ, হিসেবে স্টিভ ওয়াহর ঝুঁকি না নেওয়ার মানসিকতার কথা বলেন ওয়ার্ন। স্টিভ ওয়াহও কম যাননি, নিজের বই ‘আউট অব মাই কমফোর্ট জোন’–এ ওয়ার্নকে বিরক্তিকর চরিত্র বলে উল্লেখ করেছেন।

১৯

২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরে শেন ওয়ার্নের অধিনায়কত্বেই চ্যাম্পিয়ন হয় রাজস্থান রয়্যালস। ওয়ার্নের অধিনায়কত্ব এতটাই প্রশংসিত হয়েছিল যে অনেকেই সে সময়ে বলেন অস্ট্রেলিয়ার দুর্ভাগ্য শেন ওয়ার্নের মতো অধিনায়ককে পায়নি।

রাজস্থান রয়্যালসকে আইপিএল জেতাতে বড় ভূমিকা ছিল অধিনায়ক শেন ওয়ার্নের
এএফপি
২০

২০১১ বিশ্বকাপে ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ‘আমার ভবিষ্যদ্বাণী, ম্যাচ টাই হবে’ লিখে টুইট করেন ওয়ার্ন। হয়েছিলও তা–ই। এই ঘটনার পর ফক্স স্পোর্টস শিরোনাম করে ‘জিনিয়াস না ম্যাচ ফিক্সার?’

আরও পড়ুন