যে প্রশ্নের উত্তর নেই নুরুলের কাছেও

অস্ট্রেলিয়ায় টপ এন্ড টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়ক নুরুল হাসানপ্রথম আলো

‘অনেক কিছু হতে পারত, অনেক কিছুই থাকতে পারত…’ কথাটা বলে নুরুল হাসান যেন দ্রুত সরে যেতে চাইলেন প্রসঙ্গ থেকে। বছর তিনেক আগেও টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পুরোনো প্রজন্ম পেরিয়ে বাংলাদেশ খুঁজছিল নতুন কাউকে। ক্যারিয়ারে তখন রঙিন সময় নুরুলেরও। অথচ ছয় মাস পর ছিটকে যান টি–টোয়েন্টি দল থেকেই। এরপর এখন পর্যন্ত আর ফেরা হয়নি।

এই বাস্তবতা নুরুল মেনে নিয়েছেন সহজ এক ভাবনায়, ‘উত্থান–পতন তো জীবনেরই অংশ।’ দুই বছর ধরে জাতীয় দলে তিনি নেই কোনো সংস্করণেই। তবে এই পরিস্থিতিতেও নিজেকে হারিয়ে যেতে দেননি একটা মন্ত্র মেনে। কাল প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে সে কথাই বলেছেন তিনি, ‘যেখানে যতটুকু খেলছি, সব সময় চাই নিজের জায়গা থেকে সেরাটা দিতে আর দলের জন্য অবদান রাখতে। হয়তো কখনো সফল হই, কখনো ব্যর্থ—কিন্তু সততা আর পরিশ্রম দিয়ে কতটুকু চেষ্টা করছি, এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুন

নুরুলের চেষ্টার প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সেও। গত প্রিমিয়ার লিগে ১১ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি আর সমান ফিফটিতে ৫৮ গড় আর ৯৩.৫৫ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৫১২ রান করে। গত মে মাসে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে তিনটি পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচের একটিতে করেন সেঞ্চুরি, তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন চার দিনের ম্যাচেও।

এশিয়া কাপ টি–টোয়েন্টি ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা খুঁজে নিতে ‘এ’ দলের আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজটাকে কাজে লাগাতে চাইবেন নুরুল। কিন্তু দলে ফেরাটা যে সহজ নয়, সেটি কি আর তাঁর অজানা! টি–টোয়েন্টি দলে থিতু দুজন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। লিটন দাস তো অধিনায়কই, জাকের আলী দলের অন্যতম সেরা পারফরমার। এই বাস্তবতা মেনেই বললেন, ‘সব মানুষের জীবনেই চ্যালেঞ্জ থাকে। কে কতটা উপভোগ করছে, সামলে নিচ্ছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার জীবনেও দেখবেন, ১০টা জিনিস চেয়ে সব পাননি।’

‘এ’ দলের অধিনায়ক হিসেবে টস করছেন নুরুল হাসান
বিসিবি

এসব নিয়ে ভেবে তাই সামনে এগোনোর পথটা আর কঠিন করতে চান না তিনি। জাতীয় দলে ফেরা প্রসঙ্গে একাধিকবার তাঁর মনোভাব জানতে চেয়েও তাই নির্দিষ্ট কিছু পাওয়া গেল না। বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বরং একধরনের মৌনতাই অবলম্বন করলেন, ‘এসব চিন্তা করলে আমার চলার পথটা মসৃণ হবে না। তাই আমি চিন্তা করতে চাই না। যেখানে আল্লাহ রিজিক রেখেছেন, ওই অনুযায়ীই চলতে চাই।’

ব্যাটসম্যান হিসেবে নুরুল আক্রমণাত্মক, উইকেটকিপার হিসেবেও দেশের সেরাদের একজনই মনে করো হয় তাঁকে। জাতীয় দলে তবু কেন জায়গাটা পাকা করতে পারলেন না? নুরুল এড়িয়ে গেলেন এ প্রসঙ্গও, ‘আপনি চাইলে বাদ দেওয়ার এক হাজারটা কারণ দিতে পারবেন, দলে রাখার কারণও বলতে পারবেন এক হাজারটা। এগুলো নিয়ে কথা বললে নিজের সন্তুষ্টির জায়গা বলে আর কিছু থাকবে না।’

তবে সব অনিশ্চয়তা পেরিয়ে আবার যদি কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হয়, কী লক্ষ্য থাকবে ১১টি টেস্ট, ৭টি ওয়ানডে আর ৪৬ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা নুরুল হাসানের? তাঁর সোজা উত্তর, ‘যে সংস্করণেই খেলি, দল কোন জায়গায় খেলাচ্ছে, কী চাচ্ছে এটাই আসল।’

গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুর রাইডার্সেরও অধিনায়ক ছিলেন নুরুল
প্রথম আলো

অবশ্য জাতীয় দল নয়, নুরুলের কাছে আপাতত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৯ আগস্ট থেকে শুরু বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অস্ট্রেলিয়া সফর। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘এ’ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় ৭ দলের টপ এন্ড টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আর একটি চার দিনের ম্যাচেও ‘এ’ দলের নেতৃত্বে তিনিই থাকবেন।

ভিন্ন কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জের মধ্যেও নুরুল এই সফরে দেখেন সম্ভাবনা, ‘যেহেতু সব কটি দলই ভালো। চ্যালেঞ্জের মধ্যে ভালো পারফরম করার সুযোগ থাকবে সবার জন্য।’ অধিনায়ক হিসেবে দলের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধার কাজটা ভালোই পারেন নুরুল। ‘এ’ দলকে নেতৃত্ব দেওয়াটা তাই তাঁর কাছে কঠিন কিছু হওয়ার কথা নয়। তবে খেলাটা অস্ট্রেলিয়ায় বলেই চ্যালেঞ্জটা বেশি। তার ওপর ব্যক্তিগত একটা লক্ষ্য তো থাকবেই।

আরও পড়ুন

জাতীয় দলে ফেরার প্রসঙ্গে যতই নিশ্চুপ থাকুন, ৩২ বছর বয়সেই নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আশা ছেড়ে দেননি লড়াকু নুরুল। ‘এ’ দলের অধিনায়ক মানে তো সেই লক্ষ্য পূরণে আর একটা ধাপই বাকি। অস্ট্রেলিয়ায় যদি নিজের সর্বোচ্চটা নিংড়ে দিতে পারেন, কে জানে আবার হয়তো সামনে খুলবে জাতীয় দলের দরজা। বর্তমান বাস্তবতায় সেটা অবশ্যই কঠিন, মনে হতে পারে অসম্ভবও। কিন্তু খেলাটা ক্রিকেট এবং খেলোয়াড়ের নাম নুরুল হাসান বলেই সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।