২২ গজে শচীন টেন্ডুলকার–গ্লেন ম্যাকগ্রার দ্বৈরথ ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে নস্টালজিয়া হয়ে আছে, বিশেষ করে ৯০–এর দশকে জন্ম নেওয়া প্রজন্মের কাছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেন্ডুলকারকে ১৩ বার আউট করেছেন ম্যাকগ্রা। ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সর্বকালের অন্যতম সেরা পেসারকেও কম ভোগাননি; তাঁর ৪০০ বল থেকে নিয়েছেন ৩০০ রান, মেরেছেন ৪৭টি চার। দুজনের মধ্যে স্লেজিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।
সেসব অনেক পুরোনো হলেও ২৬ বছর আগের এক আউট ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কটা এখনো রয়েই গেছে। ১৯৯৯ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে ম্যাকগ্রার একটি বল টেন্ডুলকারের কাঁধে লাগলেও এলবিডব্লু দেন অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার ড্যারিল হার্পার, ক্রিকেট বিশ্বে যা ‘শোল্ডার বিফোর উইকেট’ নামে পরিচিত।
এত বছর পর সেই আউটটা আবার আলোচনায় এসেছে একটি বিজ্ঞাপনের কারণে, যে বিজ্ঞাপনে টেন্ডুলকার–ম্যাকগ্রাই হয়েছেন মডেল!
ডক্টর আগারওয়ালস চক্ষু হাসপাতালের ৪৫ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনটি গতকাল থেকে প্রচার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তা আলোচনার ঝড় তুলেছে, চলছে রসিকতাও।
বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, টেন্ডুলকার ও ম্যাকগ্রা একই ফ্লাইটে কোথাও যাচ্ছেন। বিমানে দুজন কাছাকাছি দূরত্বে বসে আছেন। সেখানেই হঠাৎ দেখা হয় তাঁদের। কিন্তু ম্যাকগ্রা টেন্ডুলকারকে ডাকলে টেন্ডুলকার অন্য দিকে তাকান।
ম্যাকগ্রা বুঝতে পারেন, ২৬ বছর আগে অ্যাডিলেডের সেই আউটের ঘটনা এখনো ভুলতে পারেননি টেন্ডুলকার। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি তাই টেন্ডুলকারকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি অ্যাডিলেডের সেই ঘটনা নিয়ে এখনো রেগে আছো?’ টেন্ডুলকারের উত্তর, ‘আমি (সেদিন) আউট ছিলাম না, সেটা তুমিও জানো।’
ম্যাকগ্রা তখন তাঁর মুঠোফোন বের করে সেই ভিডিও দেখান এবং দাবি করেন, সেটা আউট ছিল। কিন্তু টেন্ডুলকারের দাবি, ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বল স্টাম্পে লাগত না, তাই সেটা কোনোভাবেই আউট হতে পারে না। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ তর্কাতর্কি হয়।
এরপর টেন্ডুলকার বলেন, ‘আমার মনে হয় তোমার চোখ পরীক্ষা করানো দরকার।’ ম্যাকগ্রা বলেন, ‘আমার চোখ একদম ঠিক আছে, ওকে!’
ঠিক এমন সময় এক নারী যাত্রী ম্যাকগ্রার পাশে এসে বলেন, ‘মাফ করবেন, এই আসনটা আমার।’ পরে দেখা যায়, সেই নারী ঠিকই বলেছেন। বিমানে ম্যাকগ্রার আসন নম্বর ছিল 3B। কিন্তু ভুলে তিনি বসে পড়েছেন 3D-তে। মানে, ওই নারীর আসনে।
তখন টেন্ডুলকার বলেন, ‘আমি কখন থেকে তাকে চোখ পরীক্ষা করাতে বলছি।’
এরপর ম্যাকগ্রা টেন্ডুলকারের সঙ্গে ডক্টর আগারওয়ালস চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে তাঁর চোখ পরীক্ষা করান।
টেন্ডুলকারও নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের ভিডিওটি পোস্ট করেছেন। তা দেখে ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতির জানালা খুলে যায়।
এক ভক্ত লিখেছেন, ‘দুই কিংবদন্তি! একজন বলের জাদুকর, আরেকজন ব্যাটের।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘ম্যাকগ্রা ও শচীন, আপনারা আমাদের অনেক স্মৃতি উপহার দিয়েছেন।’
তবে কেউ কেউ মজা করে লিখেছেন, এই বিজ্ঞাপনে আম্পায়ার স্টিভ বাকনরের থাকা উচিত ছিল। কেন, তা কারও অজানা নয়। টেন্ডুলকারকে একাধিকবার ভুল আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার বাকনর।
ব্যাটসম্যানের জীবনে নিজের উইকেটের চেয়ে প্রিয় আর কীই–বা থাকে! কিন্তু বাকনরের ভুলে টেন্ডুলকারকে দুবার আউট না হয়েও ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয়েছে। সেসব ঘটনা তিনি এখনো ভুলতে পারেননি।
মাস তিনেক আগে এই আম্পায়ারের একটি ভুল আকার–ইঙ্গিতে মনেও করিয়ে দিয়েছেন টেন্ডুলকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরির মালিক গত নভেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। সেখানে ব্যাটিং স্টান্স নিয়ে দাঁড়ানো ছিলেন তিনি। পেছনে বড় বড় তিনটি গাছ, যেগুলোকে তিনটি লম্বা স্টাম্প বিবেচনা করেছেন টেন্ডুলকার।
ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘কেউ অনুমান করতে পারেন, কোন আম্পায়ার স্টাম্পকে এত বড় মনে করতেন?’
বাকনর–টেন্ডুলকারের সেই ঘটনাটি ২০০৩ সালে ব্রিসবেনের গ্যাবায়। অস্ট্রেলিয়ান পেসার জেসন গিলেস্পির বল টেন্ডুলকারের প্যাডে লাগে। তবে বলটি বেশ ওপরে উঠেছিল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, বল স্টাম্পের ওপর দিয়েই যাবে। তবে গিলেস্পি আবেদন করার পর কিছুটা সময় নিয়ে তর্জনী তুলে দেন বাকনর। ওই ঘটনাকে তখনই ‘ভয়ানক সিদ্ধান্ত’ বলেছিলেন ধারাভাষ্যকার টনি গ্রেগ।
কে জানে, ভারতের বিজ্ঞাপনজগতে অদূর ভবিষ্যতে টেন্ডুলকার–ম্যাকগ্রার মতো টেন্ডুলকার–বাকনরও দেখা যায় কি না!