মুশফিকের অভিজ্ঞতা ও নাজমুলের নেতৃত্বে শিরোপায় চোখ রাজশাহীর

প্রথম আলো

দরজায় কড়া নাড়ছে বিপিএল। নানা শঙ্কা, আলোচনা আর সমালোচনা পেছনে ফেলে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে মাঠের লড়াই। দলগুলোও কয়েক দিন ধরে অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে নিজেদের মতো করে। আজ-কালের মধ্যেই যোগ দিতে শুরু করবেন বিদেশি ক্রিকেটাররাও।

বিপিএল শুরুর আগে দলগুলোর শক্তি আর দুর্বলতা খোঁজার চেষ্টা এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনে।

আজকের দল: রাজশাহী ওয়ারিয়র্স

শক্তি: বিধ্বংসী টপ অর্ডার ও অভিজ্ঞতা

অভিজ্ঞতা আর তারুণ্য, ব্যাটিং আর বোলিং—সব মিলিয়ে এই টুর্নামেন্টের অন্যতম ভারসাম্যপূর্ণ দল রাজশাহী ওয়ারিয়র্স। নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে নবাগত এই ফ্র্যাঞ্চাইজি এবার শিরোপার বড় দাবিদারও। দলটির সবচেয়ে বড় শক্তি নিঃসন্দেহে ব্যাটিং আর অভিজ্ঞতা।

নামগুলোই তার প্রমাণ। ওপেনার তানজিদ হাসান এ বছরই এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান ও ছক্কার রেকর্ড গড়েছেন। ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৭ ম্যাচে ১৩৫.৫২ স্ট্রাইক রেটে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭৭৫ রান। তানজিদের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধনে সম্ভাব্য সঙ্গী পাকিস্তানের সাহিবজাদা ফারহান। তিনিও এ বছর পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান করেছেন। ২০২৫ সালে এই সংস্করণে ২৬ ম্যাচে ১৩৩.৬২ স্ট্রাইক রেটে তাঁর রান ৭৭১।

রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন
বিসিবি

ওপেনিংয়ে বিকল্প হিসেবে আছেন জিশান আলমও। মারমুখী ব্যাটিংয়ের জন্য আলাদা পরিচিতি আছে তাঁর। টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৯২। তবে সর্বশেষ বিপিএলে দুর্দান্ত রাজশাহীর হয়ে ৯ ম্যাচে ১২৮ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি, কোনো ফিফটিও ছিল না। এবার এই তরুণের কাছেই ঝোড়ো শুরু চাইবে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

অভিজ্ঞতার ভান্ডার বাড়াতে দলে আনা হয়েছে মুশফিকুর রহিমকে। নিলামের একেবারে শেষ দিকে তাঁকে পায় রাজশাহী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাদা বলে এখন না থাকলেও জাতীয় দলের তিন সংস্করণেই অধিনায়কত্ব করা এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার প্রায় দুই দশকের। বিপিএল, ঢাকা, সিলেট আর চট্টগ্রামের উইকেট—সবই তাঁর খুব চেনা। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এ অভিজ্ঞতাই কাজে লাগাতে চায় দলটি।

মিডল অর্ডারে আকবর আলী ও ইয়াসির আলীর সঙ্গে আছেন ছন্দে থাকা পাকিস্তানের মোহাম্মদ নেওয়াজ। মুশফিক যদি উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন, তাহলে আকবরকে কোথায় খেলানো হবে—টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এটাও বড় প্রশ্ন। সর্বশেষ এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে ৮ ম্যাচে ২২২ রান করা আকবরের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাননি তরুণ অধিনায়ক।

স্পিন বিভাগেও রাজশাহী বেশ শক্ত। নেপালের তারকা লেগ স্পিনার সন্দীপ লামিচানে আছেন। আছেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ নেওয়াজ। সঙ্গে বাংলাদেশের হাসান মুরাদ ও মেহরব হোসেন। বাংলাদেশের কন্ডিশনে নেওয়াজ দলটির জন্য বিশেষভাবে কার্যকর হয়ে উঠতে পারেন।

দুর্বলতা: অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণ

ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতার ছড়াছড়ি থাকলেও বোলিংয়ে বিশেষ করে পেস বিভাগে কিছুটা নড়বড়ে রাজশাহী। বড় ভরসা একমাত্র তানজিম হাসান। তাঁর সঙ্গী হিসেবে আছেন রিপন মণ্ডল, আব্দুল গাফফার ও রবিউল হক।

অনভিজ্ঞ বোলিং লাইন আপে বড় ভরসা হতে পারেন আব্দুল গাফফার
রাজশাহী ওয়ারিয়র্স

রিপন ও গাফফার সর্বশেষ রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপে আলো ছড়িয়েছেন। রিপন এই টুর্নামেন্টে একের পর এক ইয়র্কার দিয়ে আলোটিত হয়েছেন।

বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ৫ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকও ছিলেন রিপন। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালের সুপার ওভারে তাঁর বোলিংও ছিল চোখে পড়ার মতো।

আব্দুল গাফফার ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৫ উইকেট। স্লোয়ারের কারণে আলাদা করে নজর কেড়েছেন তিনি। বিপিএলে ১১ ম্যাচে ৯ উইকেট আছে রবিউল হকের।

তবে সমস্যাটা হলো ধারাবাহিকতা। তানজিম ছাড়া অন্যরা এখনো নিয়মিতভাবে শীর্ষ পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। গতির দিক থেকেও কেউ খুব আলাদা নন। এই জায়গাতেই ভুগতে পারে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স।

নজর রাখতে পারেন

রিপন মণ্ডল

‘রাইজিং স্টারস’ এশিয়া কাপে ৫ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে আলো ছড়িয়েছেন। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তাঁর সেই সুপার ওভারের বোলিং ভোলার মতো নয়। একের পর এক নিখুঁত ইয়র্কার করার সামর্থ্য তাঁকে এবার আলাদা করে চেনাতে পারে।

পেস বোলিং কোচ তারেক আজিজের সঙ্গে রিপন মণ্ডল
রাজশাহী ওয়ারিয়র্স

মেহরব হোসেন

মিডল অর্ডারে ঝোড়ো ব্যাটিং আর কার্যকর অফ স্পিন—মেহরব হতে পারেন দলের তুরুপের তাস। ভারতের ‘এ’ দলের বিপক্ষে তাঁর ১৮ বলে ৪৮ রানের সেই বিধ্বংসী ইনিংসই বলে দেয়, সুযোগ পেলে তিনি কী করতে পারেন।

রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের স্কোয়াড:
অধিনায়ক: নাজমুল হোসেন
স্থানীয় ক্রিকেটার: মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন, তানজিদ হাসান , তানজিম হাসান, ইয়াসির আলী, আকবর আলী, রিপন মণ্ডল, জিশান আলম, হাসান মুরাদ, আব্দুল গাফফার, মেহরব হোসেন, রবিউল হক, ওয়াসি সিদ্দিকী, সাকিব হোসেন শুভ্র , মোহাম্মদ রুবেল
বিদেশি ক্রিকেটার: মোহাম্মদ নাওয়াজ, বিনুরা ফার্নান্দো, হোসেন তালাত, সন্দীপ লামিচানে, জাহানবাদ খান, সাহিবজাদা ফারহান

আরও পড়ুন