ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকায় সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত, প্রতিবাদে সাক্ষাৎকার দিলেন না উসমান খাজা
বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে গতকাল শুরু হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ–অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্ট। দিনের খেলা শেষে উসমান খাজার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার রেডিও স্টেশন এসইএন। তবে সংবাদমাধ্যমটির মাইক্রোফোন দেখে কথা বলতে রাজি হননি ৩৮ বছর বয়সী ওপেনার।
এসইএনকে সাক্ষাৎকার দিতে খাজার অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনাকে সাংবাদিক পিটার লালোরের সমর্থনে এক ধরনের নীরব প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার কারণে গত ফেব্রুয়ারিতে লালোরকে চাকরিচ্যুত করে রেডিও স্টেশনটি।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলের হামলার সময় থেকেই ফিলিস্তিনের পক্ষে সরব উসমান খাজা। গাজায় চলমান সংকটের কঠোর নিন্দা জানিয়ে আসছেন তিনি। সে বছরই পাকিস্তানের বিপক্ষে পার্থ টেস্টে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের স্লোগানসংবলিত জুতা পরে খেলতে চেয়েছিলেন খাজা। জুতায় লেখা ছিল ‘স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার’ ও ‘সবার জীবনই গুরুত্বপূর্ণ’।
কিন্তু বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক’ হিসেবে বিবেচনা করে তাঁকে স্লোগানসংবলিত লেখা নিয়ে খেলার অনুমতি দেয়নি আইসিসি। সেই ম্যাচ চলাকালে তাঁকে কালো বাহুবন্ধনী পরে থাকতেও দেখা যায়। এতে আইসিসি তাঁর বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে এবং ন্যূনতম শাস্তি হিসেবে ভর্ৎসনা করে।
অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক পিটার লালোর দীর্ঘ সময় এসইএনে ধারাভাষ্যকার ও উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া দলের শ্রীলঙ্কা সফরের সময় লালোর গাজার অবরুদ্ধ ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইসরায়েলের বর্বরতার সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন এবং লেখেন, ‘নিরস্ত্র–নিরীহ মানুষদের হত্যার পর আমি শান্ত থাকতে পারি না। আমি নিজেকে একজন সহানুভূতিশীল মানুষ মনে করি। নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হলে অথবা তাদের মুত্যুর মুখে ঠেলে দিলে আমি তাদের পক্ষেই দাঁড়াব।’
লালোরের এই পোস্টকে অস্ট্রেলিয়ার ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য পীড়াদায়ক দাবি করে তাঁকে ছাঁটাই করে এসইএন কর্তৃপক্ষ। লালোর চাকরি হারানোর পর প্রকাশ্যে তাঁর পক্ষে কথা বলেন উসমান খাজা, ‘গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানে ইহুদিবিদ্বেষ নয় এবং এর সঙ্গে আমার অস্ট্রেলিয়ার ইহুদি ভাই-বোনদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই প্রতিবাদ শুধু ইসরায়েলি সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে।’
এবার এসইএনকে সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে খাজা আরেক দফা সাংবাদিক লালোরের পাশে দাঁড়ালেন। ব্রিজটাউন টেস্টে কাল প্রথম দিনের খেলা শেষে এসইএনের ধারাভাষ্যকার ভরত সুন্দরেসান ও অ্যাডাম কলিন্স খাজার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। তাঁদের কাছে থাকা মাইক্রোফোনে খাজা এসইএনের লোগো দেখে হাত তুলে অস্বীকৃতি জানান এবং চুপচাপ হেঁটে চলে যান। ঘটনাটির ব্যাপারে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি।
লালোর বর্তমানে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন এবং ব্রিজটাউন টেস্ট কাভার করছেন। খাজার এই প্রতিবাদকে তিনি সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘উসমান একজন নীতিবান মানুষ। (এসইএন থেকে) বরখাস্ত হওয়ার পর আমার প্রতি তাঁর সমর্থন খুব মূল্যবান মনে হয়েছিল। এখনো আমার পাশে থাকায় তাঁর প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।’
খাজার এই নীরব প্রতিবাদ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের দায়িত্ব এবং ক্রীড়াবিদদের মানবিক ইস্যুতে অবস্থান নেওয়ার অধিকারকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
ব্রিজটাউন টেস্টের প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১৮০ রানে গুটিয়ে গেলেও খাজা দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন। দ্রুত ৩ উইকেট পড়ার পর ট্রাভিস হেডের সঙ্গে ৮৯ রানের জুটি গড়েন এই ওপেনার। শামার জোসেফের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ৪৭ রান।
বল হাতে অস্ট্রেলিয়াও ভালোই জবাব দিয়েছে। স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে ৫৭ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করেছে; সফরকারীদের চেয়ে পিছিয়ে আছে ১২৩ রানে।