রেকর্ডের জন্মই ভেঙে যাওয়ার জন্য—কথাটা নিশ্চয়ই শুনেছেন। তারপরও কিছু রেকর্ড আছে, যেসবের গায়ে অমরত্বের সিল দিয়ে দেওয়া যায়। কোনো দিনই যা ভাঙবে বলে বিশ্বাস হতে চায় না। এই লেখার বিষয় শুধুই টেস্ট ক্রিকেট। কোনো দিনই হয়তো ভাঙবে না, এমন রেকর্ডের তালিকা থেকে লেখকের ব্যক্তিগত পছন্দে বেছে নেওয়া ১০টি রেকর্ড—
১. ডন ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড়
ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিস্ময় বলতে হবে এটিকেই। ৫০–এর ওপরে ব্যাটিং গড়ই যেখানে খুব ভালো ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি এনে দেয়, সেখানে ব্র্যাডম্যানের গড় এর প্রায় দ্বিগুণ! ৫২তম ও শেষ টেস্টটা খেলতে নেমেছিলেন ১০১.৩৯ ব্যাটিং গড় নিয়ে। ৪ রান করলেই ঠিক ১০০ গড় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে পারতেন। ইংলিশ লেগ স্পিনার এরিক হলিসের গুগলিতে বোল্ড হয়ে যাওয়ায় যা হয়ে যায় ৯৯.৯৪—ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত সংখ্যা। অঙ্কটা কেমন অবিশ্বাস্য, তা আরেকটু বুঝতে এই রেকর্ডে ব্র্যাডম্যানের নিকটতম ব্যাটিং গড় দেখলেই চলছে।
কমপক্ষে ২০ ইনিংস খেলেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে ব্র্যাডম্যানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় ৬২.৩১। শ্রীলঙ্কার কামিন্দু মেন্ডিস অবশ্য খেলেছেন মাত্র ১২টি টেস্ট, কাজেই এই গড় ধরে রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ মাত্রই শুরু। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম ভোজেস ২০ ম্যাচ খেলে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৬১.৮৭ গড় নিয়ে। এই দুজনের আগমনের আগে অনেক বছর ব্র্যাডম্যানের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম পোলক (২৩ টেস্টে ৬০.৯৭) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জ হেডলির (২২ টেস্টে ৬০.৮৩)। এই পাঁচজনের বাইরে কমপক্ষে ২০ ইনিংস খেলে ৬০–এর বেশি ব্যাটিং গড় আছে শুধু ইংল্যান্ডের হার্বার্ট সাটক্লিফের (৫৪ টেস্টে ৬০.৭৩)।
২. জিম লেকারের ম্যাচে ১৯ উইকেট
ইনিংসের ১০ উইকেট একাই নিয়ে নেওয়ার প্রথম কীর্তিটা তাঁর। এই রেকর্ড কোনো দিন ভাঙবে কি না, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে অনেক দিন। নির্দিষ্ট করে বললে প্রায় ৪৩ বছর। ইংলিশ অফ স্পিনার জিম লেকারের কীর্তিটা ছিল ১৯৫৬ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দিল্লিতে যেটির পুনরাবৃত্তি করেন ভারতীয় লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে। এর ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে মুম্বাইয়ে লেকার–কুম্বলের পাশে বসে যান নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলও।
তবে লেকারের যে রেকর্ড হয়তো কোনো দিন ভাঙবে না বলা হচ্ছে, সেটিকে মোটেই চোখ রাঙাতে পারেননি কুম্বলে বা প্যাটেল। অন্য ইনিংসে ৪ উইকেট করে নেওয়ায় ম্যাচে তাঁদের ১৪ উইকেট। যেখানে জিম লেকার দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার আগেই প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন। লেকারের ম্যাচে ১৯ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি কখনোই হুমকির মুখে পড়েনি। এই রেকর্ডে দ্বিতীয় নামটি ইংল্যান্ডের সিডনি বার্নসের। লেকার আসলে তাঁর রেকর্ডই ভেঙেছিলেন (১৯১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে ১৭ উইকেট)। এক ম্যাচে ১৬ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে তিনজনের—বব ম্যাসি, নরেন্দ্র হিরওয়ানি ও মুত্তিয়া মুরালিধরনের। এর মধ্যে প্রথম দুজনের টেস্ট অভিষেকেই।
৩. এক সিরিজে ব্র্যাডম্যানের ৯৭৪ রান
১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৮ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। এর পর থেকেই ব্র্যাডম্যানের ব্যাটে রানের ফল্গুধারা। দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ১৩১। পরের ৫টি ইনিংসের ৩টিতেও সেঞ্চুরি—যার ২টি ডাবল ও ১টি ট্রিপল। সব মিলিয়ে ১৩৯.১৪ গড়ে ৯৭৪ রান। এরপর কেটে গেছে ৯৫ বছর। এই রেকর্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি কেউ। ব্র্যাডম্যান ভেঙেছিলেন ইংল্যান্ডের ওয়ালি হ্যামন্ডের রেকর্ড। অস্ট্রেলিয়ায় আগের মৌসুমেই যিনি করেছিলেন ৯০৫ রান। টেস্ট ক্রিকেটে এক সিরিজে ৯০০–এর বেশি রান করার কীর্তি শুধু এই দুজনেরই।
সিরিজে কোনো ব্যাটসম্যানের ৮০০–এর বেশি রান করার ঘটনা আছে আরও সাতবার। সেই তালিকায় চোখ বোলালে আপনি আরও দুবার ডন ব্র্যাডম্যানের নাম পাবেন। বাকি পাঁচজনের নাম কি জানতে ইচ্ছা করছে? মার্ক টেলর, নিল হার্ভি, ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইড ওয়ালকট ও গ্যারি সোবার্স। অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ওপেনার মার্ক টেলরের কীর্তিটা সাম্প্রতিকতম, তবে সেটিও সেই ১৯৮৯ সালে। এক সিরিজে আট শতাধিক রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র তাঁরটাই ছিল ৬ টেস্টের সিরিজ। সবচেয়ে বেশি ১১টি ইনিংসও তিনিই খেলেছেন।
৪. এক সিরিজে সিডনি বার্নসের ৪৯ উইকেট
টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো রেকর্ডের একটি। ১৯১৩–১৪ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ফাস্ট মিডিয়াম বোলার সিডনি বার্নসের ৪ টেস্টে ৪৯ উইকেট অবিশ্বাস্য ১০.৬৩ গড়ে। ৮ ইনিংসে বোলিং করে ৭ ইনিংসেই নিয়েছিলেন ৫ বা এর বেশি উইকেট। চার টেস্টের ৩টিতেই ১০ বা এর বেশি। সিরিজে ৪৯ উইকেটের রেকর্ডই কেউ ভাঙতে পারছেন না, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে সিরিজের শেষ টেস্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে না নিলে সংখ্যাটা যে কোথায় যেত!
চতুর্থ টেস্টেও তো নিয়েছিলেন সাত–সাত ১৪ উইকেট। সেটিই হয়ে থাকে অনেকের মতেই সর্বকালের সেরা বোলারের (২৭ টেস্টে ১৮৯ উইকেট এই দাবির কারণ কিছুটা বুঝিয়ে দেয়) শেষ টেস্ট। এই রেকর্ড ভাঙার খুব কাছাকাছি অবশ্য একজন চলে গিয়েছিলেন। ১৯৫৬ অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের অফ স্পিনার জিম লেকার নিয়েছিলেন ৪৬ উইকেট। এক টেস্ট সিরিজে ৪০ বা এর বেশি উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে আরও ৬টি। তবে এর বেশির ভাগই ছিল ৬ টেস্টের সিরিজ। সবচেয়ে সাম্প্রতিক ২০০৫ অ্যাশেজ সিরিজে শেন ওয়ার্নের ৪০ উইকেট নেওয়ার ঘটনা অবশ্য ৫ টেস্টের সিরিজেই।
৫. টেন্ডুলকারের ২০০ টেস্ট
১৯৮৯ সালে প্রথম টেস্ট, শেষ টেস্ট ২০১৩ সালে। দুই যুগের ক্যারিয়ারে খেলেছেন মোট ৬৬৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ, এর মধ্যে টেস্ট ম্যাচই ২০০টি। দুটিই রেকর্ড এবং দুটিই হয়তো কোনো দিনই ভাঙবে না। শুধু টেস্টেই যদি থাকি, জেনে একটু বিস্ময়ই জাগবে, টেন্ডুলকারের রেকর্ডকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন এক পেস বোলার।
ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন অবশ্য থেমে গেছেন ১৮৮ টেস্ট খেলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো ক্রিয়াশীল ক্রিকেটারের মধ্যে দেড় শর বেশি টেস্ট খেলেছেন একমাত্র জো রুট। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ট্রেন্টব্রিজ টেস্টটি ছিল ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানের ১৫৩তম। এখনো দারুণ ফিট, ফর্মেও আছেন। টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙে দেবেন কি না, এই আলোচনাও হয়। তবে আরও ৪৭টি টেস্ট খেলে টেন্ডুলকারের ২০০ টেস্ট খেলার রেকর্ড ছোঁয়া জো রুটের পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
৬ . ব্রায়ান লারার এক ইনিংসে অপরাজিত ৪০০
রেকর্ডটা গ্যারি সোবার্সের কাছে ছিল প্রায় ৩৬ বছর। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরের রেকর্ড। সোবার্সের অপরাজিত ৩৬৫ রানের রেকর্ড ভেঙে ব্রায়ান লারা করেছিলেন ৩৭৫। ৯ বছর পর যে রেকর্ড ভেঙে দেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ওপেনার ম্যাথু হেইডেন। অবিশ্বাস্যভাবে ছয় মাসের মধ্যেই যা আবার পুনরুদ্ধার করেন ব্রায়ান লারা।
এই যে সাড়ে ৯ বছর সময়ের মধ্যে তিন বাঁহাতির মধ্যে রেকর্ডের হাতবদল, সেই রেকর্ড কেন কোনো দিনই হয়তো ভাঙবে না বলা হচ্ছে? রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য—এই আপ্তবাক্য মানলে ভাঙতে তো পারেই। তবে সেই সম্ভাবনা একেবারেই কম। কারণ, ব্রায়ান লারা রেকর্ডটিকে এমন এক শৃঙ্গে নিয়ে গেছেন, যেখানে আর কারও কখনো পা পড়েনি। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ভেঙেছেন ৪০০ রানের ব্যারিয়ার, যেখানে এটিকে ধরেও টেস্টে সাড়ে তিন শ ছাড়ানো স্কোরই আছে মাত্র ৬টি। যার একটিই ২০০৪ সালে লারার রেকর্ড গড়ার পরে (২০০৬ সালে মাহেলা জয়াবর্ধনের ৩৭৪)।
৭. মুত্তিয়া মুরালিধরনের ৮০০ উইকেট
টেস্ট ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে ৮০০ উইকেট পাবেন কি না—এই প্রশ্ন নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন শেষ টেস্ট। এক–দুই উইকেট নয়, দরকার ছিল আরও ৮ উইকেট। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে গল টেস্টে মুরালিধরন ঠিক ৮ উইকেটই পেয়েছিলেন। ‘ঠিক’ শব্দটা আবারও লেখা যায়। ঠিক ৮০০ উইকেট নিয়েই শেষ করেছিলেন টেস্ট ক্যারিয়ার। যে সংখ্যাটা দিন দিন আরও বিস্ময় জাগিয়ে যাচ্ছে।
টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডটা নিয়ে একসময় শেন ওয়ার্নের সঙ্গে মুরালির একটা মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা চলেছে। একসময় অনেকটা এগিয়ে গিয়ে শেন ওয়ার্ন রেকর্ডটিকে সঙ্গী করেই টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছেন। ওয়ার্নের তখন ৭০৮ উইকেট, মুরালির ৬৭৪। ওয়ার্ন বিদায় নেওয়ার পর খেলা ২৩ টেস্টে ১২৬ উইকেট নিয়ে রেকর্ডটিকে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন মুরালি। এই রেকর্ডে মুরালির পর এখনো ওয়ার্ন। এই দুজন ছাড়া ৭০০–এর বেশি উইকেট আছে শুধু জেমস অ্যান্ডারসনের (৭০৪)। এখনো খেলছেন, এমন বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার নাথান লায়নের। উইকেট–সংখ্যা ৫৫৩, অর্থাৎ মুরালির সঙ্গে ব্যবধান ২৪৭ উইকেটের। কী বুঝলেন?
৮. মার্ক বাউচারের ৫৫৫ টেস্ট ডিসমিসাল
সংখ্যাটা মনে রাখা খুব সহজ—৫৫৫, অর্থাৎ ট্রিপল ফাইভ। বাউচারের এই ৫৫৫ ডিসমিসালের ৫৩২টি ক্যাচ, ২৩টি স্টাম্পিং। এটা বলাও বোধ হয় খুব সহজ, দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেটকিপারের এই রেকর্ড হয়তো ভাঙবে না কোনো দিন। টেস্ট ক্রিকেট কোনো উইকেটকিপারের ৫০০ ডিসমিসাল প্রথম দেখেছে বাউচারের কল্যাণে। চার শই তো ছুঁয়েছেন আর মাত্র একজন—অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (৯৬ টেস্টে ৪১৬ ডিসমিসাল)। তালিকায় পরের চারজনের তিনজনই অস্ট্রেলিয়ান—ইয়ান হিলি (৩৯৫), রডনি মার্শ (৩৫৫) ও ব্র্যাড হাডিন (২৭০)। মার্শ ও হাডিনের মাঝে আছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (২৭৪)।
এখন খেলছেন, এমন উইকেটকিপারদের জন্য বাউচারের ডিসমিসাল–সংখ্যা ঘাড় উঁচিয়ে পাহাড় দেখার মতো। যাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল ভারতের ঋষভ পন্তের (৪৩ টেস্টে ১৬৪), তাঁর ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্স ক্যারি (৩৯ টেস্টে ১৬৩)।
৯. সাঙ্গাকারা–জয়াবর্ধনের ৬২৪ রানের জুটি
টেস্টে কোনো দল ৬২৪ রান করলেই যেখানে সেটিকে অনায়াসে ‘রানের পাহাড়’ বলে ফেলা যায়, সেখানে জুটিতে ৬২৪ রানকে কী বলবেন! অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়—চাইলে আরও কিছু। কোনো কিছুই বাড়াবাড়ি হবে না। কারণ, এত বছরের টেস্ট ইতিহাসে এক দলের সবাই মিলেই তো এর চেয়ে বেশি রান করতে পেরেছে মাত্র ১০৫ বার। কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনের এই জুটির বয়স খুব বেশি নয়, মাত্র ১৯ বছর। তবে এই রেকর্ড ভাঙাটা শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবই বলা চলে। এটা তো আর শুধু দুই ব্যাটসম্যানের ভালো ব্যাটিং করার ওপরই নির্ভর করে না, নির্ভর করে ম্যাচের অবস্থার ওপরও। এত বড় জুটি গড়ার সময়টাও তো পেতে হবে।
২০০৬ সালে কলম্বোতে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম দিন চা–বিরতির সময়ই অলআউট হয়ে যাওয়ার কারণে যা পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার এই দুই ব্যাটসম্যান। প্রথম দিনের শেষ সেশনে জুটি বেঁধেছিলেন ১৪ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর। সাঙ্গাকারা ২৮৭ রানে আউট হওয়ার মাধ্যমে দুজন বিচ্ছিন্ন হন তৃতীয় দিন লাঞ্চের পর। জয়াবর্ধনে ৩৭৪ রানে আউট হওয়ার পর ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা। টেস্টে সর্বোচ্চ জুটির আগের রেকর্ডটিও ছিল শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যানের। ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে কলম্বোতেই দ্বিতীয় উইকেটে সনাৎ জয়াসুরিয়া ও রোশান মহানামার ৫৭৬ রান এখনো টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। সেই টেস্টেই অভিষেক মাহেলা জয়াবর্ধনের, সাঙ্গাকারার টেস্ট অভিষেক হতে তখনো বছর তিনেক বাকি।
১০. অ্যালিস্টার কুকের টানা ১৫৯ টেস্ট
টেস্ট খেলেছেন মোট ১৬১টি, এর মধ্যে শেষ ১৫৯টিই টানা। যে রেকর্ডকে অমরই বলে ফেলা যায়। এই রেকর্ড ভাঙতে হলে যে অনেক কিছুই মিলতে হবে। দীর্ঘ একটা সময় ফর্মে থাকতে হবে, যাতে নির্বাচকেরা বাদ দেওয়ার কথা ভাবতেই না পারেন। শুধু ফর্মে থাকলেই তো হবে না, থাকতে হবে ইনজুরিমুক্তও। ছোটখাটো চোট–আঘাতের যন্ত্রণা সহ্য করে খেলে যাওয়ার মতো মানসিক দৃঢ়তাও। এর সবকিছুই যোগ হয়েছিল বলে এক যুগেরও বেশি ইংল্যান্ডের সব টেস্ট ম্যাচে অ্যালিস্টার কুক নামটা কমন ছিল।
২০০৬ সালের ১১ মে থেকে শুরু এই বিরতিহীন যাত্রা, যেটির শেষ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যালিস্টার কুকের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে। কুক ভেঙেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান বোর্ডারের রেকর্ড। যাঁর টানা ১৫৩ টেস্ট খেলার রেকর্ডকেও লম্বা একটা সময় ‘কোনো দিনই হয়তো ভাঙবে না’ বলে মনে করা হতো।
সংযোজন: ওপরের লাইনটা আবারও পড়ুন। অ্যালান বোর্ডারের টানা ১৫৩ টেস্ট খেলার রেকর্ডটিও কোনো দিন ভাঙবে না বলে মনে করে আসা হয়েছে অনেক বছর। তারপরও তো ভেঙেছে। ‘অমর’ এই ১০ রেকর্ডও তাই কোনো একদিন ভেঙে যেতেই পারে। কী বলছেন, ডন ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড়ও? না, কোনো দিনই তা সম্ভব নয়। অনিশ্চিত ক্রিকেটে যদি নিশ্চিত কোনো ব্যাপার থাকে, তা হলো ব্র্যাডম্যানের এই ব্যাটিং গড়ের চিরকাল রেকর্ড হয়ে থাকা। ‘হয়তো’ কথাটা তাই শুধু বাকি ৯টি রেকর্ডের জন্যই প্রযোজ্য।
