ওয়েস্ট ইন্ডিজ পারল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজই পেরেছে।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ৫৩১ রানের অসম্ভব লক্ষ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাড়া করে জিততে পারেনি। তবে তারা যা করেছে, সেটা জয়েরই সমান। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে জাস্টিন গ্রিভসের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৪৫৭ রান করে টেস্ট ড্র করেছে তারা।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ড। সর্বোচ্চ রান ইংল্যান্ডের, ১৯৩৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৫৪ রান করেছিল ইংল্যান্ড। তবে সেটা ছিল টাইমলেস টেস্ট।
অথচ তাড়া করতে নেমে মাত্র ৭২ রানেই ৪ উইকেট হারিয়েছিল এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে শাই হোপ ও জাস্টিন গ্রিভস গড়েন ১৯৬ রানের জুটি। আজ পঞ্চম ও শেষ দিন সকালে জ্যাকব ডাফির বলে ১৪০ রানে হোপ আউট হলে অনেকেই ভেবেছিলেন, এই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘হোপ’ও হয়তো শেষ। দলীয় ২৭৭ রানে ফেরেন কেভিন ইমালচও। তবে এরপর যা হয়েছে, সেটা একেবারেই অবিশ্বাস্য!
পেসার কেমার রোচকে সঙ্গে নিয়ে গ্রিভস ১৮০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন, দুজনে মিলে খেলেছেন ৪১০ বল!
এই টেস্টের আগে টেস্ট ক্যারিয়ারে ২২ ইনিংসে মাত্র ২২ গড়ে রান করা গ্রিভস অপরাজিত রইলেন ২০২ রানে। রোচ খেললেন ২৩৩ বল, রান করেছেন অপরাজিত ৬০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন গ্রিভস, সব মিলিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা সপ্তম ক্রিকেটার তিনি।
ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা—কথাটা ক্লিশে, তবে এটাই যে চিরন্তন, সেটাই এই টেস্ট তা প্রমাণ করেছে। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ১৬৭ রানে। তাও ২ উইকেটে ১০০ রান তোলার পর। সেই দলটা ২ দিনে ১৬৩.৩ ওভার ব্যাটিং করে টেস্ট ড্র করবে, সেটা আসলেই অবিশ্বাস্য। তাও আবার প্রথম ৪ উইকেট ৭২ রানে পড়ার পর!
সবচেয়ে বড় বিষয়, ১৯৩০ সালের পর চতুর্থ ইনিংসে আর এত ওভার ব্যাটিং করেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই সময়ে কত বড় বড় খেলোয়াড়ই তো এই দলটাতে খেলেছেন। তবে এমন কীর্তি গড়ল সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলই, যে দলটা নাকি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে!
গ্রিভস ও রোচ শচীন টেন্ডুলকার ও মনোজ প্রভাকরের একটি রেকর্ডও ভেঙেছেন। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সপ্তম উইকেট জুটিতে এখন সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ড গ্রিভস ও রোচের (১৮০*)। এর আগে ১৯৯০ সালের ১৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন শচীন ও মনোজ।
গ্রিভসের অবদান এই টেস্টে সবচেয়ে বেশি। কোনো সন্দেহ নেই। তবে একজন হোপের কথাও বারবার বলতে হবে। চোখে ইনফেকশন নিয়েও ১৪০ রানের ইনিংস খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক।
একটা পর্যায়ে জয়ের সমীকরণও ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে। শেষ ৩৩ ওভারে ১৩২ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের, হাতে ছিল ৪ উইকেট। এ অবস্থায় ৬ উইকেটে ৩৯৮ রানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, অসম্ভবটাও হয়তো সম্ভব। কিন্তু গ্রিভস ও রোচ সেই ঝুঁকি না নিয়ে ধৈর্য ধরে খেললেন।
নিউজিল্যান্ডের জন্য দুদিন বোলিং করে যাওয়া কঠিন ছিল। দুই মূল পেসার—ম্যাট হেনরি ও নাথান স্মিথ চোটে ছিটকে যাওয়ায় অবস্থাটা আরও খারাপ হয়। এ ছাড়া শেষ সেশনের আগেই তিনটি রিভিউ শেষ হয়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ড খুব বিপদেই পড়েছিল।
চতুর্থ ইনিংসে ৫৫ ওভার বোলিং করা স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েল তো সুযোগও তৈরি করেছিলেন। এলবিডব্লু হয়েছিলেন রোচ। তবে আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ থাকলে গল্পটা অন্য রকমও হতে পারত। তবে তা আর হয়নি। ভাগ্য ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে। আর ভাগ্য পাশে না থাকলে পাহাড়ে ওঠা যায় নাকি!
তিন ম্যাচের এই সিরিজে পরের টেস্ট শুরু হবে ১০ ডিসেম্বর ওয়েলিংটনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ২৩১ ও ৪৬৬/৮ ডিক্লেয়ার (ল্যাথাম ১৪৫, রবীন্দ্র ১৭৬, ব্রেসওয়েল ২৪, ইয়াং ২৩; রোচ ৫/৭৮, শিল্ডস ২/৭৪, সিলস ১/৭২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬৭ ও ৪৫৭/৬ (গ্রিভস ২০২, হোপ ১৪০, রোচ ৫৮; ডাফি ৩/১২২, ব্রেসওয়েল ১/১৩৮)
ফল: ড্র
ম্যাচসেরা: জাস্টিন গ্রিভস