অনেকটা একই চিত্রনাট্য। ম্যাচের আগে উত্তাপ ছড়াল নানা ঘটনাপ্রবাহ। মাঠের ভেতরে সামান্য তর্কেও জড়ালেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। কিন্তু ক্রিকেটীয় লড়াই? তা থেকে গেল একপেশেই। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নীল সমুদ্রের পালে হাওয়া লাগল ঠিকই। কিন্তু ভারত–পাকিস্তান ঐতিহ্যের ক্রিকেট রোমাঞ্চ পানসে হওয়ার বেদনাও হয়তো থেকে গেল কোথাও।
দুবাইয়ে রোববার এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে ভারতের ৬ উইকেটের জয়ে একটা নতুন ইতিহাসও লেখা হলো। শেষ ছয়টি ম্যাচেই এই লড়াইয়ে জয়ী দলের নাম ভারত। এর আগে ভারত–পাকিস্তান লড়াইয়ের ৭৪ বছরের ইতিহাসে কখনো টানা পাঁচটির বেশি ম্যাচ জিততে পারেনি কোনো দল; এবার হলো সেটাই। ৩ বছর আগে এশিয়া কাপের ম্যাচে এই দুবাইয়েই ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ জয়টা পেয়েছিল পাকিস্তান। এর পর থেকে সব ম্যাচেরই জয়ী দলের নাম ভারত। আজ তো পাকিস্তানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশ রান তাড়া করেই জিতল তারা।
ম্যাচের মাঝবিরতিতে অবশ্য মনে হচ্ছিল এবার হয়তো লড়াইটা অন্তত গ্রুপ পর্বে দুই দলের আগের ম্যাচের চেয়ে বেশি হবে। ভারতীয় ফিল্ডারদের ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার দায় তো আছেই, তবে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরাও এক সপ্তাহ আগের ম্যাচের চেয়ে ভালো করেছিলেন।
হার্দিক পান্ডিয়ার করা প্রথম ওভারেই অভিষেক শর্মা ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন সাহিবজাদা ফারহানের। পাকিস্তানের ইনিংসের পরের গল্পের মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনিই। পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে আরেকটু আত্মবিশ্বাস যোগ করেছিল জশপ্রীত বুমরার বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স।
যাঁর বিরুদ্ধে ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো কেঁপে ওঠেন, সেই বুমরা পাওয়ার প্লের তিন ওভারে দিয়েছেন ৩৪ রান। টি–টোয়েন্টি ম্যাচের পাওয়ার প্লেতে এর আগে কখনোই এত রান দেননি বুমরা। শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে উইকেটশূন্য থাকা ম্যাচে বুমরা দিয়েছেন ৪৫ রান।
বুমরার বাজে শুরুর আগেই অবশ্য ভারতকে প্রথম উইকেটটা এনে দিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা ৮ ম্যাচের সবগুলোতে উইকেট নেওয়া পান্ডিয়ার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ফখর জামান। ক্যাচটা পরিষ্কার নেওয়া হয়েছে কি না, দেখে তৃতীয় আম্পায়ার আউট দিয়েছিলেন ঠিকই, তবে তাতে অসন্তোষটা মাঠের পর বাইরে গিয়েও প্রকাশ করেছেন ফখর।
তাঁর বিদায়ের পরও পাকিস্তান যে শুরুটা পেয়েছিল, তাকে ভালো না বলে উপায় নেই। পাওয়ারপ্লের ছয় ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে রান ছিল ৫৫। কিন্তু শিবম দুবের বলে ১৭ বলে ২১ রান করে সাইম আইয়ুব ফিরতেই পথ হারাতে শুরু করে পাকিস্তান। টানা ৩৯ বল তারা আর কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেনি। ৫ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংসে ৪৫ বলে ৫৮ রান করা ফারহানই থেকেছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবু পাকিস্তানের ইনিংসটা ৫ উইকেটে ১৭১ রানে পৌঁছানোর পর একটা লড়াই হবে বলেই মনে হচ্ছিল।
কিন্তু ওই সম্ভাবনা যে খুব একটা নেই, সেই বার্তা ভারতের ইনিংসের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে বুঝিয়ে দেন অভিষেক শর্মা। পরে ভারতের উইকেট আরও পড়লেও কিন্তু ম্যাচে লড়াইয়ের আবহটা আর ফেরেনি কখনোই। সম্ভাবনার ইতি ঘটে যায় আসলে অভিষেক শর্মা আর শুভমান গিলের ৫৯ বলে ১০৫ রানের জুটিতেই।
ফাহিম আশরাফের বলে গিলের বোল্ডে যখন জুটিটা ভাঙে, ততক্ষণে বেশ দেরিই হয়ে গেছে। ২৮ বলে ৪৭ রান করে গিল ফিরেছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে ভারতের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম ২৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর ৬ চার ও ৫ ছক্কার ইনিংসে ৩৯ বলে ৭৪ রান করে আউট হয়ে যান অভিষেক শর্মাও।
পাকিস্তান উইকেট নিয়েছে আরও দুটি। কিন্তু তাতে কেবল কমেছে হারের ব্যবধানই। ৭ বল আগে পাওয়া জয়ে ভারত সুপার ফোরেও ভালো শুরু করেছে। সঙ্গে তুলে দিয়েছে একটা প্রশ্নও। বাইরে যতই উত্তাপ ছড়াক, মাঠে কি আসলেই ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের সেই রোমাঞ্চটা আর আছে? আর কখনো কি তা ফিরবে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭১/৫ (সাহিবজাদা ৫৮, সাইম ২১, নেওয়াজ ২১, ফাহিম ২০*; দুবে ২/৩৩)। ভারত: ১৮.৫ ওভারে ১৭৪/৪ (অভিষেক ৭৪, গিল ৪৭, বর্মা ৩০*; রউফ ২/২৬)। ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: অভিষেক শর্মা।