আমিনুলের চিঠিকে ‘নোংরামি’ বললেন তামিম

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ সংবাদ সম্মেলন করে বিসিবির নির্বাচনে কাউন্সিলর মনোনয়নে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছে সংগঠকদের একটি অংশ। সংবাদ সম্মেলনে ওল্ড ডিওএইচএসের কাউন্সিলর ও সাবেক ক্রিকেটার তামিম ইকবাল (বাঁ থেকে তৃতীয়) এবং ব্রাদার্সের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের (বাঁ থেকে চতুর্থ) সঙ্গে অন্যরা।আয়োজকদের সৌজন্যে

‘তিনি নাকি নির্বাচন বোঝেন না। তাহলে এমন চিঠি কীভাবে দিলেন! এই নোংরামিটা করা উচিত নয়। নির্বাচন হবে সুষ্ঠু। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।’

কথাটা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলামকে উদ্দেশ করে বলেছেন জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তাঁর এই বক্তব্যে পরিষ্কার—৬ অক্টোবরের বিসিবি নির্বাচনে তাঁরা দুজন শুধু প্রার্থীই নন, এই নির্বাচন দুজন সাবেক ক্রিকেটারের সম্পর্কটাকে তিক্ততার শেষ সীমায়ও নিয়ে যেতে পারে।

আজ বিকেলে রাজধানীর ফারস্ হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা, বিভাগ ও ক্লাব সংগঠকদের একটি পক্ষ নির্বাচনের জন্য জেলা ও বিভাগের কাউন্সিলরদের নাম পাঠানোয় সরকারি হস্তক্ষেপ ও বিসিবি সভাপতির ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। সেখানেই আমিনুলকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তামিম।

আরও পড়ুন

জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর মনোনয়নে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে দায় দেওয়া হচ্ছে আমিনুলকে। এটা অবশ্য অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’ যে শেষ মুহূর্তে মোহাম্মদ আশরাফুলের জায়গায় ঢাকা বিভাগের কাউন্সিলর হওয়া আমিনুল বিসিবির নির্বাচনে মূলত সরকারদলীয় প্রার্থীই। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সমর্থন আছে তাঁর প্রতি। পরিচালক নির্বাচিত হলে আমিনুল বিসিবির সভাপতি পদের জন্যও লড়বেন।

অন্যদিকে তামিম ইকবালকে বিএনপির প্রার্থী বলে আরও আগেই উল্লেখ করেছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলী আসগর লবী। তামিমের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও বিএনপি দলীয়দের সংশ্লিষ্টতা লক্ষণীয়। আজ যে সংবাদ সম্মেলনে বসে তিনি কাউন্সিলর মনোনয়নে অনিয়মের অভিযোগ তুললেন, সেখানেও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনসহ তামিমের আশপাশে থাকা সবার রাজনৈতিক পরিচিতি ‘বিএনপির লোক’ হিসেবে। ঘোষণা দিয়ে বলা না হলেও তাই কারও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে তামিম বিএনপির সমর্থন নিয়েই বিসিবির নির্বাচনে নেমেছেন।

এই দুই পক্ষের লড়াইয়ে নির্বাচনী বিতর্কে কেঁপে উঠছে দেশের ক্রিকেট। সংবাদ সম্মেলনে জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর ও বিসিবির সাবেক পরিচালক আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদওয়ান তাঁর লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিভিন্ন রকম চিঠি দিয়ে বিসিবির নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এটি বিসিবির গঠণতন্ত্রের পরিপন্থী।

বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম
প্রথম আলো

বিসিবির নির্বাচনের জন্য কাউন্সিলরদের নাম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর। দুই দফা সময় বাড়িয়ে তা শেষ হচ্ছে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায়। এর মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, বিসিবির কাউন্সিলর হিসেবে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে নাম প্রেরণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা যথাযথভাবে মানা হয়নি। আগের ফরম বাতিল করে তাই বিসিবি থেকে পাঠানো নতুন ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে ২২ সেপ্টেম্বর (আগামীকাল) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কাউন্সিলরের নাম পাঠাতে হবে।

আরও পড়ুন

ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া তামিম ইকবাল এর প্রতিবাদ করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলা ও বিভাগ থেকে যাঁদেরকে কাউন্সিলর করা হয়েছে, তাতে যেন পরিবর্তন না হয়। কাউন্সিলদের নাম পরিবর্তনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যখন যাকে ইচ্ছা অ্যাডহক কমিটিতে যুক্ত করা বা সরিয়ে দেওয়া—এভাবে যদি নির্বাচনটা করতে চান, তাহলে তো এটা নির্বাচন হলো না; সিলেকশন হয়ে যাচ্ছে!’

তামিমের অভিযোগ, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকেও নাকি বিসিবির নির্বাচন প্রভাবিত করা চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই অবাক হয়েছি, ক্যাবিনেট সেক্রেটারির অফিস থেকে চিঠি যাওয়া! এমন ঘটনা কোনো দিন ঘটতে শুনেছেন? এনএসসির সেক্রেটারি থেকে বিভিন্নজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, ইন্টারফেয়ার করা হয়েছে। এখানে কী কারণে সরকারের ইন্টারফেয়ার থাকবে!’

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক হিসেবে অভিযোগগুলো যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তামিমের বক্তব্য, ‘এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টার একবারই কথা হয়েছে। আমি বলেছিলাম, আমি কোনো কিছুই চাই না, একটা জিনিসই চাই—একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এরপর আর এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।’

জেলা, বিভাগ ও ক্লাব সংগঠকদের সংবাদ সম্মেলন।
আয়োজকদের সৌজন্যে

সরকার ও বিসিবির কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বিসিবির কাউন্সিলর ও সাবেক পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, গঠণতন্ত্র অমান্য করে নির্বাচন করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় থাকবে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলর ও সাবেক বিসিবি পরিচালক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর মনে করিয়ে দেন, বিসিবির নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপ আইসিসির নিষেধাজ্ঞার মতো শাস্তির মুখেও ফেলতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে।

বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম অবশ্য এসব অভিযোগের জবাবে দাবি করেছেন, গঠণতন্ত্রের বাইরে তাঁরা কিছুই করছেন না। প্রথম আলোকে তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা গঠনতন্ত্রের মধ্যেই আছি।’

আরও পড়ুন

আমিনুল বরং উল্টো দাবি করেন, বিসিবির গঠণতন্ত্রে কাউন্সিলর হওয়ার জন্য যে যোগ্যতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে, জেলা ও বিভাগ থেকে পাঠানো অনেক কাউন্সিলরেরই তা নেই, ‘এমন অনেককে কাউন্সিলর করে পাঠানো হয়েছে, যাঁরা সাবেক ক্রিকেটার বা ক্রিকেট সংগঠক নন বলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলর হওয়ার শর্ত পূরণ করেন না।’

কিন্তু আমিনুল নিজেও যেহেতু নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁর স্বাক্ষরে এ রকম চিঠি পাঠানো ঠিক হলো কি না, জানতে চাইলে সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘কাউন্সিলরদের ফরম তো সভাপতির কাছেই আসে। কাজেই এটা সভাপতির এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে।’