প্রস্তুতির সিরিজেও এখন ‘ফাইনাল’ খেলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে
দুই ম্যাচের আমিরাত সিরিজটা ছিল একধরনের গা গরমের উপলক্ষ। পাকিস্তানে টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাওয়ার পথে শারজার দুটি ম্যাচকে এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব বাংলাদেশ দল দিয়েছিল বলে মনে হয় না।
আর গা গরমের সিরিজই যেহেতু, পাকিস্তান সিরিজের স্বার্থে সেটাকে টেনে একটু লম্বা করলেই ক্ষতি কী! সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই টি–টোয়েন্টির সিরিজটা হয়ে গেল তিন টোয়েন্টির, যার শেষটি আজ।
কিন্তু শারজার আজকের শেষ ম্যাচটিকে আর কোনোভাবেই শুধু পাকিস্তান সিরিজের প্রস্তুতি ভাবার উপায় থাকছে না। পরশু দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে ২০৫ রান করেও ২ উইকেটে হেরে বাংলাদেশ এই শেষ ম্যাচটাকে ‘ফাইনাল’–এর মর্যাদা দিয়ে দিয়েছে।
যে সিরিজ হেসেখেলে জিতে পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল, এখন সেই সিরিজেই লিটন দাসের দল কঠিন পরীক্ষার মুখে। সিরিজ দুই ম্যাচেরই থাকলে তবু ড্র নিয়ে আমিরাত ছাড়া যেত। কিন্তু তিন ম্যাচের হয়ে যাওয়ায় সিরিজ জয়ের সুযোগের সমান্তরালে সিরিজ হারের ফাঁদে পড়ার শঙ্কাও জেগে উঠছে।
প্রথম ম্যাচে পারভেজ হোসেনের সেঞ্চুরির পর মোস্তাফিজুর রহমানের দুটি কার্যকর ওভার আমিরাতকে বাংলাদেশের ১৯১ রান তাড়া করে জিততে দেয়নি। কিন্তু পরের ম্যাচে ২০৫ রান তাড়া করেও তাদের জিতে যাওয়া ‘ফাইনালে’ বাংলাদেশকে দিচ্ছে অশনিসংকেত।
ঘরের মাঠে মোহাম্মদ ওয়াসিমদের ভয় ধরিয়ে দেওয়া ব্যাটিং–সামর্থ্যই বাংলাদেশের শঙ্কার বড় কারণ। এক ম্যাচ বাড়িয়ে নিয়ে কোনো কারণে টি–টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ১৫তম দল সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সিরিজটা হেরে গেলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য বড় লজ্জার।
দ্বিতীয় ম্যাচের হার সিরিজের আবহ বদলে দিলেও আমিরাতে বাংলাদেশ গিয়েছিল বিলাসী সব চিন্তা নিয়ে। পাকিস্তানে যাওয়ার আগে শারজার প্রচণ্ড গরমে অনুশীলন আর খেলার অভ্যস্ততা তৈরিই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
সঙ্গে সামর্থ্য বুঝতে ম্যাচগুলোতে সবাইকে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলানোর সুযোগ দেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। ভাবটা ছিল এমন, ‘আমিরাতের সঙ্গে এসব না করলে আর কার সঙ্গে করব!’ দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে চার পরিবর্তন সেই চিন্তা থেকেই। অবশ্য প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান পারভেজ দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেননি কুঁচকির চোটের কারণে।
তবে আজ শেষ ম্যাচে অন্য সব চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে একটাই চিন্তা—আমিরাত দল যেন অন্তত বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সিরিজ জয়ের উৎসবটা না করতে পারে। এর আগে দলটা যে চারটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছিল, তাদের মধ্যে কেবল আয়ারল্যান্ডকেই সিরিজে হারাতে পেরেছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় যে সেই জয়কে ছাপিয়ে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো।
দ্বিতীয় ম্যাচে হারের ধরন বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যাটিংয়ে ভালো শুরুর পর সংগ্রহটাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিতে না পারার সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে এক ক্যাচ তিনজন নিতে চলে গিয়ে কারও ধরতে না পারা, বাজে বোলিং, অদ্ভুত কারণে দেরিতে থ্রো করে রানআউটের সুযোগ হাতছাড়া করার সঙ্গে শেষ ওভারে ফুলটস আর ‘নো’ বল—হতাশার সঙ্গে বিস্ময়ও কম জাগায়নি।
পরশু রাতে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্সের কথায়ও ফুটে উঠেছিল তা, ‘তারা খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে, আমরাও ভালো ব্যাটিং করেছি। আমরা বেশ কিছু ক্যাচ মিস করেছি, যেটা তাদের ম্যাচে রেখেছে।’
সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চাইলে আজ আগের দুই ম্যাচের কোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি তো করা যাবেই না, বাংলাদেশকে খেলতে হবে নিজেদের সেরা ক্রিকেট। হতে পারে বাংলাদেশ দুই দলের মধ্যে বড় দল, কিন্তু আমিরাত এরই মধ্যে সেই ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা জিতেছে, প্রথম ম্যাচে হারলেও বাংলাদেশকে চোখ রাঙিয়েছে।
‘গা গরমের’ সিরিজের শেষ ম্যাচটা আমিরাতের জন্য ইতিহাস গড়ার হাতছানি। বাংলাদেশের জন্য আবার এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মর্যাদা রক্ষার লড়াই। তবে আমিরাতের চ্যালেঞ্জটাকে বাংলাদেশ চাইলে ইতিবাচকভাবেও নিতে পারে।
সিরিজে ১–১ সমতা, এমন কঠিন পরিস্থিতি থেকে সিরিজ জিততে পারলেই না পাকিস্তানে যাওয়ার আগে আত্মবিশ্বাসটা বেশি টগবগে হবে। সহজে পাওয়া সাফল্যে বরং আত্মতৃপ্তিতে ডুবে যাওয়ার ভয় থাকত। কঠিন পরিস্থিতিতে পাওয়া সাফল্যে হয় উল্টোটা। অনেক অসম্ভবকেও তখন সম্ভব বলে মনে হয়।
সমস্যা একটাই—বাংলাদেশকে এই মানসিক শক্তিটা কিনা, তা খুঁজতে হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে!