চাঁদা তুলে কেনা ব্যাট-গ্লাভস; সেই ভানুয়াতু চমকে দিল জিম্বাবুয়েকে

জিম্বাবুয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ভানুয়াতুআইসিসি

মেইলিসি কার্লোট লেগ সাইডে খেলে সিঙ্গেল নেওয়ার পর মাঠে ঢুকে পড়লেন ভানুয়াতুর ক্রিকেটাররা, কেউ জড়িয়ে নিয়েছেন লাল-সবুজ-হলুদের পতাকাটা। ভানুয়াতুর উল্লাস দেখে মনে হবে, বুঝি বিশ্বকাপটাই জেতা হয়ে গেছে তাদের। আবুধাবিতে আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে চমকে দেওয়ার আনন্দ যে দলটির কাছে বিশ্ব জয়ের সমানই!

মাত্র তিন লাখের মতো মানুষের বাস প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে। কৃষি ও পর্যটননির্ভর অর্থনীতি। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূল পর্বে খেলতে নেমেই র‍্যাঙ্কিংয়ের ৩০ নম্বর দলটি কাল আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ১২ নম্বর দল জিম্বাবুয়েকে। আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দলের বিপক্ষে এটিই ছিল ভানুয়াতুর মেয়েদের প্রথম ম্যাচ।

ভানুয়াতুর দুই স্পিনার ভানিসা ভিরা ও নাসিমানা নাভাইকা মিলেই নেন জিম্বাবুয়ের ৭ উইকেট। তাতে ১৩.৩ ওভারে নিজেদের সর্বনিম্ন ৬১ রানেই গুটিয়ে যায় আফ্রিকান দেশটি। এমনিতেও ফ্লাডলাইটে খেলার খুব একটা অভ্যাস নেই জিম্বাবুয়ের মেয়েদের, গতকাল রাতে একদমই সুবিধা করতে পারেননি তাঁরা। রান তাড়ায় ১৬.৩ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভানুয়াতু।

পুরুষ বা নারী—এবারই প্রথম ভানুয়াতুর কোনো দল খেলছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে। তবে দলটি এসেছে পূর্ব এশীয় প্রশান্ত অঞ্চলের বাছাইয়ে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়েই। গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সে টুর্নামেন্টে ছয়টি ম্যাচই জিতেছিল ভানুয়াতু, হারিয়েছিল পাপুয়া নিউগিনির (পিএনজি) মতো দলকেও। এমনিতে এ অঞ্চলে শক্তিশালী দল হিসেবে বিবেচিত পিএনজি, মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে তাদের র‍্যাঙ্কিং ১১। পিএনজির পুরুষ দল এবার খেলবে বিশ্বকাপের মূল পর্বেও।

আরও পড়ুন

আঞ্চলিক বাছাইয়ে অমন পারফরম্যান্সের পরও মূল বাছাইয়ে আসার আগে একটু উদ্ভাবনী হতে হয়েছে ভানুয়াতুর নারী দলটিকে। দলটির সদস্যদের ব্যাট, গ্লাভসের মতো কিট সাধারণত আসে চাঁদা বা অনুদান থেকে। সেগুলোও সাধারণত পুরোনো, ব্যবহৃত সরঞ্জামই হয়। ব্যাট মেরামতকারী পিটার ডাফি যেমন প্রতি বছরই ডজনখানেক এমন ব্যাট দান করেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার হানা ডার্লিংটন আদিবাসীদের সফরে গিয়ে গত বছর একটা ব্যাট দিয়ে এসেছিলেন।

এর বাইরে ভানুয়াতুর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনই তাদের খেলোয়াড়দের সরঞ্জাম কিনে দেয়। সেটি করতে হয় আইসিসির অনুদান থেকে পাওয়া অর্থ থেকে। তবে সমস্যা হলো, শুধু জাতীয় নারী দল নয়, আইসিসির অনুদান থেকে পাওয়া বার্ষিক পাঁচ লাখ মার্কিন ডলারের একটু কম অর্থ দিয়ে চালাতে হয় পুরো দেশেরই ক্রিকেট।

ঐতিহাসিক জয়ের পর ভানুয়াতু নারী ক্রিকেট দল
আইসিসি

দেশটির চারটি অঞ্চলের স্টাফ, স্কুল এবং জুনিয়র ক্রিকেটে ব্যবহৃত সরঞ্জামের বাইরে পাঁচটি নিজস্ব বা ভাড়া করা মাঠের খরচ বহন করার পাশাপাশি ওই টাকায় চালাতে হয় যেকোনো ক্রিকেট কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক সফরও। এর বাইরে আছে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের বেতন। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটা যৌথ কর্মসূচির আওতায় ভানুয়াতুর কিছু ক্রিকেটার দেশটিতে খেলা ও অনুশীলনের পাশাপাশি কাজ করারও সুযোগ পান। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে থাকা ১৫ জন নারী ক্রিকেটারের ৮ জনই যেমন গত ছয় মাস অস্ট্রেলিয়ায় করেছেন ফলমূল তোলার কাজ।

আরও পড়ুন

কিছুটা বাধ্য হয়েই তাই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলতে যাওয়া নারী দলের জন্য জনগণের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার মতো উদ্ভাবনী উপায়ের আশ্রয় নিতে হয় ভানুয়াতু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে। সাড়াও মেলে ভালোই। দলটির জন্য চাঁদা ওঠে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার ভাতু (৬ হাজার ৩১৭ ইউএস ডলার বা প্রায় ৭ লাখ টাকা)। তাতে দলের প্রতিটি সদস্য পান নতুন কিট, ব্যাট, দুই জোড়া করে গ্লাভস, প্যাড ও থাই প্যাড। এর সঙ্গে সফরে পুরো বেতনও পাবেন তাঁরা।

২০১৪ সালে জাপানে আইসিসির পূর্ব এশীয় প্রশান্ত অঞ্চলের টুর্নামেন্টে আন্তর্জাতিক অভিষেক ভানুয়াতুর, কিন্তু এভাবে কখনোই একেবারে নতুন কিট দলটির খেলোয়াড়েরা পাননি। সে হিসেবে চাঁদার টাকায় একটা মাইলফলকই হয়ে গেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ভানুয়াতু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী টিম কাটলার বলেছিলেন, ‘আমাদের মেয়েরা যেকোনো খেলায় সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্কিংধারী দল। যাতে তাদের অনেক গর্ব বলেই জানি। আমার পুরো আশা আছে, আবুধাবিতে তারা অনেক মানুষকেই চমকে দেবে।’

ভানুয়াতু চমকে দিয়েছে ঠিকই। সেটিও প্রথম ম্যাচেই।