‘এত কিছু করেও সেই তো দেড় শ!’
হতাশাটা শোনা যাচ্ছিল বাংলাদেশ ব্যাট করার পর থেকেই। আগের ম্যাচে দেড় শ রান তাড়া করে জেতা যায়নি। আজ আগে ব্যাট করেও ১৫১ রানে থেমে যাওয়ার পরই আঁচ করা যাচ্ছিল পরিণতি। একের পর এক ক্যাচ মিস আর বাজে বোলিংয়ে পর চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরেছে ৫ উইকেটে।
আর তাতে তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের সব কটিতেই ভরে ওঠা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে দর্শকদের বাড়ি ফিরতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ধবলধোলাই হওয়ার জ্বালা নিয়ে। গত বছর ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে লিটনদের কাছে ধবলধোলাই হওয়ার স্বাদটাই যেন এবার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিল ক্যারিবীয়রা। দেশের বাইরে এই প্রথম ৩–০ ব্যবধানে টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশের জন্য ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল আশাজাগানিয়া। সেটা অবশ্য বলতে গেলে প্রায় এককভাবে ওপেনার তানজিদ হাসানের সৌজন্যে। ছক্কা মারার সামর্থ্য এই ওপেনার প্রমাণ করেছেন আগেই। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দুবার নতুন জীবন পাওয়া তানজিদ আবারও দেখালেন তাঁর সামর্থ্য।
ইনিংসের অষ্টম ওভার আর দলের ৪৪ রানের মধ্যে পারভেজ হোসেন ও লিটন দাস ফিরে যাওয়ার পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাইফ হাসানের সঙ্গে ৪৩ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন তানজিদ। হাফ সেঞ্চুরি পান ৩৬ বল খেলেই। তাওহিদ হৃদয়কে পেরিয়ে হন আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম এক হাজার রান করা ব্যাটসম্যানও।
কিন্তু এসবের আনন্দ মিইয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশের পরের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ে। ২২ বলে ২৩ রান করে সাইফ হাসান আউট হতেই যেন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কে কার চেয়ে দ্রুত ড্রেসিংরুমে ফিরবেন, সেই প্রতিযোগিতাই শুরু হয়ে গেল। সাইফের পর যাঁরা উইকেটে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ রান কিনা সবার শেষে ব্যাটিংয়ে আসা তাসকিন আহমেদের!
অবশ্য সাইফ আর তানজিদ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। একসময় সেঞ্চুরির আশা জাগানো তানজিদও যেতে পারেননি তিন অঙ্কে। ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৬২ বলে ৮৯ রান করেছেন ব্যাট হাতে বছরটা দুর্দান্ত কাটানো তানজিদ। অতৃপ্তিটা নিশ্চিত আরও বেড়েছে বাংলাদেশ ৪৪ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে শেষ বলে অলআউটও হয়ে যাওয়ায়।
বাংলাদেশের জন্য ওই সময়ে কাজটা কঠিন করে দিয়েছিলেন পেসার রোমারিও শেফার্ড। ১৭তম ওভারের শেষ বলে নুরুল হাসানকে লং অনে পাওয়েলের ক্যাচ বানান। এরপর ২০তম ওভারে আবার বোলিংয়ে এসে প্রথম দুই বলেই ফেরান তানজিদ ও শরীফুলকে, পূর্ণ হয়ে যায় তাঁর হ্যাটট্রিকও। চট্টগ্রামের উইকেটে দাঁড়িয়ে যখন চাইলেই বল গ্যালারিতে পাঠানো যাচ্ছিল অবলীলায়, তানজিদ ছাড়া বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানদের জন্য সেই উইকেটই যেন হয়ে যায় দুর্বোধ্য! পরে বোলাররাও পারেননি দুর্দান্ত কিছু করে আর ম্যাচ জেতাতে।
বল হাতেও শুরুতে অবশ্য ভালো কিছু করার আশাই ছিল। ৩ ওভারে ৬ রান তুলতেই এক উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু পরে আমির জাঙ্গুর একাই দুবার জীবন পান। সাইফ হাসানের পর শরীফুলের করা চতুর্থ ওভারে তাঁর ক্যাচ ছাড়েন তাওহিদ হৃদয়ও। ২৩ বলে ৩৪ রান করে রিশাদ হোসেনের বলে যখন এলবিডব্লু হয়ে জাঙ্গু আউট হন, ততক্ষণে ম্যাচটা হেলতে শুরু করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে।
তাঁদের জন্য বাকি কাজটা সহজ করে দেন রোস্টন চেজ ও আকিম অগাস্টে।
দুজনই হাফ সেঞ্চুরি পান, তাঁদের জুটিতে ৪৬ বলে আসে ৯১ রান। রিশাদ যতক্ষণে তাঁদের দুজনকে ফেরান, ততক্ষণে বাংলাদেশের জন্য অনেক দেরিই হয়ে গেছে। হাতে ১৯ বল রেখেই শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
পুরো সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং ভুগিয়েছে বেশ। টানা ৪ সিরিজ জয়ের পর ধবলধোলাই হওয়া এই সিরিজ বাংলাদেশকে অশনিসংকেত দেখিয়েছে কিছু জায়গায়, বিশেষত মিডল অর্ডার। প্রায় সব ব্যাটসম্যানই একসঙ্গে চলে গেছেন অফ ফর্মে।