পাকিস্তান দলে ফাহিম–খুশদিল কেন, প্রশ্ন আকরাম-লতিফদের

এবারের বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলেছেন ফাহিম আশরাফ (বাঁয়ে), খুশদিল শাহ খেলেছেন রংপুর রাইডার্সেছবি: প্রথম আলো, ইনস্টাগ্রাম

আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণায় সবচেয়ে দেরি করেছে স্বাগতিক পাকিস্তান। টুর্নামেন্টের বাকি সাত দল ১৮ জানুয়ারির মধ্যে স্কোয়াড দিলেও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ঘোষণা করেছে গত ৩১ জানুয়ারি

সেই দলে চমকও আছে। এক নয়, একাধিক। সাম্প্রতিক সময়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে খুব একটা ভালো না করেও পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে জায়গা করে নিয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ, স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার খুশদিল শাহ, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সৌদ শাকিল এবং টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালের সেরা ফখর জামান। তাঁদের মধ্যে আশরাফ ও খুশদিল এবার বিপিএলে খেলেছেন।

এই চারজনকে জায়গা করে দিতে পাকিস্তানের নির্বাচকেরা বাদ দিয়েছেন আবদুল্লাহ শফিক, মোহাম্মদ ইরফান খান, সুফিয়ান মুকিম ও সাইম আইয়ুবকে। অথচ তাঁদের নিয়েই গত বছর অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল পাকিস্তান।

সর্বশেষ ২০ ম্যাচে ওর (ফাহিম আশরাফের) বোলিং গড় ১০০, ব্যাটিং গড় ৯। শুধু সে–ই নয়, খুশদিল শাহর প্যারফরম্যান্সও ভালো নয়। ওর জায়গা পাওয়া পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত
ওয়াসিম আকরাম, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক

আইয়ুবের বাদ পড়ার কারণ অবশ্য ভিন্ন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অ্যাঙ্কেলে পাওয়া চোট থেকে এখনো সেরে ওঠেননি এই ওপেনার। আর শফিক সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে টানা তিন ওয়ানডেতে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন।

চোট থেকে সেরে না ওঠায় সাইম আইয়ুবকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পাকিস্তান দলে রাখা হয়নি
ছবি: এএফপি

কিন্তু দলের জয়ে অবদান রাখার পরও ইরফান–মুকিমদের বাদ পড়া ও ফাহিম–খুশদিলদের হুটহাট দলে ঢুকে পড়াকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না ওয়াসিম আকরাম, রশিদ লতিফ ও তানভীর আহমেদের। পাকিস্তানের এই তিন সাবেক ক্রিকেটার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন। আকরামের চোখে, এটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত দল। লতিফ মনে করেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় এমন স্কোয়াড বানানো হয়েছে। আর তানভীরের মতে, তদবিরের ভিত্তিতে বানানো দলটা তামাশায় পরিণত হয়েছে।

কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএলটি২০–তে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় আছেন। সেখানে কাল এক সংবাদ সম্মেলনে ফাহিম ও খুশদিলের দলে ঢোকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ৫৮ বছর বয়সী আকরাম, ‘দেখলাম ফাহিম আশরাফকে নেওয়া হয়েছে। সে প্রতিভাবান ক্রিকেটার। আমি তাকে শুভকামনা জানাই। কিন্তু সর্বশেষ ২০ ম্যাচে ওর বোলিং গড় ১০০, ব্যাটিং গড় ৯। শুধু সে–ই নয়, খুশদিল শাহর প্যারফরম্যান্সও ভালো নয়। ওর জায়গা পাওয়া পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত।’

আরও পড়ুন

মুকিমের জায়গা না হওয়ায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পাকিস্তান দলে স্বীকৃত স্পিনার মাত্র একজন—আবরার আহমেদ। এ ব্যাপারে আকরাম বলেছেন, ‘যেখানে ভারত স্পিনারের সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে চারজন করেছে, সেখানে আমরা মাত্র একজনকে নিয়েছি। আমি নিশ্চিত, পাকিস্তানের নির্বাচকেরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবকিছু বিবেচনা করেছেন।’

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পাকিস্তান দলে একমাত্র স্বীকৃত স্পিনার আবরার আহমেদ
ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল নিয়ে রশিদ লতিফ ও তানভীর আহমেদ কথা বলেছেন টেলিকম এশিয়া স্পোর্টের সঙ্গে।

দেশটির সাবেক অধিনায়ক লতিফের দাবি, রাজনৈতিক বিবেচনায় দল নির্বাচন করা হয়েছে, ‘মনে হচ্ছে, এটা রাজনৈতিক বাছাই। ফাহিম আশরাফ সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু করেনি, যা তাকে দলে ঢোকার নিশ্চয়তা দিতে পারে। ওর রেকর্ডও আশাব্যঞ্জক নয়।’

লতিফ আরও বলেন, ‘এই স্কোয়াডে খুশদিল, ফখর জামান, সৌদ শাকিলদেরও দেখতে পাচ্ছি, যারা সর্বশেষ তিন সফরের দলে ছিল না। এখন সেরা একাদশ বেছে নেওয়ার কাজটা অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপর নির্ভর করছে, যেমনটা ১৯৯২ সালে ইমরান খান ও ২০০৯ সালে ইউনিস খান করেছিল।’

আরও পড়ুন

পাকিস্তানের হয়ে ৮ ম্যাচ খেলা তানভীরের দাবি, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিবার্চকেরা পক্ষপাতিত্ব করেছেন, ‘নিজেদের কন্ডিশনে খেলার জন্য আমরা এমন স্কোয়াড নির্বাজন করেছি, যা দেখে তামাশা মনে হচ্ছে। ভারতকে দেখুন, ওদের দলে রবীন্দ্র জাদেজা, ওয়াশিংটন সুন্দর, কুলদীপ যাদব ও অক্ষর প্যাটেলের মতো মানসম্পন্ন স্পিনার আছে। আর আমাদের? মাত্র একজন—আবরার আহমেদ।’

‘এই দলটা কারও সুপারিশ অনুযায়ী করা হয়েছে এবং এর দায় নির্বাচক কমিটিকেই নিতে হবে। সর্বশেষ তিন সফরে যারা ভালো করেছে, তাদের নিয়েই স্কোয়াড করা যেত। কোনো পরিবর্তনের দরকার ছিল না’—যোগ করেন তানভীর।

এবারের বিপিএলে বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট ফাহিম আশরাফের
ছবি: প্রথম আলো

ফাহিম আশরাফ পাকিস্তানের হয়ে তিন সংস্করণেই সর্বশেষ খেলেছেন ২০২৩ সালে। প্রায় দুই বছর পর ফাহিমকে জাতীয় দলে ফেরানোর ক্ষেত্রে নির্বাচকেরা হয়তো বিপিএলের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়েছেন। চলতি বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে দারুণ খেলেছেন ৩১ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার।

১১ ম্যাচ খেললেও ফাহিম ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন পাঁচবার, এর মধ্যে দুবার ছিলেন অপরাজিত। ৩৪ গড় ও ২৩১.৮১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১০২ রান। সর্বোচ্চ ৫৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে, দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে। ১৯৮ রান তাড়া করতে নেমে ১১২ রানে ৬ উইকেট খুইয়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল বরিশাল। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৩৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮৮ রানের জুটি গড়ে দলকে জেতান। আসরে মাত্র ৪৪ বল খেলে ১১ ছক্কা মেরেছেন ফাহিম। অর্থাৎ, প্রতি ৪ বলে একটি করে ছক্কা।

আরও পড়ুন

বোলিংয়েও ছিলেন ছন্দে। ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ২০ উইকেট, যা টুর্নামেন্টের শীর্ষ উইকেটশিকারির তালিকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে তাসকিন আহমেদ)। গত ২৬ জানুয়ারি মিরপুরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে মাত্র ৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এটিও এবারের বিপিএলে কোনো বিদেশির সেরা বোলিং, সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সেরা।

খুশদিল শাহও বিপিএলে দারুণ খেলেছেন
ছবি: প্রথম আলো

খুশদিল শাহও পাকিস্তানের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন ২০২৩ সালে। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলে যাওয়া খুশদিল ১০ ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৯৮ রান ও বল হাতে ১৭ উইকেট নেন।