ফাইনালের আগে জেনে নিন ভারত–অস্ট্রেলিয়ার শক্তি ও দুর্বলতা

আজ শুরু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালছবি: টুইটার

২২ মাসের এক লম্বা যাত্রা। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ২২ গজের কঠিন সব চ্যালেঞ্জ উতরে দুটি দলের একবিন্দুতে মিলে যাওয়া। কোথায়? ক্রিকেটের আদি ভূমি ইংল্যান্ডে। লন্ডনের ওভালে আজ শুরু হচ্ছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রের ফাইনাল। মুখোমুখি রোহিত শর্মার ভারত আর প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া।

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া সম্ভাব্য সব বড় শিরোপা জেতা হয়ে গেছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার। ২০১৯-২১ চক্রে প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। সেবার রানার্সআপ হয়েছিল ভারত আর তৃতীয় হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার তাদের সামনে একমাত্র অপ্রাপ্তি ঘোচানোর সুযোগ। রোহিত অথবা কামিন্স—শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শেষে অন্তত একজনের হাতে আগামী দুই বছরের জন্য গদাকৃতির রাজদণ্ড তো উঠবেই, এমনকি ম্যাচ ড্র কিংবা টাই হলে দুজনের দলই হয়ে যাবে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন।

ফাইনালের আগে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার শক্তিমত্তা-দুর্বলতার জায়গাগুলো নিয়ে আলোকপাত করা যাক—

আরও পড়ুন

উইকেট বিবেচনায় একাদশ সাজানো

ওভালে সাধারণত স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করা হয়ে থাকে। মানে ব্যাটসম্যান-বোলার উভয়ের জন্যই সহায়ক। রানপ্রসবা মাঠ হিসেবে ওভালের যেমন সুনাম আছে, বোলাররাও বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রথম তিন দিন ফাস্ট বোলাররা এবং আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে শেষ দুই দিন স্পিনাররা উইকেট থেকে সেরাটা আদায় করে নিতে পারেন। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাচ্ছে, রোববার টেস্টের পঞ্চম দিন লন্ডনে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে হয়তো পেসসমৃদ্ধ একাদশ সাজাবে দুই দল।

সাউদাম্পটনে প্রথম আসরের ফাইনালে ভেজা কন্ডিশনের কথা জেনেই চার ফাস্ট বোলার ও এক মিডিয়াম পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। রাখেনি কোনো স্বীকৃত স্পিনার। সিমিং কন্ডিশনের সুযোগ পুরোপুরি কাজেও লাগিয়েছিল কিউইরা। বিপরীতে ভারত এমন উইকেটেও খেলিয়েছিল ‘স্পিন টুইন’ রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজাকে। সেবার আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি অশ্বিন-জাদেজা।

অনুশীলনে ভারতীয় দল
ছবি: টুইটার

আইসিসি রিভিউ অনুষ্ঠানে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব পাওয়া নাসের হুসেইন বলেছেন, ‘আপনি যদি আগের ফাইনালের দিকে ফিরে তাকান, আমি বলব, ভারত পিচ পড়তে ভুল করেছিল। পুরো ম্যাচ ফ্লাডলাইটের আলোয় হয়েছিল। পিচ ধূসর হয়ে গিয়েছিল। আবহাওয়া খুব ঠান্ডা ছিল। এটা ভারতীয়দের দুর্দশার কারণ হয়ে উঠেছিল।’

এবার ওভালে আবহাওয়া ভালো থাকলে ও রোদ উঠলে অশ্বিন-জাদেজার সঙ্গে পেস বোলিং অলরাউন্ডার শার্দূল ঠাকুরকে খেলানো উচিত বলে মনে করেন নাসের হুসেইন, ‘ওভালে ওরা দুই পেসার-দুই স্পিনার সূত্রে ভরসা রাখতে পারে। সঙ্গে তৃতীয় পেসার হিসেবে ঠাকুরকে খেলাতে পারে।’

আরও পড়ুন

ব্যাটিং গভীরতা

অভিজ্ঞতায় দুই দলের ব্যাটিং লাইনআপের নির্দিষ্ট কাউকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ব্যাটিং গভীরতা বিষয়টি বিবেচনায় আনলেও তা–ই। ‘ফ্যাবুলাস ফোর’–এর দুজন বিরাট কোহলি আছেন ভারতে, স্টিভেন স্মিথ অস্ট্রেলিয়ায়। দুজনের কাছে দলের প্রত্যাশাও থাকবে বেশি।

ভারতীয় দলে অধিনায়ক রোহিত থেকে শুরু করে শার্দূল ঠাকুর, আবার অস্ট্রেলিয়া দলে ডেভিড ওয়ার্নার থেকে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স—দুই দলের ব্যাটিং গভীরতা অনেক। এমনকি ভারতের মোহাম্মদ শামি, অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কও দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। দ্রুত রান তুলতে পারেন।

টপ অর্ডারে ভরসার প্রতীক চেতেশ্বর পূজারার সাম্প্রতিক ফর্ম কিছুটা ভাবাতে পারে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টকে। সর্বশেষ ৫ টেস্টে ২৪.২৮ গড়ে করেছেন ১৭০ রান, ফিফটি মাত্র একটি। তবে পূজারাই ইংল্যান্ডের বর্তমান কন্ডিশন সম্পর্কে সতীর্থদের স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারেন। সবাই যখন আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, টেস্ট বিশেষজ্ঞ পূজারা তখন সাসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছেন। ১৫ মাস পর অভিজ্ঞ অজিঙ্কা রাহানের ফেরাটাও ভারতের জন্য ‘প্লাস পয়েন্ট’।

অনুশীলনে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান উসমান খাজা
ছবি: টুইটার

এদিকে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান মারনাস লাবুশেনও গ্লামরগানের হয়ে কাউন্টি খেলে হাত পাকিয়ে ফেলেছেন। কাউন্টিতে সর্বশেষ তিন ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটি আছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তাঁর অবস্থান চতুর্থ (১৫০৯)। শীর্ষ দুইয়ে থাকা সতীর্থ উসমান খাজাও (১৬০৮) আছেন ফর্মের তুঙ্গে। ভারত সফরে খেলা সর্বশেষ টেস্টে উপহার দিয়েছেন ১৮০ রানের ইনিংস। লাবুশেনের মতো স্মিথ ও মাইকেল নেসেরও এ মৌসুমে কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছেন। মিডল অর্ডারে ট্রাভিস হেড, ক্যামেরন গ্রিন ও অ্যালেক্স ক্যারিও ভরসা জোগাচ্ছেন। হেড আর গ্রিন দ্রুত রান তুলতে পারেন। দলের প্রয়োজনে বল হাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

আরও পড়ুন

তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বেশ বৈচিত্র্যময়। ব্যাটিং লাইনআপের প্রথম আটজনের মধ্যে চারজন ডানহাতি (লাবুশেন, স্মিথ, গ্রিন, কামিন্স), চারজন বাঁহাতি (ওয়ার্নার, খাজা, হেড, ক্যারি)। ডানহাতি-বাঁহাতি সংমিশ্রণ ভারতীয় বোলারদের লাইন-লেংথ ঠিক রাখার ক্ষেত্রে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে। অধিনায়ক রোহিতকেও নিয়মিত ফিল্ডারদের পজিশন পাল্টাতে হবে।

ব্যাটিং দুর্বলতা

ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা টপ ও মিডল অর্ডারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কম থাকা। রোহিত, শুবমান গিল, পূজারা, কোহলি, রাহানে, জাদেজা ও শ্রীকর ভরত—প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে জাদেজা ছাড়া সবাই ডানহাতি। ব্যাটিং লাইনআপে বৈচিত্র্য না থাকায় (বেশির ভাগ ডানহাতি হওয়ায়) অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে ও ফিল্ডার সাজাতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।

এখানেই সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল বাঁহাতি ঋষভ পন্তকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে বরাবরই জ্বলে ওঠা (৬২.৪০ গড়ে ৬২৪ রান ও ২৮ ক্যাচ) এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান গত ডিসেম্বরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন। এখনো পুরোপুরি সেরে না ওঠায় ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স
ছবি: টুইটার

পন্তের বদলে অবশ্য আরেক বাঁহাতি উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ঈশান কিষানকে সঙ্গে রেখেছে ভারত। তবে টেস্ট আঙিনায় কিষানের এখনো পা পড়েনি। আজ ফাইনালের মতো বৃহৎ মঞ্চে তাঁর অভিষেক হবে কি না, হলেও সেই চাপ সামলাতে পারবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তা ছাড়া কিষান সাদা বলের ক্রিকেটে বরাবরই ব্যাটিংয়ে ওপেন করে থাকেন। এই পজিশনে রোহিত-গিল নিজেদের অবস্থান পাকা করে ফেলায় ছয়ে কিংবা সাতে খেলতে হতে পারে কিষানকে। নতুন পজিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা তাই তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য ভাবনার কারণ হতে পারে ডেভিড ওয়ার্নারের ফর্ম। কনুইয়ের চোট নিয়ে দেশে ফেরার আগে ভারত সফরে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভালো করতে পারেননি (৩ ইনিংসে ২৬ রান)। আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের শীর্ষ রান সংগ্রাহক হলেও স্ট্রাইক রেট ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। হেড, গ্রিন ও ক্যারি ভারতের স্পিন আক্রমণ কীভাবে সামলান, সেটার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।

আরও পড়ুন

বুমরা-হ্যাজলউডের অনুপস্থিতি ও বোলিং দুর্বলতা-শক্তিমত্তা

ভারতের ফাস্ট বোলিংয়ে নেতৃত্বের ব্যাটনটা উঠেছিল যশপ্রীত বুমরার হাতে। কিন্তু পিঠের চোটের কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর আর মাঠেই নামা হয়নি তাঁর। ইংল্যান্ডে সর্বশেষ টেস্টে বুমরাই ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভারত হারলেও তিনি দারুণ বোলিং করেছেন। টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর রেকর্ড বেশ সমৃদ্ধ। ৭ টেস্টে ২১.২৫ গড়ে নিয়েছেন ৩২ উইকেট। ভারত নিশ্চিতভাবেই তাঁকে মিস করবে।

বুমরার না থাকা যদি ভারতের চিন্তার কারণ হয়, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে জশ হ্যাজলউডের অনুপস্থিতি। দুই বছর ধরে গোড়ালির চোট ভোগাচ্ছে ৩২ বছর বয়সী পেসারকে। ইংল্যান্ডে ২০১৯ অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন তিনি; সেটাও এক ম্যাচ কম খেলে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিডনি টেস্টে। ওই টেস্টেই গোড়ালিতে ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়েন। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল খেলতে গিয়ে নতুন করে চোটে পড়েন। সেটাই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার আরেক পেস অস্ত্র মিচেল স্টার্কও চোটের সঙ্গে লড়াই করে ফিরেছেন। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেই হাতের আঙুল ভেঙে যাওয়ায় স্টার্ক সর্বশেষ ভারত সফরে প্রথম দুটি টেস্ট খেলতে পারেননি। পেসত্রয়ীর আরেকজন অধিনায়ক কামিন্সও মায়ের মৃত্যুর কারণে দীর্ঘদিন ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন।

অনুশীলনে মজা করছেন রোহিত–কোহলি
ছবি: টুইটার

পরিসংখ্যান বলছে, গত আড়াই বছরে অস্ট্রেলিয়া খেলেছে ২১ টেস্ট, তিনজন একসঙ্গে খেলতে পেরেছেন মাত্র ৫টি। আজ শুরু হতে যাওয়া ফাইনালেও ত্রিফলার একজন হ্যাজলউড থাকছেন না। তাঁর পরিবর্তে দলে এসেছেন অনভিজ্ঞ মাইকেল নেসের। তবে তাঁর খেলার সম্ভাবনা কম। স্টার্ক-কামিন্সের সঙ্গে তৃতীয় পেসার হিসেবে দেখা যেতে পারে আরেক অনভিজ্ঞ স্কট বোল্যান্ডকে।

অস্ট্রেলিয়া টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে বাধ্য করবে আরেকটি পরিসংখ্যান। ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম চার ব্যাটসম্যান রোহিত, গিল, পূজারা ও কোহলির রেকর্ড বাঁহাতি স্টার্কের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য। দুই ওপেনার রোহিত ও গিল টেস্টে স্টার্কের বলে ২২৫ রান তুললেও কখনো আউট হননি। পূজারা দুবার ও কোহলি তিনবার আউট হলেও স্টার্কের বিপক্ষে তাঁদের ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ১১৯ ও ৭৩! তবে স্টার্কের এই দুর্দশা ভুলিয়ে দিতে পারেন নাথান লায়ন। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট (১১৬) তো লায়নেরই। শুধু কি তা–ই? এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেরও সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তিনি (৮৩)।

বুমরা না থাকলেও ভারতের বোলিংকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। দলটির পেস বোলিংকে নেতৃত্ব দেবেন এবারের আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (২৮) মোহাম্মদ শামি। মোহাম্মদ সিরাজও আছেন দারুণ ছন্দে। তাঁদের সঙ্গে অশ্বিন-জাদেজা তো আছেনই। সংবাদ সম্মেলনে শামির সিম আর রিস্ট পজিশনকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন স্মিথ, ওয়ার্নার ও লাবুশেন।

আরও পড়ুন

এক দশক ধরে বৈশ্বিক শিরোপা জিততে না পারার চাপ

মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে ভারতকে সম্ভাব্য সব বৈশ্বিক শিরোপা এনে দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, যার সর্বশেষটা ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এরপর এক দশক পেরিয়ে গেলেও আইসিসি আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি ভারত।
আজকের আগে গত ১০ বছরে আরও তিনটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলেছে ভারত (২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০২১ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ); হেরেছে সব কটিতে। বারবার তীরে এসে তরি ডোবার চাপ নিয়েই মাঠে নামতে হবে রোহিত-কোহলিদের, যা তাঁদের স্নায়ুর পরীক্ষাও নেবে।

যদিও কোচ রাহুল দ্রাবিড় চাপে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন, ‘গত পাঁচ-ছয় বছরে আমরা অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিতেছি, ইংল্যান্ডে সিরিজ ড্র করেছি, বিশ্বজুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলেছি। এই সময়ে আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্ট ট্রফি না থাকলেও ওই অর্জনগুলো মুছে যাবে না। অবশ্যই আইসিসির শিরোপা জেতা দারুণ ব্যাপার হবে। তবে এটা নিয়ে আমরা কোনো রকম চাপ অনুভব করছি না।’

অনুশীলনের ফাঁকে স্টার্করা
ছবি: টুইটার

অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে আবার এ ধরনের কোনো চাপ নেই। বলতে গেলে, ক্রিকেটের রাজাধিরাজ তো তারাই। সবচেয়ে বেশি বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের রেকর্ডটা তাদেরই দখলে (৮টি)। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা দলও তারা। বড় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ানদের জ্বলে ওঠা বোধ হয় তাদের ডিএনএতেই আছে। ভারত যেখানে গত ১০ বছরে কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জেতেনি, সেখানে এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার শোকেসে ট্রফি গেছে দুটি। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

ডিউক বলের চ্যালেঞ্জ

অস্ট্রেলিয়ার সফলতম অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের চোখে এটা বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো। ভারতের সাবেক কোচ ও ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য রবি শাস্ত্রীর মতে, এই ম্যাচের মাহাত্ম্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে। নিরপেক্ষ ভেন্যুতে, নিরপেক্ষ বলে খেলা হবে বলেই তাঁরা কথাগুলো বলেছেন।

নিরপেক্ষ বল মানে ডিউক বলের কথা বোঝানো হয়েছে। ভারত এসজি বল দিয়ে খেলে থাকে, অস্ট্রেলিয়া কুক্কাবুরা বলে খেলে অভ্যস্ত। তবে ইংল্যান্ডে তাদের খেলতে হচ্ছে ডিউক বলে। এই বলের স্থায়িত্ব অনেক বেশি। অনেক সময় পর্যন্ত আকার ধরে রাখে, সিম তেমন ক্ষয় হয় না, বলও নরম হয় না।

আরও পড়ুন

পিচে হালকা ঘাস থাকলে আর মৃদু বাতাস বইলে পেসাররা ফুল লেংথে বল ফেললেই হয় ব্যাটসম্যানের স্টাম্প উপড়ে ফেলবে, নয়তো ব্যাটসম্যানকে শট খেলতে বাধ্য করবে। আবার একটু অফ স্টাম্পের বাইরের বলে টোকা দেওয়ার লোভ সামলানোও ব্যাটসম্যানের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
মোটকথা, ডিউক বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া দুই দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে। যে দল দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে, দিন শেষে তারাই এগিয়ে থাকবে।

ওভাল টেস্টে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড

১৮৮০ সালে ঘরের মাঠে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড। ভেন্যু ছিল এই ওভালই। ১৪৩ বছরে এই মাঠে হয়েছে ১০৪ টেস্ট। অস্ট্রেলিয়া খেলেছে ২৪টি। তবে তাদের রেকর্ড খুব একটা সুবিধার নয়। ওই ২৪ টেস্টে সাকল্যে তারা জিতেছে মাত্র ৬টি। ওভালে গত ৫০ বছরের রেকর্ড আরও খারাপ। জিতেছে মাত্র দুটি।
ওভাল টেস্টে ভারতের রেকর্ডও ভালো নয়। ১৪ ম্যাচে জিতেছে কেবল ২টি। তবে ২০২১ সালে খেলা সর্বশেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১৫৭ রানে হারিয়ে দিয়েছিল তারা। সেই সুখস্মৃতি নিয়েই আজ খেলতে নামবেন রোহিত-কোহলিরা।

আরও পড়ুন

ভারতীয়দের টানা খেলার মধ্যে থাকা আর অস্ট্রেলিয়ানদের বিশ্রাম

এই বিষয়টা আইসিসি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তুলেছেন রবি শাস্ত্রী। শাস্ত্রী মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া কাগজে-কলমে এগিয়ে আছে। তবে প্রস্তুতির দিক দিয়ে ভারতই এগিয়ে, ‘আপনি যদি অস্ট্রেলিয়া দলের দিকে তাকান, ওদের কয়েকজন ক্রিকেটার সম্প্রতি খেলার মধ্যে ছিল না। কিন্তু ভারতীয়রা আইপিএলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট খেলে এখানে এসেছে। কোনো ক্রিকেট না খেলে চাঙা হয়ে আসা ভালো নাকি খেলার মধ্যে থেকে কিছুটা ক্লান্ত থাকা ভালো, এক সপ্তাহের মধ্যেই বোঝা যাবে।’
তবে মিচেল স্টার্ক আইপিএল এড়িয়ে টেস্টের জন্য সেরা প্রস্তুতি নেওয়াকেই বড় করে দেখছেন। দীর্ঘদিন বিশ্রামে থাকার সুযোগ পাওয়ায় পুরোনো ছন্দে ফিরতে পারবেন বলে আশা তাঁর।