মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট
সেঞ্চুরি ল্যাথাম–কনওয়ের, রেকর্ডময় দিনে বল কুড়িয়ে শেষবেলায় সাফল্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৯০ ওভারে ৩৩৪/১ (কনওয়ে ১৭৮*, ল্যাথাম ১৩৭, ডাফি ৯*; রোচ ১/৬৩, গ্রিভস ০/৫৫, সিলস ০/৬৭, ফিলিপ ০/৭১, চেজ ০/৭৫)—প্রথম দিন শেষে।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে রেকর্ডময় একদিন।
টস থেকে শুরু করা যায়। মুদ্রা নিক্ষেপের ভাগ্য পরীক্ষায় জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম। গত ১৪ বছরে ঘরের মাঠে ২৫ টেস্টে টস জিতে নিউজিল্যান্ডের কোনো অধিনায়কই আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেননি। এই চক্রে পাঁচজন আলাদা অধিনায়ক পেয়েছে নিউজিল্যান্ড (ল্যাথামসহ)। কিন্তু সেই ল্যাথামই আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর হয়তো কারও কারও ভ্রু–টা কুঁচকেছে। সবুজাভ উইকেটে সিদ্ধান্তটি সঠিক হলো তো?
প্রথম দিনের খেলা শেষে অবশ্য সেসব ভ্রু–ই আরও বেশি কুঁচকে যাওয়ার কথা। কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো কারণে। সারা দিনে ৯০ ওভার বোলিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে শেষ সেশনে একদম শেষ দিকে এসে মাত্র ১ উইকেটের দেখা পেয়েছে!
নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়ে ৮৬.৪ ওভার পর্যন্ত ৩২৩ রানের জুটি গড়েন। ২৪৬ বলে ১৩৭ রান করা কিউই অধিনায়ক ল্যাথাম কেমার রোচের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। এরপর জ্যাকব ডাফিকে (৯*) নিয়ে ৯০ ওভারে ১ উইকেটে ৩৩৪ রানে দিনের খেলা শেষ করেন ১৭৮ রানে অপরাজিত থাকা কনওয়ে। ল্যাথামের ক্যারিয়ারে এটি ১৫তম সেঞ্চুরি, কনওয়ের ষষ্ঠ।
নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে ওপেনিংয়ে ল্যাথাম–কনওয়ের জুটিটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের। ১৯৭২ সালে জর্জটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই কিউই ওপেনার গ্লেন টার্নার ও টেরি জার্ভিসের ৩৮৭ রানের জুটি এই তালিকায় সর্বোচ্চ।
নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে ওপেনিংয়ে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। ১৯৭২ সালে জর্জটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই কিউই ওপেনার গ্লেন টার্নার ও টেরি জার্ভিসের ৩৮৭ রানের জুটি এই তালিকায় সর্বোচ্চ।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন ল্যাথাম ও কনওয়ে।
তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন ল্যাথাম ও কনওয়ে। আগের রেকর্ডটি ছিল ২৭৬ রানের—সেটা ১৯৩০ সালে ওয়েলিংটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গড়েন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার স্টিউয়ি ডেম্পস্টার ও জ্যাকি মিলস। ৬৯ বছর পর ১৯৯৯ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সে রেকর্ডে ভাগ বসান ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেরউইন ক্যাম্পবেল ও আদ্রিয়ান গ্রিফিথ ওপেনিং জুটি। এর ২৬ বছর পর আজ তাঁদের পেছনে ফেললেন ল্যাথাম–কনওয়ে জুটি। বে ওভালের দর্শকেরা দারুণ এক ইতিহাসেরই সঙ্গী হলেন। কারণ, আজকের আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে উদ্বোধনী জুটিতে কখনো তিন শ রানের ওপেনিং জুটি দেখা যায়নি।
বেচারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ রোস্টন চেজ! টসে হারের পর বোলিং পেয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা খুব খুশি।’ কিন্তু বল কুড়োতে কুড়োতে দিনের খেলা শেষে তাঁর সঙ্গীদের মাঠ ছাড়তে হয় ক্লান্তি নিয়ে।
কারণ, অবিশ্বাস্য ধৈর্য ও দক্ষতা নিয়ে ব্যাট করেছেন ল্যাথাম ও কনওয়ে। ২৮ ওভারে বিনা উইকেটে ৮৩ রানে মধ্যাহ্নভোজনে যান দুজন। তখনো কেউ ফিফটি পাননি। চা–বিরতির সময় নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৫৭ ওভারে বিনা উইকেটে ২১৬। অর্থাৎ এই সেশনে ২৭ ওভারে ১৩৩ রান তোলেন ল্যাথাম (৮৭*) ও কনওয়ে (১২০*)। শেষ সেশনে এসে ল্যাথাম সেঞ্চুরি তুলে নেন ১৮৩ বলে। কনওয়ে দ্বিতীয় সেশনেই সেঞ্চুরি পান ১৪৭ বলে। শেষ সেশনে এসে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ৮৩.২ ওভারে নতুন বল নেওয়ার পর ওপেনিং জুটি ভাঙতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথম দুই সেশনে কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেননি ক্যারিবিয়ান বোলাররা। মধ্যাহ্নভোজন পরবর্তী সেশনে কোনো মেডেন ওভার ছিল না। সবুজ উইকেটের মধ্যে সারা দিনে বৃষ্টিতে ২০ মিনিটের বিরতি কাজে লাগিয়েও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি ক্যারিবিয়ান পেসাররা। ৮ ওভারে ১১ রান তুলে সাবধানিভাবে দিনের শুরুটা করে ধীরে ধীরে বাজে বলে স্ট্রোকের ঝুলি খোলেন ল্যাথাম ও কনওয়ে। ব্যক্তিগত ১০৪ রানে ফিলিপের বলে ক্যাচ তুললেও বেঁচে যান ল্যাথাম। টেভিন ইমলাচ ক্যাচটি নিতে পারেননি।