কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ সবচেয়ে বেশি জমজমাট ও বিনোদনে ভরপুর
ক্রিকেটের তথ্য–উপাত্ত, পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্রিকভিজের সহায়তা নিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ক্রিকেটকে বাণিজ্যিকীকরণ করে ফেলার পর ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগগুলো বছরের অনেকটা সময় কেড়ে নিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে এর ব্যাপ্তি এতটাই বেড়ে গেছে যে, ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই এই লিগগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
কিন্তু কোন লিগ সবচেয়ে বেশি জমজমাট আর বিনোদনে ভরপুর? ক্রিকেটের তথ্য–উপাত্ত, পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্রিকভিজের সহায়তা নিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সবচেয়ে বিনোদনমূলক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ কোনটি?
ক্রিকেট মাঠে এখন শুধু ছক্কা-চার আর উত্তেজনা। আইপিএল, পিএসএল, এসএ২০, বিগ ব্যাশ, সিপিএল, আইএলটি২০, বিপিএল—একেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যেন ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক মহাবিনোদনের প্যাকেজ। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ছোট পরিসরের (১০০ বলের) টুর্নামেন্ট দ্য হানড্রেড। সেরা লিগ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্রিকভিজ ও বিবিসি কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড ব্যবহার করেছে।
প্রত্যাশিতভাবেই র্যাঙ্কিংয়ের দিক থেকে সবার ওপরে আছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও জনপ্রিয় ক্রিকেট লিগ আইপিএল। বাংলাদেশের শীর্ষ টি–টোয়েন্টি লিগ বিপিএলকে আইপিএলের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতায় রূপ দিতে অতীতে এ দেশের ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট নানাজন নানা রকম কথা বলেছেন। কিন্তু সেই প্রত্যাশার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। এই তালিকার শীর্ষ সাতেও নেই বিপিএল।
লিগগুলোকে কীভাবে তুলনা করা যায়?
এই তুলনা করতে কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন—প্রতি ম্যাচে চার–ছক্কার গড় সংখ্যা, ডট বলের শতাংশ, ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা, কোন ধরনের বোলার বেশি উইকেট পাচ্ছেন এবং কতগুলো ম্যাচ শেষ ওভারে বা শেষ বলে গড়িয়েছে।
কোন লিগ সবচেয়ে বেশি বিনোদন দেয়
* সর্বোচ্চ ৫-এর মধ্যে এই মার্কিং করা হয়েছে।
* পাঁচটি মূল মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এই র্যাঙ্কিং করা হয়েছে।
এই মানদণ্ডগুলো অবশ্য ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভরশীল। কেউ বেশি রান দেখতে ভালোবাসেন, আবার কেউ কম রানের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ পছন্দ করেন। কারও কাছে ফাস্ট বোলিং ভালো লাগে, আবার কেউ স্পিনারদের শৈল্পিক বোলিংয়ের ভক্ত।
তবে একটা বিষয় নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই—সবাই চান ম্যাচ জমে উঠুক, শেষ ওভার এমনকি শেষ পর্যন্ত গড়াক। দ্য হানড্রেড টি–টোয়েন্টির চেয়ে কম বলের টুর্নামেন্ট হওয়ায় আশা করা হয়েছিল এই লিগে এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের সংখ্যা বেশি হবে।
সত্যি কি তাই হয়েছে?
হ্যাঁ, হয়েছে। তবে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছে আইপিএল। শেষ বলে গড়ানো ম্যাচের সংখ্যায় আইপিএলই শীর্ষে। আইপিএলে এখন পর্যন্ত ১৩.৫০% ম্যাচের ফল শেষ বলে নির্ধারিত হয়েছে, দ্য হানড্রেডের ১৩.৪০%।
তাহলে ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা কি ম্যাচের ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে? এ ক্ষেত্রে শুধু আইপিএল, দ্য হানড্রেড, বিগ ব্যাশ এবং এসএ২০ লিগের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। কারণ, এই চার লিগ নিয়মিতই ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ পদ্ধতিতে হয়। ঘরের মাঠে জেতার শতকরা হারে দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০ শীর্ষে (৬০%), যেখানে আইপিএল সবচেয়ে নিচে (৪৫.৪%)।
শেষ বলে ম্যাচের সমাপ্তি (কোন লিগে কত শতাংশ)
রান চাই, শুধু রান!
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভক্তরা যেন ‘ফাস্ট ফুডে’ অভ্যস্ত—প্রচুর চার, আর সঙ্গে তাঁরা অনেক ছক্কাও দেখতে চান। ইদানীং ব্যাটসম্যানরাও শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন এবং বল গ্যালারিতে পাঠাতে মরিয়া থাকেন।
এখানে যৌথভাবে শীর্ষে আইপিএল ও পিএসএল সবার ওপরে। ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ লিগে ম্যাচপ্রতি গড়ে ৪৪টি করে বাউন্ডারি হয়। এরপর পিএসএল ও আইএলটি২০।
ম্যাচপ্রতি গড়ে কোন লিগে কত বাউন্ডারি
শীর্ষে সাতের মধ্যে তলানিতে দ্য হানড্রেডের নাম। কারণটাও অনুমেয়। দ্য হানড্রেড ১০০ বলে খেলা, টি–টোয়েন্টি ম্যাচের চেয়ে ২০ বল কম হওয়ায় বাউন্ডারিও কম হয়।
ছয়ে আছে বিগ ব্যাশ। অস্ট্রেলিয়ার এই লিগে ম্যাচপ্রতি ৩৪টি বাউন্ডারি হয়। বিগ ব্যাশে চার–ছক্কা কিছুটা কম হওয়ার পেছনে বড় কারণ অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ মাঠের সীমানা অন্য দেশের মাঠগুলোর চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়।
তা ছাড়া দ্য হানড্রেড ও বিগ ব্যাশে এমন পিচ তৈরি করা হয় যেন ব্যাটিং ও বোলিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য থাকে। এশিয়ার লিগগুলোতে রানের বন্যা বয়ে গেলেও বাইরের লিগগুলোতে বোলারদের জন্য কিছুটা সুবিধা থাকে।
প্রথম ইনিংসের গড় রানের হিসাবে পিএসএল (১৮০) আইপিএলকে (১৭৯) সামান্য ব্যবধানে পেছনে ফেলেছে। সব লিগের গড় রান ১৬০-১৮০ এর মধ্যে, যেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএলটি২০ (১৬১) সবার নিচে।
দ্য হানড্রেডে প্রথম ইনিংসের গড় রান ১৪৪। তবে এখানে যে দলগুলো ২০ বল কম খেলে, তা আগেই বলা হয়েছে। যদি দ্য হানড্রেডকে পূর্ণ টি-টোয়েন্টিতে রূপান্তরিত করা হয়, তাহলে গড় রান দাঁড়ায় ১৬৭।
বোলারদের খবর কী?
স্পিনাররা সবচেয়ে বেশি উইকেট নেন কোথায়? হয়তো অনেকেই ভাববেন ভারত, পাকিস্তান বা আরব আমিরাতে।
কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার হলো ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে কিংবদন্তি ফাস্ট বোলারদের চারণক্ষেত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজেই (সিপিএল) স্পিনাররা সবচেয়ে বেশি সাফল্য পান। অন্যদিকে পেসাররা সবচেয়ে বেশি সফল অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে।
পেসার ও স্পিনারদের উইকেট পাওয়ার শতকরা হার সব লিগেই প্রায় কাছাকাছি।
মানদণ্ড হিসেবে আর কোন ফ্যাক্টর বিবেচনা করা হয়েছে?
প্রতিটি লিগে খেলোয়াড়দের গুণমান আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একাদশে ছিলেন—এমন খেলোয়াড় বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় পাওয়া গেছে আইএলটি২০তে (৪২৩ জন)।
জাতীয় দলের খেলেছেন—এমন ৩৫১ জন ক্রিকেটার ছিলেন পিএসএলে, আইপিএলে সংখ্যাটা ৩৩৫। সবচেয়ে কম আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ১৪৫ খেলোয়াড় বিগ ব্যাশে খেলেছেন।
এই মানদণ্ডে আইএলটি২০ সবার ওপরে থাকার কারণ, সেখানে একটি দলের একাদশে সর্বোচ্চ নয়জন বিদেশি খেলোয়াড় রাখা যায়। অন্য লিগগুলোতে সাধারণত তিন থেকে চারজন বিদেশিকে খেলানো যায়।
আর বিগ ব্যাশ যখন হয়, তখন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দল নিজেদের দেশে আন্তর্জাতিক সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এক ম্যাচ বা সিরিজের মাঝে লম্বা বিরতি না থাকলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বিগ ব্যাশে খেলার অনুমতি দেয় না।