কোহলির ভিডিওতেই প্রমাণ, শিরোপা উৎসবে প্রাণহানির ঘটনায় বেঙ্গালুরুকে দায়ী করে আদালতে প্রতিবেদন

ভিডিও পোস্টে বিরাট কোহলি বেঙ্গালুরুর ভক্ত-সমর্থকদের শিরোপা উৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এতে প্রত্যাশার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি জনসমাগম হয়।

গত জুনে কোহলিদের আইপিএল শিরোপা উৎসবে পদদলিত হয়ে ১১ জন প্রাণ হারানছবি: এএফপি

ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে গত ৪ জুন র‍য়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর আইপিএল শিরোপা উৎসবে পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ, রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দায়ী করেছে কর্ণাটক সরকার। এমনকি সরকার দায় দেখছে দলটির সবচেয়ে বড় তারকা বিরাট কোহলিরও।

আইপিএল শিরোপা উদ্‌যাপনে প্রাণহানির ঘটনায় চলা মামলায় কর্ণাটক সরকারের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন আদালত। হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বেঙ্গালুরুর বিজয়োৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজনে অনুমতি না নেওয়া ও অব্যবস্থাপনার কথা তুলে সরকার ফ্র্যাঞ্চাইজিকে দায়ী করেছে।

প্রমাণ হিসেবে কোহলির বার্তাসংবলিত একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা বেঙ্গালুরু পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

ঘটনার দিন সকালে র‍য়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজগুলো থেকে কোহলিকে দিয়ে প্রচার চালানো হয়। ভিডিও পোস্টে কোহলি ভক্ত-সমর্থকদের উৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এতে প্রত্যাশার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি জনসমাগম হয়। পরে সেই ভিডিও বার্তা বেঙ্গালুরুর পেজগুলো থেকে মুছে ফেলা হলেও প্রমাণ হিসেবে অনেকের কাছেই সেটি এখনো আছে।

কোহলিদের ‘ভিক্টরি প্যারেডে’ হুলুস্থুল অবস্থার সৃষ্টি হয়
ছবি: এক্স

১৮ বছরের আইপিএল ইতিহাসে এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় র‍য়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ৩ জুন আহমেদাবাদের ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারায় কোহলির দল। পরদিন দলটি ট্রফি নিয়ে বেঙ্গালুরুতে ফেরে। শহরের বিধান সৌধ থেকে ‘ভিক্টরি প্যারেড’ করতে করতেই নিজেদের মাঠ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পৌঁছান কোহলি, রজত পাতিদার, ক্রুনাল পান্ডিয়া, ফিল সল্টরা।

আরও পড়ুন

শিরোপাজয়ী দলের আগমন ঘিরে বেঙ্গালুরুর সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা কাজ করবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। আট থেকে আশি—সব বয়সী মানুষ সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। কিন্তু উন্মাদনা লাগাম ছাড়িয়ে যাওয়াতেই বাধে বিপত্তি। পদদলিত হয়ে মারা যান ১১ জন, আহত হন অর্ধশতাধিক।

মর্মান্তিক এই ঘটনার পর ভারতের সর্বমহল থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হলেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব ও পরিস্থিতি সামাল দিতে গাফিলতির অভিযোগ এনে কর্ণাটক সরকারকে দায়ী করা হয়েছিল।

সেদিন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় বেঙ্গালুরু পুলিশ
ছবি: এএফপি

কিন্তু কর্ণাটক সরকার শুরু থেকেই দাবি করে এসেছে, এত জনসমাগম দেখে বেঙ্গালুরু ট্রাফিক পুলিশ ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষকে ‘ভিক্টরি প্যারেডের’ অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকপক্ষ আদেশ অমান্য করেই রাজ্যের আইনসভা বিধান সৌধ থেকে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত প্যারেড করে। তখন পুলিশ আর বাধা দেয়নি। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করতে বাধ্য হয়। সেই হুড়োহুড়িতেই পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কর্ণাটক সরকার তাদের প্রতিবেদনে এসব বিষয়ই লিখেছে। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

আরও পড়ুন

সেখান থেকে জানা যায়, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট নেটওয়ার্কস ও কর্ণাটক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা জনসমাগম ব্যবস্থাপনার বিশদ বিবরণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দলটিকে শহর প্রদক্ষিণ ও স্টেডিয়ামে উদ্‌যাপনের অনুমতি না দিলেও তারা দ্বিগুণ প্রচার চালিয়েছে।

কর্ণাটক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা ৩ জুন গভীর রাতে কাবন পার্ক থানাকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সম্ভাব্য ট্রফি উৎসবের বিষয়টি অবহিত করে। কিন্তু কাবন পার্ক থানা স্বল্প সময়ের নোটিশ ও পরিকল্পনার ঘাটতির কথা উল্লেখ করে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। তবু ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ প্রচার চালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন

৪ জুন বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ‘ভিক্টরি প্যারেডের’ সময়সূচি জানানো হয় এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ওয়েবসাইটের একটি লিংক শেয়ার করা হয়। সেখানে বলা হয়, সীমিত দর্শক বিনা মূল্যে স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারবেন। কিন্তু ততক্ষণে লাখ লাখ মানুষ অনুষ্ঠানস্থলে (স্টেডিয়াম এলাকায়) চলে আসে। এর আগে সেদিন সকালে কোহলির যে ভিডিও বার্তা পোস্ট করা হয়, সেটিও বিকেল গড়াতে ১৬ লাখ বার দেখা হয়। এ ধরনের প্রচারই ব্যাপকভাবে জনসমাগম সৃষ্টি করে।

সেদিন উৎসুক জনতাকে সামলাতে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় বেঙ্গালুরু পুলিশ
ছবি: এএফপি

শুনানির সময় হাইকোর্ট সব পক্ষের কাছ থেকে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইবেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ইতিমধ্যেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির বিপণনপ্রধান নিখিল সোসালেকে অনেক আগেই গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় পুলিশ।