১৭ বছরের পুরোনো ভিডিও ফাঁসের কারণ, ‘ভিউ কামানো’
আইপিএলের আলোচিত ‘চড়–কাণ্ড’ আবার আলোচনায় ফিরেছে। ২০০৮ সালে শ্রীশান্তকে হরভজন সিংয়ের চড় মারার সেই ঘটনার ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন আইপিএলের তখনকার চেয়ারম্যান ললিত মোদি। সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের ‘বিয়ন্ড২৩’ পডকাস্টে এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন, ভিডিওটি দেখিয়েছেন। ১৭ বছর পুরোনো সেই ঘটনা সামনে আনায় মোদি ও ক্লার্কের ওপর খেপেছেন শ্রীশান্তের স্ত্রী ভুবনেশ্বরী।
মোদি ও ক্লার্ককে উল্লেখ করে ইনস্টাগ্রামে ভুবনেশ্বরী লিখেছেন, ‘লজ্জা হোক আপনাদের (মোদি ও ক্লার্ক)। ২০০৮ সালের ঘটনা টেনে এনে আপনারা শুধু সস্তা প্রচার আর ভিউ চাইছেন। শ্রীশান্ত আর হরভজন অনেক আগেই এই ঘটনা পেছনে ফেলে এসেছে। দুজনেই এখন স্কুলপড়ুয়া সন্তানের বাবা। অথচ আপনারা আবারও পুরোনো ক্ষত উসকে দিলেন। জঘন্য, হৃদয়হীন ও অমানবিক।’
ভুবনেশ্বরী আরও বলেছেন, ‘শ্রীশান্ত তার দুঃসময় কাটিয়ে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জীবন গড়ে তুলেছে। স্ত্রী ও সন্তানের মা হিসেবে আমাদের পরিবারের জন্য ১৮ বছর পর এই ভিডিও আবার সামনে আসা ভীষণ কষ্টের। পরিবারগুলোকে আবারও পুরোনো ট্রমা মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে শুধু দর্শক টানার জন্য। এতে শুধু খেলোয়াড়েরা নয়, তাদের নির্দোষ সন্তানদেরও লজ্জার মুখে পড়তে হচ্ছে।’
শেষে ভুবনেশ্বরী হুঁশিয়ারি দিয়ে লিখেছেন, ‘এমন সস্তা ও অমানবিক কাজের জন্য আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। শ্রীশান্ত দৃঢ় চরিত্রের মানুষ, কোনো ভিডিও তার মর্যাদা কেড়ে নিতে পারবে না। পরিবারের ক্ষতি করার আগে সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করো।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই সময়ে যেকোনো ভিডিও ভাইরাল হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরই ক্রিকেট বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু এত বছর কেন এই ভিডিও সামনে আসেনি? সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন হার্শা ভোগলে। এক্সে এই ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারভাষ্যকার লিখেছেন, ‘মজার ব্যাপার, হরভজন-শ্রীশান্তের সেই ভিডিও ১৭ বছর পর বেরিয়ে এসেছে। আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই এটা দেখেছিল আর আমরা কথা দিয়েছিলাম যে এটা জনসমক্ষে আসবে না। কারণ, তখন আইপিএলের প্রথম বছর চলছিল এবং লিগের জন্য এটা ভালো কোনো খবর হতো না।’
হরভজন-শ্রীশান্তের চড়-কাণ্ডের সেই আলোচিত ভিডিও সামনে এনে ললিত মোদি বলেছেন, ‘আমি বলছি কী ঘটেছিল। ভিডিওটাও আমি দেব। আমি এতদিন এটা রেখে দিয়েছিলাম। ভাজ্জি (হরভজন) আমার খুব প্রিয় বন্ধু। আমি তাকে পছন্দ করি। ঘটনা ঘটেছিল মাঠেই, আর আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। খেলা শেষ হয়ে গেছে, ক্যামেরা বন্ধ। শুধু নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলো চালু ছিল। খেলোয়াড়েরা হাত মেলাচ্ছিলেন, হাই-ফাইভ করছিলেন। শ্রীশান্তের কাছে আসতেই ভাজ্জি শুধু বলল, “এদিকে আয়”, তারপরই দিল একটা ব্যাকহ্যান্ড চড়।’
ভিডিওতে দেখা যায়, ম্যাচের শেষে সাধারণত যেভাবে ক্রিকেটাররা সৌজন্য বিনিময় করেন, সেভাবেই সারি বেঁধে শুভেচ্ছা বিনিময় চলছিল। শ্রীশান্ত সামনে এলে হরভজন করমর্দন না করে টেবিল টেনিসের ব্যাকহ্যান্ড শটের মতো করে তাঁর ডান গালে সপাটে চড় কষিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রীশান্ত তাঁর দিকে তেড়ে যান। এগিয়ে যান হরভজনও। প্রায় হাতাহাতির উপক্রম হয়। সৌভাগ্যক্রমে তখনই শ্রীশান্তকে ধরে ফেলেন ইরফান পাঠান ও মাহেলা জয়াবর্ধনে।
শ্রীশান্তের দলের অধিনায়ক যুবরাজ সিং হরভজনের চড়ের ঘটনাকে ‘কুৎসিত ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে নিন্দা করেছিলেন। বিসিসিআই হরভজনকে সেই মৌসুমের বাকি ম্যাচগুলো থেকে নিষিদ্ধ করে।