সরে যাচ্ছেন শেঠি, পিসিবিতে ফিরছেন আশরাফ

পিসিবির চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরছেন জাকা আশরাফএএফপি

গুঞ্জনটা শোনা যাচ্ছিল কদিন ধরেই—পিসিবির চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরছেন জাকা আশরাফ। সে পথে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন আশরাফ। আশরাফ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুস্তাফা রামদেকে পিসিবির বোর্ড অব গভর্নরসে যোগ দিতে মনোনীত করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

সাধারণত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তাঁর পছন্দের ব্যক্তিকে পিসিবির বোর্ড অব গভর্নরসে নিয়োগ দেন। এরপর সেই বোর্ড অব গভর্নরস নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁকে পিসিবির চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতা দেয়। সাধারণত পিসিবি চেয়ারম্যানের মেয়াদ হয় তিন বছর। যদিও নির্বাচনটি শুধু আনুষ্ঠানিকতাই।

এর আগে আশরাফের ফেরা অনেকটাই নিশ্চিত হয় পিসিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাজাম শেঠির টুইটে। তিনি জানান, পরবর্তী বোর্ড চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে থাকার ইচ্ছা নেই তাঁর। গত ডিসেম্বরে রমিজ রাজার কমিটিকে সরিয়ে দেওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয় শেঠিকে। এ কমিটির মেয়াদ ছিল ২১ জুন পর্যন্ত। পরবর্তী চেয়ারম্যান হতে নিজের অনাগ্রহের কথা প্রকাশ্যে বলে কার্যত পিসিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে সরেই দাঁড়ান শেঠি।

আশরাফের ফেরার গুঞ্জন শুরু হওয়ার আগে শেঠি পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ২টার একটু আগে নিজের অফিশিয়াল আইডি থেকে টুইট করে শেঠি বলেন, ‘আমি আসিফ জারদারি ও শাহবাজ শরিফের দ্বন্দ্বের বিষয় হতে চাই না। এমন অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা পিসিবির জন্য ভালো নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমি পিসিবির চেয়ারম্যানশিপের প্রার্থী নই। সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভকামনা।’

শেঠির টুইট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের দীর্ঘদিন ধরে চলা এমন মিউজিক্যাল চেয়ার খেলার দিকেই ইঙ্গিত। শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের এখনকার প্রধানমন্ত্রী। আসিফ আলী জারদারি সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তানের পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান। শরিফের সরকারের জোটের অংশ তিনি।

সাধারণত পিসিবির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও বোর্ডের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের নিয়োগের মাধ্যমেই। ফলে শরিফেরই এ ক্ষেত্রে মূল মতটি থাকার কথা। তবে ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরেই পিপিপি বলে আসছে—পাকিস্তানের ক্রীড়ার দায়িত্ব তাদের। যেহেতু আন্তপ্রাদেশিক সমন্বয় মন্ত্রণালয় তাদের অধীনে। ফলে পিসিবির চেয়ারম্যান পদে জারদারির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আশরাফই এগিয়ে ছিলেন।

পিসিবিতে থাকছেন না নাজাম শেঠি
এএফপি

গত ডিসেম্বরে দায়িত্ব পাওয়ার পর শেঠির কমিটির ওপর ন্যস্ত দায়িত্বের অন্যতম ছিল পিসিবির ২০১৪ সালের সংবিধান ফিরিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে তাদের ১২০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। শেঠির কমিটিকে একটি বোর্ড অব গভর্নরস গঠন ও একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়।

২০১৪ সালের সংবিধান ফিরিয়ে আনার অর্থ, পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের পুরোনো কাঠামোও ফিরিয়ে আনা। রমিজের আমলে পুরোনো কাঠামো ভেঙে ছয়টি প্রাদেশিক দলের সমন্বয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট চালু করা হয়। যাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন পেশাদার বিভাগের দল বিলুপ্ত হয়ে যায়। এমন কাঠামো মূলত তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও পিসিবির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইমরান খানের পরামর্শেই হয়। ২০১৯ সালের সংশোধিত সংবিধানকে সরিয়ে ২০১৪ সালেরটি ফিরিয়ে আনলে পিসিবির কাঠামোও বদলে যাবে।

অবশ্য আশরাফের পিসিবি চেয়ারম্যান হিসেবে ফেরা, তাঁকে শেঠির জায়গা করে দেওয়া ফিরিয়ে আনছে পুরোনো স্মৃতি। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে শেঠির সঙ্গে বেশ কয়েকবার পিসিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে আইনি লড়াই হয়েছিল আশরাফের। চেয়ারম্যানের পদ কয়েকবার হাতবদলও হয়েছিল তখন। পাকিস্তানের একসময়ের প্রেসিডেন্ট জারদারির ঘনিষ্ঠ আশরাফকে সরিয়ে শেঠিকে আনেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও এখনকার প্রধানমন্ত্রীর ভাই নওয়াজ শরিফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশরাফকেই জায়গা করে দিতে হয়েছিল শেঠির। এবারও তাই করতে হচ্ছে।  

অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বের সময়ে শেঠির কমিটি পাকিস্তান জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে পরিবর্তন এনেছে। সাবেক প্রধান কোচ মিকি আর্থারকে খণ্ডকালীন ডিরেক্টর অব ক্রিকেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে কয়েক দিন ধরে শেঠির কমিটি আলোচনায় ছিল এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে দেশটিতে গিয়ে খেলতে ভারতের আপত্তির সঙ্গে অন্তত কয়েকটি ম্যাচ সেখানে আয়োজনের ব্যাপারে পাকিস্তানের অনঢ় অবস্থানের কারণে অচলাবস্থাও তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত হাইব্রিড মডেলেই হতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ, যাতে বেশির ভাগ ম্যাচ হবে শ্রীলঙ্কায়।

তবে এ বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ এখনো নিশ্চিত করেনি পাকিস্তান। শেঠির বোর্ড বলে এসেছে, সরকারের অনুমতি পেলেই শুধু ভারতে খেলতে যাবে পাকিস্তান। বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ করা না হলেও পাকিস্তানের সম্ভাব্য ভেন্যু নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে তারা। আশরাফ আসার পর এ ক্ষেত্রে পিসিবির অবস্থান বদলায় কি না, দেখার বিষয় হবে সেটিও।

আরও পড়ুন