তামিমকে ফারুকের ‘ধন্যবাদ’, এরপর কি বিসিবিতে

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও তামিম ইকবাল

এমন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুব বেশি ক্রিকেটারের নেই। নির্দিষ্ট করে বললে তামিমের তুলনা হতে পারে কেবল সাকিব আল হাসানের সঙ্গেই। সেই তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাল রাত থেকেই অতীত এক নাম। বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে নিভে গেল এক জ্বলজ্বলে তারকা।

তামিমের এই বিদায়ী সময়ে সংগত কারণেই আসে একটা প্রশ্ন—বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন কোনো ভূমিকায় কি দেখা যাবে প্রায় দেড় যুগ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা তামিমকে? ক্রিকেট ধারাভাষ্যে তাঁর অপার সম্ভাবনা। সঙ্গে এ–ও জানা গেছে, তামিমের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে সম্পৃক্ত হওয়া। তবে এ ব্যাপারে তামিমের মুখ থেকে এখনো কিছু শোনা যায়নি।

তামিমের বয়স প্রায় ৩৬ হয়ে গেছে। ক্যারিয়ারের দিগন্তে এসে যা হয়, মাঠের খেলা চালিয়ে যেতে তাঁর লড়াই ছিল ফিটনেস আর ফর্মের সঙ্গে। বাংলাদেশের ক্রিকেট একসময় যে তামিমকে নিয়ে সাহসী ভাবনা ভাবতে পারত, সে সময় গত হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই।

তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই পড়তি সময়েও বাংলাদেশের ক্রিকেট অপেক্ষায় ছিল তামিমের। ব্যাটসম্যান বা ওপেনার তামিমের অস্তিত্বটা এখানেই আরেকবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেড় বছরের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পরও এটা বলার উপায় নেই যে এই দীর্ঘ সময়ে আর কোনো ওপেনার তামিমের জায়গা নিতে পেরেছেন। খেললে ওপেনিংয়ে এখনো তিনিই হতেন এক নম্বর পছন্দ।

কিন্তু সে সম্ভাবনা আর নেই। কাল রাতে তামিম ফেসবুক পোস্টে জানিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর নয়। তাঁর অধ্যায় শেষ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় আসর সামনে রেখে বাংলাদশে দল বা বিসিবিকে আর দোদুল্যমানতায় রাখতে চাননি তিনি। বলে দিয়েছেন ‘বিদায়’।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ ক্রিকেট দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলছেন তামিম ইকবাল
প্রথম আলো

তামিমের বিদায়ের ঘোষণা আর সবার মতো বিসিবিও প্রথম জেনেছে তাঁর ফেসবুক পোস্ট থেকে। বিপিএলের মধ্যে ৮ জানুয়ারি গ্র্যান্ড সিলেট হোটেলে নির্বাচকেরা আলোচনায় বসেছিলেন তামিমের সঙ্গে। উদ্দেশ্য, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তথা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে তামিমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানা।

তামিম তখনই বলে দিয়েছিলেন, তিনি আর খেলবেন না জাতীয় দলে। তারপরও নির্বাচকদের অনুরোধ আরেকবার ভেবে দেখার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের বলেন, পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন ফিরবেন কি না। জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন আর তামিমের দীর্ঘদিনের সতীর্থ মাহমুদউল্লাহও সেদিন তাঁকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে।

আরও পড়ুন

এর আগে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আফগানিস্তান সিরিজের মাঝখানে চট্টগ্রামে হুট করে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু সেটি স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ২৪ ঘণ্টার মতো। পরদিন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে তামিম তুলে নেন অবসরের সিদ্ধান্ত। এরপর ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষ হোম সিরিজে খেলেছেন, যেটি এখন হয়ে থাকছে তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। অবশ্য ফিরলেও তামিম শুধু ওয়ানডেতেই ফিরতেন। টি–টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন আগেই, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন টেস্ট ক্রিকেটও না খেলার।

নির্বাচকদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলেও এবার যে তামিম তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাবেন না সেটি জানা গিয়েছিল আগেই। কাল ফেসবুক পোস্টে সেটাই জানিয়েছেন তিনি, যেটার অপেক্ষায় ছিল বিসিবিও। তবে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ সংশ্লিষ্ট পরিচালক নাজমূল আবেদীন জানিয়েছেন, ফেসবুক পোস্টে অবসরের ঘোষণার আগে গত দুই দিনে তামিমের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়নি। তাঁরা জানতেন না তামিম কাল রাতেই এভাবে অবসরের ঘোষণা জানিয়ে দেবেন।

সেটা অবশ্য বড় কোনো সমস্যাও নয়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণার আগ মুহূর্তে অপেক্ষা ছিল তামিমের সিদ্ধান্ত জানার। তিনি খেললে টপ অর্ডার এক রকম হবে, না খেললে আরেক রকম। সেই ভাবনার জায়গায় এখন আর বিসিবি ও নির্বাচকদের কোনো বাধা নেই।

আমি ব্যক্তিগতভাবে চেয়েছিলাম তামিম আরও কিছুদিন খেলুক। কিন্তু নিজের অবস্থা সম্পর্কে সেই সবচেয়ে ভালো জানে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দীর্ঘদিন ধরে সার্ভিস দিয়ে গেছে তামিম। অনেক ম্যাচ আমাদের জিতিয়েছে। বোর্ড সভাপতি হিসেবে আমি তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।
ফারুক আহমেদ, বিসিবি সভাপতি

তামিমের বিদায়বেলায় তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। কাল রাতে তামিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে চেয়েছিলাম তামিম আরও কিছুদিন খেলুক। কিন্তু নিজের অবস্থা সম্পর্কে সেই সবচেয়ে ভালো জানে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দীর্ঘদিন ধরে সার্ভিস দিয়ে গেছে তামিম। অনেক ম্যাচ আমাদের জিতিয়েছে। বোর্ড সভাপতি হিসেবে আমি তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি তামিমের
প্রথম আলো

ক্রিকেট ছাড়ার পর তামিমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিসিবির আপাতত তেমন কোনো ধারণা নেই। তবে তিনি হয়তো আরও কিছুদিন ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যেতে চাইবেন। পাশাপাশি বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেওয়ারও প্রস্তুতি নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ আছে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনেক পরিচালক পদত্যাগ করায় ও অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় শূন্য পদগুলোতে নির্বাচনের একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলো পুনর্গঠনের কাজ শেষ না হওয়ায় সেই সম্ভাবনা এখন কম। কাজেই গঠনতন্ত্র মেনে বিসিবিতে আসতে চাইলেও তামিমকে অপেক্ষা করতে হওয়ার কথা আগামী অক্টোবর পর্যন্ত।

নির্বাচন ছাড়া তিনি বোর্ডে আসতে পারেন কেবল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত পরিচালক হয়ে, যে মনোনয়ন নিয়ে এখন বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে আছেন সভাপতি ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীন।

আরও পড়ুন