এক বছর পর ফেরা হাসানের কাছেই হেরে গেল বাংলাদেশ

এক বছর পর পাকিস্তান জাতীয় দলে ফেরা হাসান আলী নিয়েছেন ৫ উইকেটএএফপি

শুরুটা করেছিলেন হাসান আলী, শেষটাও। দুই ওপেনারের উইকেট নিয়ে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিলেন। ১৮তম ওভারে যখন বোলিংয়ে আসেন, বাংলাদেশের হয়ে মিটি মিটি করে জ্বলা সম্ভাবনার আলো হয়ে ছিলেন কেবল জাকের আলী। হাসান ফিরিয়েছেন তাঁকেও, এক বল পর নেন তানজিম হাসানের উইকেট। আগে থেকেই হেলে থাকা ম্যাচটা এরপরই পুরোপুরি পাকিস্তানের দিকে চলে যায়। এক বছর পর জাতীয় দলে ফেরা হাসান আলীর কাছেই হেরে যায় বাংলাদেশ।

শারজায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে হারের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে লাহোরে আজ বাংলাদেশ দল তিন টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরেছে ৩৭ রানে। অথচ টসে জিতে পাকিস্তান ৭ উইকেটে ২০১ রান করে ফেলার পরও বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারত ২৫ মে এ মাঠেই হওয়া পিএসএলের ফাইনাল। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ২০২ রান তাড়া করেই পিএসএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাহোর কালান্দার্স।

বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাসের ব্যাট থেকে ৩০ বলে এসেছে ৪৮ রান
এএফপি

পাকিস্তান যে এত রান করে ফেলবে, তা অবশ্য শুরুতে মনে হচ্ছিল না। প্রথম দুই ওভারেই দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের দুই বোলার মেহেদী হাসান ও শরীফুল ইসলাম। ফখর জামানকে এলবিডব্লু করে শরীফুল পান টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের ৫০তম উইকেট। ৫ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলা পাকিস্তানের চাপটা সামলে নেন মোহাম্মদ হারিস।

১৮ বলে ৩১ রান করে তানজিম হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান হারিস। তবে তাঁর ধরিয়ে দেওয়া ছন্দে একের পর এক বাউন্ডারিতে পরের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন সালমান আগা ও হাসান নেওয়াজ। হারিসকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরের ওভারে এসেই সালমান আগার কাছে টানা তিনটি বাউন্ডারি হজম করেন তানজিম। ততক্ষণে ফিফটিও পেরিয়ে যান পাকিস্তান অধিনায়ক।

৩৩ বলে তাঁর সঙ্গে হাসানের ৬৫ রানের জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন হাসান মাহমুদ। তবু পাকিস্তানের রানের গতি কমছিল না। তা কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস বোলিংয়ে নিয়ে আসেন আগের ২৫ ম্যাচে কেবল ২ ওভার বল করা শামীম হোসেনকে।

আরও পড়ুন

লিটনের সিদ্ধান্তই কাজে আসে—প্রথম ২ ওভারে ১১ রান দিয়ে পাকিস্তানের রানের গতি কমিয়ে দেন শামীম। তৃতীয় ওভারে খুশদিল শাহকে ফিরিয়ে পেয়ে যান টি–টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম উইকেটও। সালমানের সঙ্গী হাসান নেওয়াজকে তাঁর আগেই ফিরিয়ে দেন রিশাদ।

তবু পাকিস্তানকে ২০০ রানের আগে আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ। কৃতিত্বটা শাদাব খানের সঙ্গে খানিকটা ফাহিম আশরাফেরও। শেষ ৩ ওভারে তাঁরা নেন ৪৩ রান।

রান তাড়ায় ভালো একটা উদ্বোধনী জুটির দরকার ছিল বাংলাদেশের, সেটি তারা পায়নি। দ্বিতীয় ওভারেই হাসান আলীর বলে আউট হয়ে যান পারভেজ হোসেন। এক বছর পর জাতীয় দলে ফিরেই ৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন হাসান।

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের পতাকা হাতে দুই সমর্থক
ছবি: পিসিবি

তবে তানজিদ হাসান কিছুটা হলেও পেরেছেন ফর্মটা ধরে রাখতে। আরব আমিরাতের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচের মতো পাওয়ার প্লেতে এবারও রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। যদিও ইনিংসটি থেমে যায় ১৭ বলে ৩১ রানে হাসান আলীর বলে বোল্ড হয়ে।

বাংলাদেশের আশা কিছুটা টিকে ছিল যতক্ষণ লিটন দাস উইকেটে ছিলেন। দারুণ সব বাউন্ডারিতে দলের রান সচল রাখছিলেন অধিনায়ক। তাঁর সঙ্গে তাওহিদ হৃদয় থাকলেও তাঁর ব্যাট থেকে রান আসছিল না। তবে লিটনও আউট হয়ে যান ৩০ বলে ৪৮ রান করে।

আরও পড়ুন

অধিনায়কের বিদায়ের পর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। শুরুটা হয় তাওহিদ হৃদয়কে দিয়ে—ছন্দহীন এই ব্যাটসম্যান ২২ বলের ইনিংসে শুধু একটি বাউন্ডারিই হাঁকাতে পেরেছেন, করেছেন ১৭ রান। শামীম হোসেন, রিশাদ হোসেন ২ ওভারের ব্যবধানে আউট হয়ে যান। বাংলাদেশের হারটা তখন নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল—পুরো ২০ ওভারও শেষ পর্যন্ত তারা আর খেলতে পারেনি। ৪ বল আগে অলআউট হয়েছে ১৬৪ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ১৯.২ ওভারে ১৬৪/১০ (লিটন ৪৮, জাকের ৩৬, তানজিদ ৩১; হাসান ৫/৩০, শাদাব ২/২৬)।

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ২০১/৭ (সালমান ৫৬, শাদাব ৪৮, হাসান ৪৪, শরীফুল ২/৩২, শামীম ১/৩১)।

ফল: পাকিস্তান ৩৭ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শাদাব খান।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।