ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে ‘মায়াকান্না’র কড়া জবাব দিলেন হোল্ডিং

প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়াই হচ্ছে বিশ্বকাপছবি : আইসিসি

বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঘিরে শোনা যাচ্ছিল শোকের কান্না। প্রথম দুই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দল না থাকায় এবারের আসরের সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যাওয়ার কথাও বলেছেন অনেকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার মাইকেল হোল্ডিংও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপে না খেলা নিয়ে হতাশায় পুড়ছেন। দুই বছর আগে ধারাভাষ্যকে বিদায় বলে দেওয়া হোল্ডিং হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটা বেদনাদায়ক যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে নেই। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলজুড়ে অনুভূতিটা এমনই।’

তবে শোকে আচ্ছন্ন হওয়ার পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এমন দুরবস্থার জন্য আইসিসির দিকেও আঙুল তুলেছেন হোল্ডিং। দায়ী করেছেন, টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজির উত্থানকেও।

দুই বছর আগে ধারাভাষ্যকে বিদায় বলে দিয়েছেন মাইকেল হোল্ডিং
ছবি : টুইটার

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে হোল্ডিং বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে ঘিরে অনেক মায়াকান্না দেখা গেছে।’ বিভিন্ন সময় আইসিসির নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটকে এ পর্যায়ে নেমে যেতে ভূমিকা রেখেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

পরিবর্তনশীল ক্রিকেট অর্থনীতি থেকে যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, তা সমাধানে আইসিসি কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলেও মনে করছেন হোল্ডিং। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু ওয়েস্ট ইন্ডিজ লম্বা সময় ধরে সফল, তাই আমাদের এ অবস্থায় দেখে তারা খুশি।’
এ সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ঘিরে তৈরি হওয়া হতাশাকে এড়িয়ে ভিন্ন জায়গাতেই যেন আলো ফেলতে চাইলেন হোল্ডিং। বিশেষ করে আইসিসির নতুন অর্থনৈতিক মডেলের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও ধারণা হোল্ডিংয়ের।

এই নীতিতে অর্থনৈতিকভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ক্ষতির শিকার হয়েছে, সেখানে বাকি ছোট দলগুলোর ভবিষ্যৎও লুকিয়ে আছে বলে মনে করেন হোল্ডিং। তাঁর মতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম বড় ধাক্কা খেয়েছে ক্রিকেট বোর্ডগুলোর মধ্যে আইসিসি অর্থনৈতিক মডেল পুনর্বিন্যাস করার পর।

আরও পড়ুন

আইসিসির প্রথম মিডিয়াস্বত্ব (২০০০ সালে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার) চুক্তি হওয়ার আগের বছরগুলোতে ক্রিকেট বোর্ডগুলো নিজেদের মধ্যে ম্যাচ ও সংস্করণ অনুযায়ী সফরকারী দলগুলোকে দেওয়া ফি নিয়ে দর–কষাকষি করত। সে সময় ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় সফরকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশেষ গুরুত্ব পেত। হোল্ডিংয়ের মতে, ‘(ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ছিল মূল্যবান দল। যারা দর্শকদের জন্য, টিভি সম্প্রচার এবং পৃষ্ঠপোষকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি দল ছিল।’

তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিপরীতে একই রকম ফি দিতে পারত না। হোল্ডিং বলেন, ‘এর কারণ তারা টিভি দর্শক, গ্যালারির দর্শক কিংবা পৃষ্ঠপোষক পেত না।’ কিন্তু এরপরও তাদের ক্রিকেটের মানের কারণে দলটিকে নিয়ে চাহিদা থাকত বলে মত হোল্ডিংয়ের।

আরও পড়ুন

২০০০ সালে আইসিসি এই দ্বিপক্ষীয় কাঠামো বাতিল করে এবং ভবিষ্যতের সফরসূচিতে সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য একই ধরনের ফি–এর (ফ্লাট ফি) প্রস্তাব দেয়। এই উদ্যোগের ফলে প্রত্যেক দলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একের অপরের বিপক্ষে খেলার সুযোগ তৈরি হয়। এটা করা হয় মূলত শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত নতুন টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে লড়াই করার সুযোগ করে দিতে।

এই কাঠামো কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো সহায়তা করেনি, তা ব্যাখ্যা করে হোল্ডিং বলেছেন, ‘এই নতুন কাঠামো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সহায়তা না করার কারণ, কম জনসংখ্যা, টিভিস্বত্বের অভাব এবং পৃষ্ঠপোষকের অভাব।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৯৭৯ বিশ্বকাপ জয়ী দল। যে দলে ছিলেন মাইকেল হোল্ডিংও (সর্ব বাঁয়ে বসা অবস্থায়)
ছবি : টুইটার

এরপর দ্বিতীয় ধাক্কা হিসেবে হোল্ডিং বলেছেন বিশ্বজুড়ে টি–টেয়েন্টি ফ্রাঞ্চাইজি ঘিরে তৈরি হওয়া রমরমা বাণিজ্যের কথা। যদিও এজন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের দায় দেননি তিনি। হোল্ডিং বলেছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের কোনো অর্থ ছিল না। অন্য বোর্ডের মতো তারকা খেলোয়াড়দের টাকা দিতে পারছিল না। আমি হলেও তাদের মতোই করতাম।’

আরও পড়ুন

এদিকে ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আলাদা আলাদা দেশ হিসেবে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা কি না হোল্ডিংয়ের কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘এই ধরনের ভাবনা মনের কাছাকাছি আনাও হাস্যকর। এর অর্থ হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট তাৎক্ষণিকভাবে শেষ হয়ে যাবে।’

এভাবে কোনো দ্বীপরাষ্ট্র টেস্ট দল দাঁড় করাতে পারবে না বলে মনে করেন হোল্ডিং। তাই দল ভাঙলে টেস্ট ক্রিকেট ভুলে যেতে বলেছেন এই কিংবদন্তি। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকিয়ে রাখতে হলে এই অঞ্চলের ক্রিকেটকে এক সত্তা হিসেবে টিকে থাকতে হবে বলে মনে করেন হোল্ডিং।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সেই সুদিন আর নেই
ছবি : আইসিসি

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংকটের জন্য আইসিসিকে দায়ী করে হোল্ডিং বলেছেন, ‘আপনারা অনেক কথা শুনবেন। অনেকেই শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের কথা বলছে। কিন্তু তারা (আইসিসি) পরিস্থিতি বদলানোর জন্য কী করছে? শুধু কথা বলে কিছু হয় না।’

আইসিসির রাজস্ব ভাগের পদ্ধতিতে শুধু তথাকথিত বিগ থ্রি (বিসিসিআই, ইসিবি এবং সিএ) লাভবান হচ্ছে বলে মন্তব্য করে হোল্ডিং আরও বলেছেন, ‘ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে এবং গরিব আরও গরিব হচ্ছে, এটা এভাবেই এগোতে থাকবে। কারণ, ধনীরা লোভী আর এমন কেউ নেই, যারা তাদের আটকাতে পারে।’