ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমিনুলের ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আজ রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে মতবিনিময়ে বসেছিলেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে। উদ্দেশ্য ছিল ক্রিকেটারদের নানা সমস্যা, তাঁদের ভাবনার কথা শোনা।
সামনে বসে আছেন ক্রিকেটাররা। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কেউ কেউ জানাচ্ছেন নিজেদের মতামত। তাঁদের কথা শুনছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ও বোর্ড পরিচালকেরা। তাঁদের অনেকেও ক্রিকেটারদের সামনে উপস্থাপন করেছেন নিজেদের পরিকল্পনা। কোচিং স্টাফের সদস্যরাও জানিয়েছেন নিজেদের ভাবনার কথা।
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম আজ রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে মতবিনিময়ে বসেছিলেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে। উদ্দেশ্য ছিল ক্রিকেটারদের নানা সমস্যা, তাঁদের ভাবনার কথা শোনা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’ নামের এই আয়োজনে এশিয়া কাপের প্রাথমিক দলে ডাক পাওয়া ক্রিকেটাররা ছাড়াও ছিলেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম।
অনুষ্ঠানের নামের মতোই, ক্রিকেটাররাও সেখানে খুলে বলেছেন তাঁদের মনের কথা, জানিয়েছেন মাঠের ভেতরে-বাইরে নানা সমস্যার কথা। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস যেমন তাঁদের মাঠের পরিশ্রমের পাশাপাশি আরও অনেক প্রক্রিয়া মেনে চলার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা যদি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও মনোযোগী হই, আমি বিশ্বাস করি আমাদের ত্যাগ আগামী দিনে ফল হিসেবে অনূদিত হবে।’
ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ সামনে এনেছেন স্থানীয় কোচদের পেছনে বিনিয়োগের বিষয়টিকে। নিজেদের জ্ঞান ও যা কিছু আছে, তার পর্যাপ্ত ব্যবহারের কথাও বলেছেন তিনি, ‘যদি আমরা এই শক্তিগুলোকে এক করতে পারি, তাহলে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারব, যেখানে খেলোয়াড়েরা তাদের গড়ে তুলতে পারবে আর সেরা পারফর্ম করবে।’
মতবিনিময় সভায় প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন, স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ, পেস বোলিং কোচ শন টেইট ও পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে খণ্ডকালীন চুক্তিতে আসা পাওয়ার জুলিয়ান উড।
প্রধান কোচ সিমন্স বলেছেন, ‘জাতীয় দল বাংলাদেশের পতাকাবাহক। এখানে যে পরিমাণ সহজাত প্রতিভা আছে, সম্ভাবনা অনেক। খুব কম দলই বাংলাদেশের মতো পরিশ্রম করে। কিন্তু প্রতিভা ও চেষ্টার সঙ্গে একতা ও দিকনির্দেশনাও দরকার। আমাদের লক্ষ্যগুলোকে এক করতে হবে। একে অন্যকে সমর্থন দিয়ে একসঙ্গে বেড়ে উঠতে হবে—এভাবেই দীর্ঘ মেয়াদে সাফল্য অর্জিত হয়।’
‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ারে’ কী কথা হয়েছে, তা পরে এসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুলও, ‘ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কীভাবে আমরা পারফরম্যান্স আরও ভালো করতে পারি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, একেকজন ক্রিকেটার একেকটি বিশাল পাওয়ার হাউস। কীভাবে বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হতে পারবে, সেই বিশ্বাস তাদের দেওয়া হয়েছে এবং সেটা আলোচনা হয়েছে।’
ক্রিকেটারদের সঙ্গে এমন মতবিনিময়ের আয়োজন নিয়মিতই করার সিদ্ধান্ত বিসিবির। এখন থেকে প্রতি তিন মাসে একবার হবে এই সেশন। আজকের বৈঠক নিয়ে আমিনুল বলেছেন, ‘ক্রিকেটাররা মাঠে খেলে। আমরা তাদের কতটা সাহায্য করছি, সেই সাহায্য করার জন্য...এই মুহূর্তে কতটুকু দূরত্ব আছে, সেই দূরত্বটা কবে ও কীভাবে পূরণ করতে পারব, যাতে ক্রিকেটাররা মাঠে নিশ্চিন্তে খেলতে পারে, এসব আলোচনা হয়েছে।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়েও কথা বলেছেন ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বিকেএসপিতে গিয়ে ম্যাচ খেলাটাকে সমস্যা হিসেবে তুলে ধরেছেন অনেকে।
বিসিবি সভাপতির পক্ষ থেকে আগে থেকেই ক্রিকেটারদের হাতে দেওয়া হয়েছিল আটটি প্রশ্ন, যেগুলোতে মূলত অনুশীলন এবং অন্যান্য সুযোগ–সুবিধার ব্যাপারে তাঁদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। ক্রিকেটাররা সেগুলোর উত্তর দিয়েছেন, যার মাধ্যমে বিসিবির বিভিন্ন বিভাগকে লাল, হলুদ, সবুজ শ্রেণিতে মার্কিংও করা হয়েছে। যেটা দিয়ে বোঝা যাবে কোন বিভাগ ক্রিকেটারদের কাজে বেশি সহায়তা করছে, কোন বিভাগের আরও উন্নতি প্রয়োজন।
আমিনুল বলেছেন, ‘পিচের অবস্থা, অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা, মেডিকেল এবং সার্বিকভাবে আমরা তাদের কতটা সহায়তা করতে পারছি, সেসব জানতে চেয়েছি। তারা তাদের কথা মন খুলে লিখেছে, পরামর্শ দিয়েছে সবাই। সেখান থেকে জানতে পেরেছি, আমরা আসলে কোথায় অবস্থান করছি। এখন সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।’