‘সেম ওল্ড অজিস-অলওয়েজ চিটিং’ নাকি ‘সেম ওল্ড অজিস-অলওয়েজ উইনিং’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানেজ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকফাইল ছবি: এএফপি

এবারের অ্যাশেজের উত্তাপ দেখে কারও বডিলাইন সিরিজের কথা মনে পড়তেই পারে।

১৯৩২-৩৩ মৌসুমের সেই অ্যাশেজে লেগ সাইডে ছাতার মতো ফিল্ডিং সাজিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের শরীর তাক করে বোলিং নিয়ে বিতর্কের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল মাঠের বাইরেও। সেই সিরিজে তৃতীয় টেস্টে চতুর্থ দিনের খেলা শেষে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড (এখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) তারবার্তা পাঠিয়েছিল মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবকে (এমসিসি)।

ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা এই সংস্থা তখন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নির্বাচন করত। ১৯৩৩ সালের ১৮ জানুয়ারি পাঠানো তারবার্তায় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে এমসিসিকে বলা হয়েছিল, ‘বডিলাইন বোলিং খেলার আসল লক্ষ্যকে ব্যাহত করছে। শরীর বাঁচিয়ে খেলাই ব্যাটসম্যানদের মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে চোটের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের মধ্যেও তিক্ততার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের মতে, এটা অখেলোয়াড়সুলভ। এটা এখনই বন্ধ না করলে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

আরও পড়ুন

সেই ঘটনার পর মাঝের এই ৯০ বছরে কোনো অ্যাশেজই এতটা বিতর্ক হয়নি, যতটা এবার হচ্ছে। কথাটা নিয়ে কেউ তর্ক করতে পারেন, তবে এটা তো সত্যি যে এবারের অ্যাশেজের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে মাঠের বাইরেও। এমনকি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত জড়িয়ে পড়েছেন বাগ্‌যুদ্ধে। লর্ডস টেস্টে ব্যাটসম্যানদের শরীর তাক করে বাউন্সারের পর বাউন্সার মারা হয়েছে। বিতর্ক হয়েছে মিচেল স্টার্কের ক্যাচ নিয়ে। আর জনি বেয়ারস্টোর আউটের পর বিষয়টি আর সামান্য বিতর্কে সীমাবদ্ধ নেই। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক ও কোচ থেকে শুরু করে এমসিসির সদস্যরাও এ ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়েছেন। ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজার সঙ্গে ঝামেলার জেরে এমসিসির তিন সদস্য নিষিদ্ধও হয়েছেন। ঘটনা এত দূর গড়ানোর পর দুই দেশের রাজনৈতিক শীর্ষ ব্যক্তিরাও আর চুপ করে থাকতে পারেননি।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে কথা বলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানেজও এ ঘটনায় মুখ খুলেছেন। সব মিলিয়ে এবারের অ্যাশেজ যেন ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের সেই বডিলাইন সিরিজকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যেহেতু মুখ খুলেছেন, ওই আউটটি তাই আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক। ৩৭১ রান তাড়া করতে নামা ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তুলে ফেলার পর ওই আউটের ঘটনা। ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার ডাক করে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বেয়ারস্টো। এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মনে করেছিলেন বলটা ‘ডেড’ হয়ে গেছে। বেয়ারস্টোকে ক্রিজ ছেড়ে বের হতে দেখেই ‘আন্ডারআর্ম’ থ্রোয়ে স্টাম্প ভাঙেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারি। তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর শুরু হয় বিতর্ক। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমি কি ওইভাবে (অস্ট্রেলিয়ানদের মতো) ম্যাচ জিততে চাইতাম? আমার উত্তর হচ্ছে “না”।’

আরও পড়ুন

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মুখপাত্র গতকাল সংবাদকর্মীদের বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেন স্টোকসের সঙ্গে একমত, অস্ট্রেলিয়ানদের মতো এই কৌশলে তিনি ম্যাচ জিততে চাইতেন না।’ ঋষি সুনাকের মুখপাত্র এই কথা জানানোর পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুপ থাকবেন কেন! নিজের দলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাঁর করা টুইটটি বেশ সরস।

বেয়ারস্টোর ওই আউটের পর ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা অস্ট্রেলিয়ানদের খোঁচাতে স্লোগান ধরেছিল, ‘সেম ওল্ড অজিস-অলওয়েজ চিটিং।’ বাংলায় অর্থটা দাঁড়ায়, সেই পুরোনো অস্ট্রেলিয়াই–সব সময়ই প্রতারণা করে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানেজ ইংল্যান্ডের সমর্থকদের এ স্লোগানকেই খানিকটা পাল্টে টুইটটি করেন, ‘সেম ওল্ড অজিস-অলওয়েজ উইনিং।’ অর্থাৎ সেই পুরোনো অস্ট্রেলিয়াই-সব সময়ই জেতে। অন্তত এবারের অ্যাশেজের দুই টেস্টের ফল বিবেচনায় নিলে কিন্তু আলবানেজই সঠিক। পাঁচ টেস্টের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

তবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক কিন্তু এখনই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না। তাঁর মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘এই ম্যাচটা বেন স্টোকসের সেরাটা দেখার সুযোগ দিয়েছিল, অবিশ্বাস্য একটা ম্যাচ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাস আছে ইংল্যান্ড দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।’

ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত এটুকু বলা যায়, এবারের অ্যাশেজ যে উত্তাপ ছড়িয়েছে, তাতে এরই মধ্যে সমর্থকদের পয়সা উশুল। বাকি তিন টেস্টে যা হবে, তা ‘বোনাস’ বলে ধরে নিতে পারেন। শুধু লর্ডস টেস্টই যে উত্তাপ ছড়িয়েছে, তার রেশ যে বাকি তিন টেস্টেও থাকবে, তা তো বলা বাহুল্য।