২০২৩ বিশ্বকাপে ১১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে বিসিসিআইয়ের

মুম্বাইয়ে বিসিসিআইয়ের সদর দপ্তরএএফপি

ভারত সরকার যদি কর মওকুফ না করে, তাহলে এক ২০২৩ সালের বিশ্বকাপেই ৫৮ থেকে ১১৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার লোকসান হতে যাচ্ছে ভারত ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই)। এর আগে এই কর–সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভারত থেকে সরিয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল আইসিসি। পরে অবশ্য করোনাভাইরাসের কারণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ওই টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বিসিসিআই।

মূলত ভারতে বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রাপ্ত অর্থ থেকে ওই দেশের সরকারকে কর দিতে হবে আইসিসির। সেটিই মওকুফ করতে সরকারের সঙ্গে দর–কষাকষি করার কথা বিসিসিআইয়ের। শেষ পর্যন্ত সেটি না হলে আইসিসি টাকা কাটবে বিসিসিআইয়ের লভ্যাংশের ভাগ থেকে। এ সম্পর্কে অবহিত করতে রাজ্য সংস্থাগুলোকে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে বিসিসিআই, জানিয়েছে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো।

আরও পড়ুন

এই কর মওকুফ করার বিষয়ে আইসিসির সঙ্গে বিসিসিআইয়ের ঝামেলা বেশ পুরোনোই। ভারতে বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্ট হলেই সামনে আসে সেটি। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সম্প্রচারস্বত্ব থাকা স্টার ইন্ডিয়ার ওপর প্রায় ১০.৯২ কর আরোপ করেছিল ভারত সরকার। সে সময় বিসিসিআইয়ের লভ্যাংশের ভাগ থেকে প্রায় ২৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কেটে রেখেছিল আইসিসি।

সে ব্যাপারে আইসিসির সঙ্গে বিবাদেও জড়ায় বিসিসিআই। সেটির চূড়ান্ত সমাধান এখন পর্যন্ত না হলেও ভারতের ক্রিকেট সংস্থা বলেছিল, ২০২৩ বিশ্বকাপে কর মওকুফ করার ব্যাপারে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তারা ‘আলোচনা শুরু করেছে’। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে হতে যাওয়া এ টুর্নামেন্টের জন্য সরকারের কাছ থেকে কর মওকুফের নিশ্চয়তা পেতে শেষ সময় ছিল গত এপ্রিলে। পরে সেটি ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

আরও পড়ুন

২০১৪ সালে ছেলেদের তিনটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের সুযোগ পায় ভারত—২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (যা পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরিবর্তিত হয়) ও ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ। বিসিসিআইয়ের সঙ্গে আইসিসির সমঝোতারই অংশ ছিল—আইসিসি ও এর বাণিজ্যিক অংশীদারদের কর মওকুফের দায়িত্ব নেবে ভারতের ক্রিকেট সংস্থা।

আগামী বছর ভারতে হবে বিশ্বকাপ
ফাইল ছবি

সে ব্যাপারে বর্তমান অবস্থা জানিয়ে বিসিসিআই বলেছে, এই আর্থিক বছরের শুরুতেই ২০১৬ সালের ইভেন্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিসিসিআই আইসিসিকে পরামর্শ দিয়েছে। ‘সারচার্জ’ বাদ দিলে ২০২৩ ইভেন্টের জন্য খণ্ডকালীন হিসেবে ১০ শতাংশ করের আদেশ পাওয়া যাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এখন ভারতের কর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সম্প্রচারস্বত্বের ওপর ২০ শতাংশ করের আদেশ পেয়েছে আইসিসি।

শেষ পর্যন্ত অমন কিছু হলে আইসিসি যে বিসিসিআইয়ের কাছ থেকেই সেটি কেটে নেবে, সে ব্যাপারেও রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থাগুলোকে অবহিত করেছে বিসিসিআই। সেখানেই বিসিসিআই উল্লেখ করেছে, আগামী বছর হতে যাওয়া বিশ্বকাপের সম্প্রচারস্বত্ব থেকে আইসিসি প্রায় ৫৩৩.২৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করবে। ১০.৯২ শতাংশ কর দিতে হলেও বিসিসিআইয়ের ক্ষতি হবে প্রায় ৫৮.২৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার। তবে ভারত সরকারের যে ২১.৮৪ শতাংশ করের দাবি, তাতে বিসিসিআই হারাবে প্রায় ১১৬.৪৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার।

সে অর্থ আইসিসি কেটে নেবে ভারতের কেন্দ্রীয় লভ্যাংশের ভাগ থেকে। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের চক্রে আইসিসির ২.৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার আয়ে ভারতের ভাগ হওয়ার কথা প্রায় ৪০৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার।

আপাতত ভারত সরকারের ‘শীর্ষ পর্যায়ে’র সঙ্গে আলোচনায় এ ব্যাপারে সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদী বিসিসিআই। সংস্থাটির আশা, ‘সারচার্জ’ বাদে ২০ শতাংশের জায়গায় দেশটির সরকার ১০ শতাংশ কর আরোপ করবে। তাতেও অবশ্য ক্ষতি ঠিকই হবে তাদের।