ওভালে ‘ফাইনালের’ আগেই উত্তাপ

ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরএএফপি

ইংল্যান্ড ২: ১ ভারত। চার টেস্ট শেষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের অবস্থা এখন এমনই। ওভালে আগামীকাল শুরু শেষ টেস্টটা তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিজ নির্ধারণী, অঘোষিত ‘ফাইনাল’। সিরিজের প্রথম চার টেস্টে ২০ দিনই মাঠে খেলা ছিল। হেডিংলি, এজবাস্টন থেকে লর্ডস হয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ড—চার টেস্টেরই পরতে পরতে লুকিয়ে ছিল রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা। সেটা মাঠের খেলা থেকে শুরু করে দুই দলের খেলোয়াড়দের ‘যুদ্ধংদেহী’ মনোভাবেও।

ইংল্যান্ড–ভারত পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে তো লড়াইয়ের ঝাঁজ টের পাওয়া যাচ্ছে মাঠের বাইরেও। ওভাল টেস্টের আগে কোন দল বেশি তেতে আছে—এমন প্রশ্নে কে কী উত্তর দেবেন কে জানে! তেতে তো থাকার কথা দুই দলেরই। ওভালে ড্র করলেই সিরিজ জয়ের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়বে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। আর জিততে আসা সিরিজটা ড্র করতে হলেও ওভালে ভারতকে মাঠ ছাড়তে হবে বিজয়ীর বেশে। এ কারণেই হতে পারে ভারতীয় দলে তাতানো ভাবটা একটু বেশি!

কোচ গম্ভীর ও অধিনায়ক শুবমান গিল
এএফপি

সেটি বোঝা গেল গতকাল ওভালে ভারতীয় দলের প্রথম অনুশীলন সেশনেও। ম্যাচের দুই দিন আগে প্রথম সেশনের অনুশীলনে বাড়তি কিছু করার তাগিদই যেন ছিল তাদের। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর অনুযায়ী, অনুশীলন করতে গিয়ে দলের কোচ গৌতম গম্ভীর খেলোয়াড়দের নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন প্লেয়িং এরিয়ায়। এটা পছন্দ হয়নি ওভালের কিউরেটর লি ফোর্টিসের। তিনি গম্ভীরকে ডেকে কিছু বলেছিলেন। কিন্তু কিউরেটরের কথা পছন্দ হয়নি গম্ভীরের। তিনি হঠাৎ করেই রাগত ভঙ্গিতে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলতে থাকেন। পত্রিকাটি লিখেছে ফর্টিসের দিকে আঙুল উঁচিয়ে গম্ভীরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের কী করতে হবে, সেটা তোমার বলার প্রয়োজন নেই।’

গম্ভীরকে এভাবেই উদ্ধৃত করেছে ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে দুজনের বচসার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে অন্য একটি বিষয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, ওভালে গম্ভীর তাঁর ব্যাটসম্যানদের নেট অনুশীলন খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। সে সময় বারবারই গম্ভীরকে কিছু বলছিলেন সারে কাউন্টির কিউরেটর ফোর্টিস। ধারণা করা হচ্ছে, গম্ভীরকে তিনি কোনো পরামর্শ দিচ্ছিলেন, সেটা ভালোভাবে নেননি ভারতের কোচ।

গম্ভীরের হঠাৎ রেগে যাওয়া মানতে পারেননি ফোর্টিসও। তিনি গম্ভীরের আচরণ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সেই হুমকিতে দমে না গিয়ে গম্ভীর পাল্টা উত্তর দেন, ‘এসব বন্ধ করো। আমাদের বলতে হবে না যে আমরা কী করব। ভারতের কোনো খেলোয়াড়কে তোমার এটা বলার কোনো অধিকার নেই যে তারা কী করবে। তুমি তো শুধু একজন মাঠকর্মী। এর বাইরে আর কিছু নও। যাও, তুমি যার কাছে খুশি গিয়ে অভিযোগ করতে পারো। তুমি বলতে এসো না যে আমাদের কী করতে হবে।’

আরও পড়ুন

হেডিংলিতে ২০ জুন প্রথম টেস্ট শুরুর আগেই অবশ্য দুই দেশের সাবেকদের কথার লড়াই শুরু হয়েছিল। সিরিজ শুরু হতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে মাঠে। খেলায় যেমন রোমাঞ্চ ছিল, দুই দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে স্লেজিং আর অতি উদ্‌যাপন নিয়ে ছিল টান টান উত্তজেনা। লর্ডসে তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন বিকেলে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ওপেনারের সময়ক্ষেপণ নিয়ে খেপেছিলেন ভারতের বোলাররা। মোহাম্মদ সিরাজ তো ওপেনার বেন ডাকেটকে হুমকিই দিয়ে রেখেছিলেন, পরের দিন সকালে তাঁকে দেখে নেবেন। পরের দিন ডাকেটকে আউট করে অতি উদ্‌যাপন করে জরিমানা গুনতে হয়েছে ভারতের বোলারকে।

ওল্ড ট্রাফোর্ডে চতুর্থ টেস্টের শেষ দিন সন্ধ্যায় উত্তাপ ছড়ায় হ্যান্ডশেক–বিতর্ক। ড্র মেনে নিয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস হ্যান্ডশেক করতে যান ভারতের দুই ব্যাটসম্যান রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে। কিন্তু দুজনই সেঞ্চুরির খুব কাছে থাকায় সেই সময়ে মাঠ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। পরে দুজনেরই সেঞ্চুরি হয়ে গেলে হ্যান্ডশেক করে মাঠ ছাড়েন তাঁরা। এ রকম আরও অনেক উত্তেজনা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল সিরিজের আগের চারটি ম্যাচে। এখন তো ‘ফাইনাল’, এর আগে উত্তেজনা না ছড়িয়ে কি পারে!

আরও পড়ুন